নিউজ ডেস্ক: বৃটিশ কারী এওয়ার্ডের ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই বলেছেন,বৃটিশ ভিসা অফিস ঢাকা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরের বিষয়টি আমার জন্য খুবই দু:খজনক এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশের আর বৃটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য অবমনাকর। তিনি মঙ্গলবার ইষ্টলন্ডনে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিং-এ এ কথা বলেন।
বৃটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী এনাম আলী বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে এ ব্যাপারে আমার অবস্থান থেকে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছি। আর আমি আশা করি সকলে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় হবে। উল্লেখ্য বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেবিড ক্যামেরুন দু’বার এনাম আলীর অনুষ্ঠানে এসেছেন। এশিয়ান কমিউনিটিতে এটি এক দৃষ্টান্ত। ব্রিফিং-এ স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিন এডিটর এনাম আলীর আহবানে সাড়ে দিয়ে কমিউনিটি নেতারাও যোগ দেন এবং ক্যাম্পেইনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তৃতা করেন বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার (বিবিসিসি)-এর প্রেসিডেন্ট মাহতাব চৌধুরী সোসাইটি অব বাংলাদেশী সলিসিটার্স এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সলিসিটার আবুল কালামসহ অন্যান্যরা।
এনাম আলী বলেন, বাংলাদেশে বছরে ২১ হাজারের বেশী বৃটিশ ভিসা ইস্যু হয় এবং সমপরিমান মানুষ নানা কারনে প্রতি বছর বৃটেন আসছেন। বছরের পর বছর এটা চলে আসছে এবং এক পর্যায়ে ঢাকার পাশাপাশি সিলেটেও ভিসা সার্ভিস চালু করা হয়। কিন্তু গত বছর থেকে বাংলাদেশে আর বৃটিস ভিসার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। আবেদন করতে হচ্ছে ভারতের দিল্লিতে। এ কারনে যথার্থ কাগজপত্র থাকার পরও ভিসা রিজেক্ট-এর পরিমান বেড়েছে এবং ভিসা বিলম্বের জন্য ভ‚ক্তভোগির সংখ্যাও বেড়েছে বলে আমরা মনে করি।
তবে ঢাকাস্থ বটিশ হাই কমিশন বিষয়টি মানতে নারাজ, তারা বলতে চাইছে ভিসা সংক্রান্ত যোগযোগের সময়সীমা এখনো কার্যকর রয়েছে। অথচ দিল্লি ভিসা সংক্রান্ত ইমেইলেরই জবাব দিচ্ছে না। শুধু ওল্টো রিপ্লাই নির্ভর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের ভিসা অফিসটি ফিরিয়ে আনতেই হবে। আমি এ ব্যাপারে কিছু তথ্য নেয়ার জন্য ঢাকা ও দিল্লিতে ইউকে হাইকমিশন এবং ভিসা অফিসে যোগযোগ করেছি। ভিসা অফিস স্থানান্তরের কারনে যে সমস্যা হচ্ছে তা ঢাকা অফিস সহজে মানছে না। আর দিল্লী ইমেইলের জবাবও দিচ্ছেনা। কিন্তু এ কারনে ভিসা পেতে বিলম্ব হওয়া এবং ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে-এমন তথ্য পাচ্ছি। যেমন আমাদের বৃটিশ কারী এওয়ার্ডের কিছু অতিথি ভিসা পেয়েছেন অনুষ্ঠানের পর। ফলে সেই ভিসা কোনো কাজে লাগেনি।
সম্প্রতি ওয়ালড ট্রেভেল মার্টে যোগ দিতে লন্ডন আসার জন্য ভিসা আবেদন করে কয়েকজন ব্যবসায়ী একবারে শেষ মূহুর্তে ভিসা পান, যার ফলে তাদেরকে অনুষ্ঠানের দিনেই কোনো মতে এসে পৌছতে হয়। এনাম আলী এমবিই বলেন, এভাবে যথার্থ ব্যক্তিত্ব হওয়ার পরও ভিসা দেয়া হচ্ছেনা। এমনকি অনেকে এদেশে এক বা একাধিক বার ঘুরে গেছেন,কিন্তু এখন ভিসা পাচ্ছেননা। মূলত লোকাল নোলেজ বলে ভিসা প্রদানে যে বিষয়টি আছে-সেটি দিল্লী থেকে কী ভাবে কার্যকর হবে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনা। এ কারনে একজন যোগ্য ও সুপরিচিত মানুষের ভিসাও প্রত্যাখ্যাত হতে পারে-শুধুমাত্র ভিন্ন দেশে বসে না জেনে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারনে।
