মৎস্য চাষ, রেনু ও পোনা উৎপাদনের পর এবার সবুজচাষেও বিপ্লব ঘটিয়েছেন বিশ্বনাথের উদ্যমী যুবক বেলাল। মৎস্য চাষের পাশাপাশি সফলতার সাথে পরিচালিত এ প্রকল্পে তিনি দুই বিঘা জমির উপর চাষ করেছেন মিষ্টি মরিছ (ক্যাপসিকাম)।
বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামধানা গ্রামের বাসিন্দা বেলাল আহমদ ইমরান (২৮) এক উদ্যমী যুবক। ২০০৪ সালে ডিগ্রি পাস করে কর্মজীবন কিভাবে শুরু করবেন আর দশটি তরুণের মতোই ভাবছিলেন বেলাল। লন্ডনে পাড়ি দেয়ারও হাতছানি ছিল তার। একপর্যায়ে তিনি প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন ভূলে গিয়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর পরই চাকুরীর আশায় না থেকে শিখে নেন তথ্য প্রযুক্তির নানা দিক। দ্রুততম সময়ে অর্জন করেন প্রযুক্তির বেসিক আইডিয়া। শুরু করেন মৎস্য চাষ।
সময়ের সাথে সাথে অব্যাহত থাকে তার অগ্রযাত্রা। আর কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি হাত দেন মৎস্য চাষে। নিজ কর্মনিষ্ঠায় অল্প দিনেই সফলতা পান এ যাত্রায়। ফলে একের পর এক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রকল্প সম্প্রসারণে। প্রতিষ্ঠা করেন জিউল মাছের খামার। দেশীয় প্রজাতির শিং-মাগুর চাষে তার সফলতার বিষয়টি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তখন থেকেই তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে সিলেট বিভাগের সীমানা পেরিয়ে সারা দেশে। বেলালের সফলতার সংবাদ পেয়ে আগ্রহী উদ্যোক্তারা তার সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন প্রতিনিয়ত। আর বেলালের কাছ থেকে প্রাপ্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগ করে সফল হয়েছে অনেকেই।
মৎস্য চাষে সফলতা পাওয়ার পর বেলাল আহমদ ইমরানের স্বপ্ন আরো প্রসারিত হতে থাকে। তাইতো মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই তিনি শুরু করেন রেণু-পোনা উৎপাদন। নিজ খামারে উৎপাদিত পোনা সংগ্রহে চাষীদের মাঝে অভাবনীয় সাড়া পান তিনি। ফলে এ কাজেও তাকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি তার। আর এসব কাজে যেমন বেলাল নিজ কর্মে পেয়েছেন প্রবল উৎসাহ তেমনি পেয়েছে স্বীকৃতিও। ইতোমধ্যেই মৎস্যচাষে সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার ওঠেছে তার হাতে।
২০১৩ সালে বেসরকারি টিভি ‘চ্যানেল-আই’ তে একটি অনুষ্ঠান দেখে তার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিল ‘ক্যাপসিকাম সবজি চাষের’ বিষয়টি। অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গত কার্তিক মাসে মাঠে নামেন উদ্যমী তরুণ বেলাল। নিজের বাড়িতেই মাছ ও ঐ সবজি চাষ করে সফল হন তিনি।
সম্প্রতি তিনি দেড় বিঘা জমির উপর চাষ করেছেন মিষ্টি মরিছ (ক্যাপসিকাম)। ফলনও হয়েছে ভালো। এছাড়া নার্সারীর পুকুর পাড় জুড়ে রোপন করেছেন নাগা মরিছের (স্টার চিলি) প্রায় ৫ হাজার চারা। এরই মধ্যে গাছগুলোর ডালে ডালে ধরেছে অসংখ্য মরিছ। ফলে প্রতিটি গাছ ঝুলে পড়ছে মাটির সাথে। বাজারে ওঠেছে বেলালের উৎপাদিত ক্যাপসিকাম ও নাগা মরিছ। আর এ পর্যন্ত ১৭শ’ কেজি ক্যাপসিকাম ও ১৫ সহ¯্রাধিক নাগা মরিচ বিক্রি করেছেন বেলাল।
বেলাল জানান, দেড় বিঘা জমিতে বীজসহ চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। চার মাসের মাথায় ৪ হাজার ৭শ’ গাছে এ পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন এক হাজার ৬শ’ কেজি। যার মূল্য এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা। আরো এক মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪ হাজার কেজি ফল পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। খোলা মাঠে এমন ভালো ফলন হবে এ রকম আশা কৃষি কর্মকর্তারাও করেননি জানিয়ে বেলাল বলেন, এটি সাধারণত নেটের ভেতর চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলামের সহযোগিতায় ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন তত্বাবধানে খোলা মাঠেই চাষ করে আশাতীত ফলন পাচ্ছেন।
বেলাল বলেন, বণিজ্যিকভাবে সিলেটে আর কেউ ক্যাপসিকাম উৎপাদন করেনি। ক্যাপসিকামের ফলন দেখতে প্রতিদিন লোকজন আসছেন তার বাড়িতে। বাড়ির উঠানেও নেট দিয়ে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। কিন্তু নেট ছাড়াই খোলা মাঠে ভালো ফলন হয়েছে।
বেলালের একের পর এক সফলতা অবলোকন করে এলাকারসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে মাছ ও সবজি চাষ তথা কৃষিকাজে। ফলে ব্যক্তি তথা দেশ যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি সহযোগিতাপ্রার্থীদের কর্মপরিকল্পনা বাতলে দেওয়ার পাশাপাশি অনুপ্রেরণা যুগিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমহলে। তবে এ প্রশংসার সবটুকু তার একার প্রাপ্য নয় বলে জানান বেলাল। তিনি বলেন, আমার এ সফলতায় অনেকেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. শহিদুল ইসলামের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ।
অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম জানান, গ্রীষ্মকালীন ফসল ক্যাপসিকামের পুষ্টিমান অনেক। এর বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। ক্যাপসিকাম দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকায় বেশি উৎপন্ন হয়।
সূত্র: ডেইলি সিলেট