সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৪

বিরোধী দলকে নিয়ে নয়া কৌশল

বিরোধী দলকে নিয়ে নয়া কৌশল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিরোধী দল নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল নিয়েছে সরকার। সক্রিয় নেতাদের সংগঠিত হতে না দেয়া ও বিরোধী দলে সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি করা হচ্ছে। কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বারবার, কেউ থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাউকে নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। কারও বিরুদ্ধে দায়ের হচ্ছে ডজন ডজন মামলা, কেউ থাকছেন আইনি জটিলতার বাইরে। সরকারের সামপ্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে এমনই আলোচনা বিরোধী মহলে। খোদ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাই ঘরোয়া আলাপে এমন মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, আন্দোলনের রাশ টানতেই সরকার এমন কৌশল নিচ্ছে। কোন ইস্যুতে সুর নরম করে বিরোধী দলকে উত্তপ্ত করছে, আবার হঠাৎ হার্ডলাইনে গিয়ে এলোমেলো করে দিচ্ছে বিরোধী দলের কৌশল। সরকার যখন নিজেদের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী জোট তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকারও বিরোধী জোটকে নিপীড়নে ব্যতিব্যস্ত রেখে কোণঠাসা করতেই খেলছে এমন কৌশল-পাল্টা কৌশলে। বিএনপি নেতারা জানান, দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে সবচেয়ে সক্রিয় অংশ হচ্ছে যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়। তারা একই সঙ্গে নীতিনির্ধারণ ও তৃণমূল নেতৃত্বে নির্দেশনা দিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখলেও তা বাস্তবায়নে মূল দায়িত্ব পালন করেন যুগ্ম মহাসচিবরাই। বিগত কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবরা ছিলেন বিএনপির প্রাণ। সে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহ আল নোমান, আশরাফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্রত্যেকেই ছিলেন দুর্দান্ত সাংগঠনিক, দক্ষ ও সক্রিয়। যদিও এবারের কমিটিতে কিছুটা ভিন্নচিত্র। তবে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমানউল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, রিজভী আহমেদ ও মিজানুর রহমান মিনু প্রত্যেকেরই রয়েছে ছাত্রদল, যুবদল ও কৃষকদলের রাজনীতিতে ব্যাপক অভিজ্ঞতা। তাই এ পর্যায়ের নেতারাই হচ্ছেন সরকারের কৌশলের শিকার। গত ১১ই মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করা হয় আমান, শাহজাহান ও রিজভীকে। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে কারাগারে পাঠানো হয় মির্জা আলমগীর ও বরকতউল্লাহ বুলুকে। তখন দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পাওয়া সালাউদ্দিন আহমেদও গ্রেপ্তার হন। যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে মুক্ত আছেন কেবল সাংগঠনিক রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ও রাজশাহীতে অবস্থানকারী মিজানুর রহমান মিনু। এছাড়া, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই কারাভোগ করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মতো কয়েকজন নেতা। নিখোঁজ হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও ডিসিসি কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো কয়েকজন। বিএনপির অন্তত ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা দফায় দফায় কারাভোগ করেছেন গত সাড়ে চার বছরে। নেতারা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের জামিন ও মুক্তি নিয়ে সরকারের আচরণে দিনে দিনে বাড়ছে সন্দেহ-সংশয়। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযানের দিন গ্রেপ্তার করলেও পরদিন ছেড়ে দেয়া হয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে। তাদের এ মুক্তি নিয়ে প্রথম সন্দেহের সৃষ্টি হয় দলে। সে সময় মুক্তি পান আরও কিছু নেতাকর্মী। কিন্তু রিমান্ডে নেয়া হয় যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহানসহ সাবেক কয়েকজন এমপিকে। পরে নিম্ন আদালত কারাগারে পাঠায় মির্জা আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলের ১০ শীর্ষস্থানীয় নেতাকে। কিন্তু তাদের জামিন প্রশ্নে ফের সন্দেহের সৃষ্টি হয় বিএনপিতে। সংসদ অধিবেশনের যুক্তি দেখিয়ে বিএনপির তিন এমপিকে মুক্তি দেয়া হলেও