শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯

খালেদার কার্যালয়ে ফের কড়াকড়ি

খালেদার কার্যালয়ে ফের কড়াকড়ি

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে। বুধবার রাত থেকে তার কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর নেতৃত্বের ৯ সদস্যের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তাদের ভেতরে যেতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনির পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদেরও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে আটক করে গুলশান থানায় নেয়ার ঘণ্টাখানেক পর ছেড়ে দেয়। এর আগে দুপুরে সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন সাংবাদিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলেও অনুমতি পাননি পুলিশের। এদিকে দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিতে দেয় পুলিশ।

তবে কার্যালয়ে তার সঙ্গে অবস্থানরত নেতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খাবার নিতে দেয়া হয়নি। বুধবার রাত ৮টায় কার্যালয়ের গেট থেকে খাবার ও পানি বহনকারী ভ্যানটি ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত অবস্থায় সময় পার করছেন। কার্যালয়ে রক্ষিত যৎসামান্য শুকনো খাবার এবং পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় চরম খাদ্য ও পানীয় সঙ্কটে পড়েছেন তারা। এদিকে খালেদা জিয়া ও তার কার্যালয়ে অবস্থানরত সবাই অভুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটি। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ক্যাবলসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করার পর এখন খাদ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনা নিষ্ঠুর কায়দায় খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

গতকাল দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বুধবার রাত থেকে খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর লোকেরা। খালেদা জিয়া এবং কার্যালয়ে অবস্থানরত সকলেই এখনও অভুক্ত অবস্থায় আছেন। তিনি বলেন, জলকামান, বালির ট্রাক, মরিচের স্প্রেসহ সকল ঘৃণ্য কায়দায় নির্যাতন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে দেশনেত্রীকে একচুলও সরাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অবশেষে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর ও হীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আওয়ামী সরকার সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করছে।

ওদিকে ৩রা জানুয়ারির পর থেকে প্রথমে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যারিকেডের কারণে এবং পরে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রথম থেকেই তার সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন নেতা ও অন্তত ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিদিন বাইরে থেকে কার্যালয়ে তাদের খাবার নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার জন্য তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি ছাড়াও তার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রীরা মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে যান।

এদিকে প্রতিদিনের মতো বুধবার রাত ৮টার দিকে কার্যালয়ে অবস্থানকারী নেতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি ভ্যানে করে খাবার ও পানি নেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ ভ্যানটি ফিরিয়ে দেয়। এমনকি পানির বোতলগুলোও কার্যালয়ে নিতে দেয়া হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বলেন, রাত ৮টায় খাবার ভ্যান ফিরিয়ে দেয়ার পর ১০টার দিকে কার্যালয়ের পকেট দিয়ে কিছু হালকা খাবার ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সেগুলোও আটকে দেয়। এরপর থেকে কার্যালয়ে কোন খাবার আসেনি। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কার্যালয়ে অবস্থানরতদের জন্য নাস্তা নেয়া হলেও পুলিশ সেগুলো ফিরিয়ে দেয়। একইভাবে দুপুরের খাবারও নিতে দেয়া হয়নি। পুলিশের তরফে অনুমতি না মেলায় দুপুরে খাবার নেয়া হয়নি।

কার্যালয়ে অবস্থানকারী একজন কর্মকর্তা জানান, বুধবার রাত ও গতকাল সকালে ভেতরে রক্ষিত কিছু শুকনো খাবার ও মুড়ি-বিস্কুট ভাগাভাগি করে খেয়েছি। এরপর থেকে অভুক্ত অবস্থায় আছি। কাল ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজের কাছে থাকা শুকনো খাবার, মুড়ি, খেজুর আমাদের দিয়ে গেছেন। সামান্য সেই খাবারও শেষ। যদিও এ বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়। তবে গতকাল দুপুরে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরও প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।

এদিকে পুলিশ বাধা দেয়ার কারণে বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জন্যও তার ভাইয়ের পরিবার থেকে খাবার নেয়া হয়নি। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর টিফিন ক্যারিয়ারে করে বাসা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিয়ে কার্যালয়ে যান তার বড় বোন সেলিনা ইসলাম। ওদিকে গতরাত ৮টায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যান। তারা কার্যালয়ের সামনে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে বারবার পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন।

তবে শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ায় ফিরে যান তারা। এর আগে গত ৩০শে জানুয়ারি কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, টেলিফোন, কেবল টিভি, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় সরকার। ১৯ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও অন্যগুলো এখনও বিচ্ছিন্ন। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের আশপাশে কয়েকটি বিদেশী দূতাবাসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিকালে সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করা হয়।

এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গতকাল সন্ধ্যার পর গুলশান কার্যালয়ে যায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনির পরিবার। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জনির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মনিরা পারভীন মনিষা, বাবা এয়াকুব আলী, মা মরিয়ম বেগম নিলু, বোন ফাতেমাতুজ্জোহরা ও শাশুড়ি সুমী হক গুলশান কার্যালয়ের সামনে যান। কিন্তু এক ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেও কার্যালয়ের ভেতরে যেতে পুলিশের অনুমতি পাননি তারা। এ সময় জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অনুনয়-বিনয় করে পুলিশের কাছে কার্যালয়ের ভেতরে যাবার অনুমতি চান।

তিনি বলেন, মা (খালেদা জিয়া) আমাকে ডেকেছেন। আমি তার সঙ্গে দেখা করে চলে যাব। আমরা কোন রাজনৈতিক কারণে বা কথা বলতে আসিনি। কিছুদিন পর আমার সন্তান হবে আমি দোয়া নিতে এসেছি। এ সময় পুলিশ তাদের ফিরে যেতে বললে জনির বাবা এয়াকুব আলী বলেন, দেখা না করে আমরা যাব না। তখন নিহত জনির পুরো পরিবারকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে সেটিকে কর্ডন করে গুলশান থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘণ্টাখানেক পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এদিকে রাত ৮টার দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সেলিনা জাহান নিশিতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেছে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠন। এ সময় তারা হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য খালেদা জিয়াকে হুঁশিয়ারিও দেন সংগঠনের নেতারা।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024