ব্রিফিং-এর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৩ সালে আমাদের বৃটিশ কারী এওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী ডেবিড ক্যামেরুন এসেছিলেন, তখনো এই সিদ্ধান্ত হয়নি। এবার এসেছিলেন ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে এমপি। আমি তার কাছে এ ব্যাপারে আমাদের দাবী-ভিসা অফিস পুনরায় ফিরিয়ে আনার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে ধরি। আমি মনে করি আমাদের সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে কিছুটা ভুমিকা রাখা দরকার। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে এমপি আপনার দরজায় কড়া নাড়বেন-তাকে এ ব্যাপারে আপনার দাবীটি জানিয়ে রাখুন।
বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি এমপি এবং সংশ্লিস্ট ডিপার্টম্যান্টে-এ ব্যাপারে একটি চিঠি বা ইমেল পাঠান, গঠনমূলক সেসবক কার্যক্রম একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া আপনাদের যে কোনো অনুষ্ঠানে আজকাল এমপিরা আসছেন, তাদেরকে এই মূল দাবী জানিয়ে রাখুন। এনাম আলী আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে বৃটিশ পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত একটি ডিবেইটে উপস্থিত ছিলাম। কনসারভেটিভ এমপি এন্ড্রো রসেনডেল এই বিতর্ক আয়োজনে উদ্যোগি ছিলেন। এতে বৃটিশ কারী এওয়ার্ডের অনুষ্ঠানের দাবীর কারনে ভিসা অফিস স্থানান্তরের প্রেক্ষিতে ক্ষোভের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ও অবগত আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
আর ভিসা প্রদানে ধারবাহিকতা যে দুর্বল হয়ে পড়েছে-এটাও উল্লেখ করা হয়। এতে হোম অফিস মিনিষ্টার ক্যারন বাক এমপিও উপস্থিত ছিলেন। শ্যাডো লেবার মিনিষ্টার ডেইবিট হানসনও আমাদের দাবীর প্রতি সমর্থন জানান। বিতর্ক চলাকালে কেনো কমনওয়েলথ দেশের জন্য ইমিগ্রেশন পলিসি এতো কঠিন আর ইইউ-এর জন্য সহজ-ইত্যাদিও আলোচিত হয়। পরে হোম অফিস মিনিষ্টার জানান, পুরো বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। আর ‘হাউ টু সল্ব প্রবলেম লাইক এ ভিসা’ নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হবে যার মাধ্যমে সমাধান বের হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই একচেজ রিপোর্টের প্রকাশের পূর্বেই আমি এর সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি ,যাতে এ ব্যাপারে ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে আসে।
এদিকে আমাদের এওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো জবাব না দিলেও ভিসার ক্ষেত্রে যথার্থ ও কার্যকর সেবার উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন-এমনটি উল্লেখ করে এনাম আলী জানান,সম্প্রতি হোম সেক্রেটারী ১শ সংগঠন-সংস্থার সাথে কনসালটেশন শেষে ভিসা প্রদানে লালফিতার দৌরাত্ব্য কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে, ভিসা প্রসেসিং-এর ক্ষেত্রে যে বেশী সময় যাচ্ছে-তা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল থেকে বিশেষ করে বিজনেস ট্যুরিজম ভিসা এবং পারফরমিং আর্টস ভিসা আরো সহজিকরন হবে।