জামিন পাননি খোদ বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। পরে ফারুককে মুক্তি দেয়া হলেও আগে মুক্ত বরকতউল্লাহ বুলুকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়। আবার স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে মুক্তি দেয়া হলেও তখন জামিন পাননি মির্জা আলমগীর। পরে অসুস্থতার কারণে মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার জন্য তিনি চলে গেছেন সিঙ্গাপুর। এদিকে মুক্তির পর কারাগেট থেকেই ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। যুবদলের এক নেতা বলেন, আলালকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল সম্ভবত অন্য মামলায় রিমান্ডে নেয়ার জন্যই। কিন্তু ১১ই মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, তিন যুগ্ম মহাসচিব আমান, শাহজাহান ও রিজভী এখনও মুক্তি পাননি। হয় বিভক্ত রায়, নয় শুনানি মুলতবির খপ্পরে আটকে আছে তাদের জামিন। বিএনপি নেতারা জানান, ছাত্রদলে রয়েছে আমানের ব্যাপক প্রভাব, রিজভী আহমেদ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। আর ইলিয়াস আলীর সন্ধান আন্দোলনে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতারা যখন কারাবন্দি তখন তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপির একটি মহাসমাবেশ সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। সরকার এসব জেনে-বুঝেই কৌশল আঁটছে। অর্থাৎ বিএনপির সক্রিয় নেতাদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানের সময় গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মধ্যে গতকাল কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ৫৩ জন নেতাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেল গেটেই। এদিকে সামপ্রতিক সভা-সমাবেশে বিএনপিতে সবচেয়ে মুখর ছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। ১১ই মার্চ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানের সময় গ্রেপ্তার হয়েও পরদিন মুক্তি পান তিনি। তার মুক্তি নিয়ে নানা আলোচনার ডালপালা ছড়ায় দলে। পরে তিনি হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন সুরে কথা বলেন। কিন্তু ৫ই মে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আহ্বান সত্ত্বেও কার্যকর ভূমিকা রাখেনি তার নেতৃত্বাধীন মহানগর বিএনপি। এ নিয়ে যখন দলে সমালোচনা চলছে তখন তার বাসায় হানা দেয় পুলিশ। বরাবরের মতো এবারও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান তিনি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহ। তাহলে কি বিএনপির নেতাদের একাংশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে যাচ্ছেন। সন্দেহ অবশ্যই নতুন নয়, এ অভিযোগ পুরানো। এমনকি ‘তলে তলে সংলাপ’ নিয়ে খোদ বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াও কিছুদিন আগে এক সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, তলে তলে সংলাপ হয় না ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ গ্রেপ্তার না করলে তো যেচে কেউ বলতে পারেন না আমাকে গ্রেপ্তার করুন। আসলে বিরোধী দলে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য সরকার এ কৌশল করছে। এদিকে সংলাপ নিয়ে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। সংলাপের কথা বলে সংসদে ফেরার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়াচ্ছেন বিরোধী দলের ওপর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হার্ডলাইনে গিয়ে গোলকধাঁধায় ফেলছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে সংলাপের জন্য সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখা জরুরি। আবার চলতি অধিবেশনে যোগ না দিলে সদস্যপদ হারাবেন বিরোধী এমপিরা। সরকার এটা জেনে বুঝেই হঠাৎ বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকদেখানো সংলাপের আহ্বান জানিয়ে সরকার আসলে জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করছে।  এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে দুই ইস্যুতে গতরাতে বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠক করেছেন। আগামী বাজেট অধিবেশনে অংশগ্রহণ ও নতুন কর্মসূচি প্রণয়নই ছিল এই দুই ইস্যু। দলীয় সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের শেষদিকে ফের হরতাল কর্মসূচি আসতে পারে ১৮ দলের তরফে।

 

সৌজন্য: মানবজমিন




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024