প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ষড়যন্ত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কানাডার প্রভাবশালী সম্প্রচার সংস্থা সিবিসি টেলিভিশন গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
প্রসঙ্গত: প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য এসএনসি লাভালিন বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের একটি ষড়যন্ত্র করেছিলো বলে মূল অভিযোগ। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর কানাডার এই কোম্পানিটি বিশ্ব ব্যাংকে এখন কালো তালিকাভুক্ত। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও প্রকৌশলী মো. ইসমাইল বিচারের মুখোমুখি। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে টানাপোড়েনের পর প্রায় ৩০০ কোটি ডলারে দেশের বহু প্রতীক্ষিত এই সেতুর নির্মাণ আটকে যায়।
‘দ্য ন্যাশনাল’ অনুষ্ঠানে ‘এসএনসি অ্যান্ড এ ব্রিজ ফর বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ওপর আলোকপাত করা হয়। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যর শুরুতে বলেন, পদ্মা সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি হলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং যোগাযোগব্যবস্থা সুগম হবে। কানাডার সরকারি টেলিভিশন সিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষা্ৎকারে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দেন। টেরেন্স ম্যাকেনার নেয়া ওই সাক্ষাৎকার সম্বলিত ১৫ মিনিটের অনুষ্ঠানটি গত ১৬ মে সম্প্রচার হয়।
কথিত এই ঘুষ লেনদেনে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে টেরেন্স ম্যাকেনা প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, এটা পুরোপুরি মিথ্যা। তারা এটা প্রমাণ করতে পারেনি। ৭৫ এ বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানো শেখ হাসিনা এক বছর আগে সংসদে বলেছিলেন, তিনি ও তার সন্তান এবং বোন রেহানা ও তার সন্তানদের নিয়েই তার পরিবার। এর বাইরে তার পরিবারের আর কোনো সদস্য নেই। এদিকে, বিরোধী দল অভিযোগ করে আসছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতিতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ও দলীয় লোকজন জড়িত। দুর্নীতির দায়ভার নিয়ে ইতিমধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন।
বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের মূল কেন্দ্র ছিলো তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, যাকে পরে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। এক প্রশ্নে টেরেন্স ম্যাকেনা আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল হোসেনকে দলের মূল তহবিল সংগ্রহকারী হিসেবে উল্লেখ করলে তা-ও নাকচ করেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার দলে তার এমন কোনো দায়িত্ব ছিলো না। কেউ যদি তা বলে, তা পুরোপুরি ভুল।
স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: শেখ হাসিনা সিবিসিকে বলেন, তার সরকার অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব দেয়। আমি কানাডা এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছে তথ্য প্রমাণ চেয়েছি। দুর্নীতি তদন্তে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তিনি একইসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, কোনো দুর্নীতি (প্রকল্পে) হয়নি। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, দুর্নীতির একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিলো।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারের সঙ্গে কথা বলেছে সিবিসি। তিনি কথিত দুর্নীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নাকচ করেছেন। সিবিসি এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হকের সঙ্গেও কথা বলেছে। তিনি বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে দুদক মামলাও করেছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের অন্য প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে চলছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিংবা আমার মন্ত্রীরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। আমরা টাকা কামাতে ক্ষমতায় আসিনি। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণের ভাগ্য বদলাতে, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, অনকে টানাপোড়েনের পর বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি।
Leave a Reply