সবশেষে এনাম আলী কিছু তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, কোমনওয়েলথ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে বৃটেনের আলাদা মর্যাদার সম্পর্ক রয়েছে। বৃটেন হচ্ছে বাংলাদেশে ৩য় বৃহত্তর বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ২বিলিয়ন পাউন্ডের ব্যবসা পরিচালনা করে বৃটেন। সমপরিমান আমাদানী হচ্ছে এদেশে। ৭০টি বড় মাপের বৃটিশ কোম্পানী রয়েছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশও কয়েকশ মিলিয়ন পাউন্ডের আমাদানী করে বৃটেন থেকে। আর দাতা হিসেবেও বৃটেন প্রথম কাতারে। বছরে দেড়শ থেকে দুশ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান দেয়া হচ্ছে ইউকে এইডের মাধ্যমে। আর বৃটিশ বাংলাদেশীরাও আজ বৃটেনের অর্থনীতির সহায়ক। একটি মাত্র ইন্ডাস্ট্রি-রেস্টুরেন্ট সেক্টরেই বছরে টানওভার প্রায় ৩.৫বিলিয়ন পাউন্ড। সেই সূত্রে বিজনেস ভিসা, চিকিৎসা ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ভিজিটর ভিসা, ফ্যামেলি ভিসা, এন্টারটেইনম্যান্ট ভিসা ইত্যাদি নানা ধরনের ভিসায় নিয়মিতই বাংলাদেশের মানুষ বৃটেনে আসার প্রয়োজনিয়তা রয়েছে। একই ভাবে বৃটেন প্রবাসীদের বিশাল ব্যবসা বানিজ্য ও সম্পদ রয়েছে সিলেটে তথা বাংলাদেশে। বিশেষ করে এদেশের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক সূত্রতা রয়েছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু-ভিসা জটিলতা এ ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে। বর্তমানে বছরে যে ২১ হাজার ভিসা বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছেন-এটা একসময় অনেক কম ছিলো। কিন্তু দিন দিন নানা কারনে চাহিদা বাড়ছে, এবং এর সাথে দু দেশের অর্থনীতিরও সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দাবী পরিস্কার, আমরা আমাদের আত্ন মর্যাদা ফিরে পেতে চাই। নিজের দেশের স্বাধীনতা এবং মায়ের ভাষার জন্য লড়েছে এবং সফল হয়ে পৃথিবীতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে-পৃথিবীতে এমন জাতির সংখ্যা নগন্য। সেই বাংলাদেশ কোনো ভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনা। সরকার যদি খরচ কমানোর জন্য এটা করে থাকে, প্রয়োজনে আমরা ভিসা ফি কিছুটা বেশী দিতেও রাজি আছি-কিন্তু স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের জন্য ভিসা ইস্যু হবে-ভিন্ন দেশে এটা মেনে নেয়া যায়না।
তাই সকলের প্রতি এক আহবান, আপনারা এক কক্তে কথা বলুন, সমান ভাবে দাবীটি শক্তিশালী করুন। এ নিয়ে রাজনীতি ও দলাদলি থেকে মুক্ত থাকুন এবং একে অন্যকে সহযোগিতা করুন। কমিউনিটি নেতাদের প্রতিক্রিয়া: বিবিসিসি প্রেসিডেন্ট মাহতাব চৌধুরী বলেন, ভিসা জটিলতার কারনে আমাদের এফবিসিসিআই-এর মতো বড় বিজনেস ডেলিগেশনের অনেকের ভিসা হয়নি। আমরা মনে করি ভিসা অফিস স্থানান্তরের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না,বৃটেনও আর্থিক ভাবে ক্ষতির মূখে পড়ছে। যোগ্য মানুষেরা বৃটেনে ভ্রমনের আগ্রহ কম দেখাবে।
সোসাইটি অব বাংলাদেশী সলিসিটার্স এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সলিসিটার আবুল কালাম বলেন, আমাদের বিভিন্ন ক্লায়েন্ট-এর কাছ থেকেই আমরা জানছি, বর্তমানে ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে এবং যথা সময়ে ভিসা না পাওয়ার পরিমানও বেড়েছে। ভিন্ন দেশে অফিস স্থানান্তরই এর প্রধান কারন বলে আমরা মনে করি।