জালাল আহমদ: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হাওর আর জলাশয়গুলো থেকে ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক সময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও টিকে আছে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ।
দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম নদ-নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ভরাট করে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি নির্মাণ, চাষযোগ্য জমি তৈরি করে মাছের আশ্রমের পাশ্ববর্তী জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ডিমওয়ালা মাছ নিধন, বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন, কারেন্ট জাল ও নেট জালের ব্যবহার ইত্যাদি। এছাড়া জেলেরা জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ, মাছের রেণু পোনা নির্বিচারে ধরার কারণে মাছ বংশবৃদ্ধি করতে পারছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির এই সামান্য সংখ্যক মাছ বড়লেখার হাকালুকি হাওরসহ ছোট-বড় প্রায় ২৩৮টির বেশী নদী ও পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে টিকে আছে। এসব মৎস্যের উৎসস্থল থেকে অতীতে বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করা সম্ভব হলেও বর্তমানে নানা কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এক সময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছ থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া ১৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরো ১৪-১৫ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছের মধ্যে রয়েছে মলা, কয়েক প্রজাতির দাঁরকিনা, নাপিত কৈ, গুতুম, বাঘা গুতুম, বালিগড়া, চাপিলা, গজার, পাবদা ইত্যাদি। হুমকির মুখে রয়েছে বাঘা, রিটা, নান্দিনা, আইড়, মহাসুল ইত্যাদি। বর্তমানে বিপন্ন হওয়ার পথে এসব মাছ এখন আর উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে তেমন একটা দেখা যায় না। হাতেগোনা কয়েক প্রজাতির মাছ দেখা গেলেও মূলত বিদেশি প্রজাতির মাছ এখন হাট-বাজারগুলো দখল করে রেখেছে।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মৎস্য খামারের মাছগুলো বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। হাওরের মাছ আর চোখে পড়ে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর এলাকার জেলেরা জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ, মাছের রেণু পোনা নির্বিচারে ধরছেন। বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার, ডিমওয়ালা মাছ নিধন, কীটনাশক প্রয়োগ, কারেন্ট জাল ও নেট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে হাওর এলাকার মৎস্যজীবিরা।
বড়লেখার হাট-বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন খামারের মাছে বাজার ভরপুর। হাওরের কিছু বড় প্রজাতির মাছ মাঝে-মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাজারে মাছগুলোর দাম স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মাছ বিক্রেতারা জানান, হাওরের মাছগুলোর দাম বিদেশি ও খামারের মাছের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া হাওরের মাছ তো এখন আর খুব একটা পাওয়াই যায় না।
হাকালুকি হাওর এলাকায় দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সচেতনতা ও মৎস্য সম্পদ আইন মেনে যদি মাছ ধরা হয় তাহলে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।