শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: হার্ডলাইনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, নাছোড়বান্দা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট। একদল ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে মরিয়া, আরেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া। এ অস্থায় দেশের বারোটা বাজছে।
বিএনপির চলমান আন্দোলন যেকোনোভাবে ঠেকাতে মরিয়া ক্ষমতাসীন সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সেভাবেই দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ধরপাকড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবরুদ্ধ আছেন জোট নেত্রী বেগম জিয়াও। দেশে ফিরতে পারছেন না তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
এ অবস্থায় আন্দোলনের চূড়ান্ত গন্তব্য কি এবং এর শেষ কোথায় এটা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া আর কেউ জানেন না। সব পরিকল্পনা আগেভাগে বলে দিলে সব ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এটা প্রকাশ করছেন না তারা। গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছেন। ২০১৩ সালের দিকে আর ফিরে যেতে চান না। গোপনীয়তার সঙ্গেই এগোতে চান।
সূত্র জানায়, তাদের আশঙ্কা, দলের ভেতরেও কিছু কিছু নেতা আছেন যারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তথ্য ফাঁস করে দিতে পারেন। পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। তারা সব আগে জেনে গেলে গোপনীয়তা ফাঁস করে দিয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবেন।
বিএনপির আন্দোলন সফল করার জন্য সেই সব নেতা কাজ করছেন যারা গ্রেফতারের আতঙ্কে আছেন। যেসব নেতা সামনে থেকে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হতে পারে। সব তথ্য বের করে জোটের আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে পারে সরকার।
এই আশঙ্কা থেকে এবার পরিকল্পনার কথা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মুবীন চৌধুরীকেও বলেননি। অন্য নেতারাও জানেন না। সরকার মনে করেছিল, ওইসব নেতাদের গ্রেফতার করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু না জানার কারণে জানতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তাদের কাছ থেকে সরকার বিশেষ কোন তথ্য পায়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের আন্দোলনের কৌশল কোনো নেতাকে বলছেন না। আগে ভাগে কিছু বলা হলে ২০১৩ সালের মতো হতে পারে। লক্ষ্য সফল নাও হতে পারে। ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে সব পরিকল্পনা।
এ কারণে চলমান আন্দোলনে কখন কি করতে হবে সেটা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আলোচনা করেই ঠিক করছেন। তাদের মধ্যে আলোচনা ও কথা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিএনপির নেতাকর্মীদের চেয়ারপারসন ও তারেক রহমান যাতে নির্দেশ দিতে না পারেন, কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারেন সেই জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছে সরকার।
এ জন্য ভাইবার ও টেঙ্গো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের আরো তিনটি মাধ্যম রয়েছে যা দিয়ে তারেক রহমান লন্ডন থেকে তার মা ও মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়া জেলা, উপজেলার নেতাদের নির্দেশ দেয়া ছাড়াও নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন।
সূত্র মতে, বিএনপি এবার কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। আন্দোলন সফল করা ও দাবি আদায়ের সুযোগ নেবে দলটি। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে বিএনপির জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
তাদের মতে, সরকারের পাতা কোনো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। দিলে আন্দোলন ব্যর্থ হবে। সরকারি দলের এক নেতা সংলাপের পূর্বাভাস দিয়েছেন। এটাকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
তারা মনে করছেন, সংলাপ করতে হলে অবশ্যই সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিলে হতে পারে। তা না হলে সমস্যা হতে পারে। তারা আলোচনা করতে চান আন্দোলন বহাল রেখেই। কর্মসূচি স্থগিতও করতে রাজি নন। বিএনপির দাবি মেনে নিলেই সংকট নিরসন হবে।
তাদের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন যে সাত দফা দাবি দিয়েছেন সেটা নিয়েই আলোচনা করতে হবে। এর ভিত্তিতেই সমঝোতা করতে হবে। সরকার সংলাপ ও সমঝোতা না চাইলে রাজপথেই এর সমাধান হবে বলে মনে করেন তারা। সরকারি দলের কোনো নেতা সংলাপের আভাস দিলেও আন্দোলন-কর্মসূচি রেখে সেটাতে কোনো ধরনের কান দিতে রাজি নয়।
সমঝোতা ও সরকার আগাম নির্বাচন করতে রাজি হলে আন্দোলন স্থগিত করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বলে জানান তারা। তবে আগাম কর্মসূচি ও পরিকল্পনার কথা সবাইকে বলছেন না দুজনের কেউ। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।