আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী টিলাগড় এলাকায়ও। জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ গ্রুপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষ কমপক্ষে ৩০ রাউন্ড গুলিবিনিময় করে।
রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হলে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভবনের নিচে অবস্থান নেন। গতকাল দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। সংঘর্ষকালে সাংবাদিক সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এসময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল আহাদ ও ক্যামেরাপার্সন নওশাদ। তারা তাদের ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয়।
সিলেটে ছাত্রলীগের হিরণ ও পঙ্কজ গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে এমসি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই বন্দুকযুদ্ধ হয়। এমসি কলেজ ও টিলাগড়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের পঙ্কজ ও হিরণ গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। কয়েক দিন আগে পঙ্কজ গ্রুপকে হটিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় হিরণ গ্রুপ। ওই সময়ও দুই গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময় ঘটে। ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় টিলাগড় এলাকার দোকানপাট। বেলা ১টার দিকে পঙ্কজ গ্রুপের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে পিছু হটলে সংঘর্ষ থামে। সংঘর্ষের সময় পঙ্কজ গ্রুপের কর্মী শামীম মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে পঙ্কজ পুরকায়স্থ গ্রুপের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে যায়। তারা কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে থাকে। এ সময় তারা হিরণ গ্রুপের কয়েকজন কর্মীকে ধাওয়া করে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর টিলাগড়ে থাকা হিরণ গ্রুপের কাছে এসে পৌঁছলে টিলাগড় পয়েন্টে জড়ো হতে থাকে তাদের কর্মীরা। প্রায় ৫০-৬০ জন কর্মী টিলাগড় পয়েন্ট থেকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে আসতে থাকে। এ খবরে পঙ্কজ গ্রুপের কর্মীরা এসে অবস্থান নেয় এমসি ফটকে। এ সময় হিরণ গ্রুপের কর্মীরা ফটকের কাছাকাছি গেলে সংঘর্ষ বাধে। উভয়পক্ষ প্রকাশ্য বন্দুক উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। হিরণ গ্রুপের মুহুর্মুহু গুলির কারণে এক পর্যায়ে পঙ্কজ গ্রুপ ক্যাম্পাস থেকে পিছনের দিকে চলে যায়। সংঘর্ষকালে ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সময় টিভির সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা ও টিভি ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনায় সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকরা এমসি কলেজের সামনে সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বনে পড়েন। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভের মুখে শাহপরাণ থানার ডিজি এজাজ আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওসিকে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। উপস্থিত সাংবাদিকদরে তিনি বলেন, আপনার জানেন এখন সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতী চলছে। আমি শাহপরাণ থানার পক্ষ থেকে আপনাদের আশ্বস্থ করছি নির্বাচনের পরেই আপনাদের দাবীর মুখে এর বিহিত সমাধান হবে।
Leave a Reply