স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এটাই শেষ বছর। এই বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে। আর সমালোচনার মুখে ব্যাংক ঋণে রাশ টানলেও নির্বাচনের বছরে এসে তা আবার বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর)তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার ৬২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। মে মাস শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৩১ কোটি ১১ লাখ টাকায়। ব্যাংকের অলস অর্থ ঋণ নিয়ে কাজে লাগানোয় অর্থনীতিবিদরা সমস্যা না দেখলেও তাদের শঙ্কা রাজনৈতিক বিবেচনায় এই অর্থ খরচ নিয়ে। গত অর্থবছর (২০১১-১২) পুরোটা সময় জুড়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বেশ সমালোচনা সইতে হয়েছিলো সরকারকে।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় সরকার ব্যাংকের দ্বারস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত। যদিও সামগ্রিক হিসাবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ এখনো আগের বছরের চেয়ে কম। তবে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে অনেক। জায়েদ বখত বলেন, ভোটারদের মন কাড়তে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজগুলো শেষ করতে চাইবে সরকার। সেক্ষত্রে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণও বেড়ে যেতে পারে। সরকারের মেয়াদের শেষ সময় খরচ বেড়ে যাওয়াটা সবসময়ের চিত্র। তবে সে খরচ যাতে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক না হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৪৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিলো ৪৫ শতাংশ। অতীতেও দেখা গেছে, যে কোনো সরকারের শেষ বছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এবার ঋণ যত, শোধ তার চেয়ে বেশি
অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতাদের পাশপাশি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও সরকারের তীব্র সমালোচনার মুখে পরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমে এসেছিলো। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর টাকা আছে। সরকার আর কত নেবে। এরপরও প্রচুর টাকা থাকবে। কোনো সমস্যা হবে না। শেষ বছরে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ায় সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের অনেকের মতে, নির্বাচনে দ্রব্যমূল্যের বিষয়টিকে বিরোধী দল যাতে ইস্যু করতে না পারে- সেজন্যই সরকার মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। গত বছরের ৮ মে শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিলো ৮৭ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে। তথ্য অনুযায়ী, ৮ মে শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের অর্থ ও ব্যাংকিং উপ-বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের ৮ মে পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ১০ মাস আট দিনে সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ১৮ হাজার ৭৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেয়া ঋণের ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা শোধ করেছে। নেট হিসাবে ১০ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এই সময়ে এর পরিমাণ ছিলো ১৫ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে অলস টাকা নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দাবি করা হয়, এর পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকার মতো। আর ব্যাংকগুলোর দাবি, সবমিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ না হওয়া অর্থের পরিমাণ (অলস অর্থ) এক লাখ কোটি টাকার ওপরে।
Leave a Reply