রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলেই সঙ্কটের অবসান হবে: যৌক্তিক পরিণতি পর্যন্ত আন্দোলন

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলেই সঙ্কটের অবসান হবে: যৌক্তিক পরিণতি পর্যন্ত আন্দোলন

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান হবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান হবে ২০-দলীয় জোটের আন্দোলন ‘যৌক্তিক পরিণতিতে’ না পৌঁছা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার বিকেলে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ ঘোষণা দেন। চলমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কয়েকটি প্রস্তাবও তুলে ধরেন।

তবে ‘যৌক্তিক পরিণতি’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে খালেদা জিয়া কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও শুরুতেই বলে দেওয়া হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন বক্তব্য দেবেন, কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। তার পরও বক্তব্য শেষে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়াকে। মঞ্চ ত্যাগ করতে করতে খালেদা জিয়া শুধু একটি প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে জনগণ আছে।

আন্দোলন (হরতাল-অবরোধ) চলার কারণে ‘সাময়িক’ কষ্ট স্বীকার করতে জনগণের প্রতি অনুরোধও জানান খালেদা জিয়া। দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

খালেদা জিয়া সমস্যা সমাধানে যেসব দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হলো-গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, পুলিশি ও যৌথবাহিনীর ‘হয়রানি’ বন্ধ করা এবং হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া; সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করা।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারব। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারব শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে।’

খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্য বলেন, ‘এই সরকারের সময় দেশের প্রতিটি জনপদে আজ স্বজন হারানোর কান্না চলছে। কে কখন গুম-খুন হবে, তা কেউ জানে না।’ এর পরও যাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানান বিএনপির চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তির দিন ২০-দলীয় জোটের তরফ থেকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশি বাধায় তিনি তাঁর কার্যালয় থেকে বের হতে পারেননি। কার্যালয়ের গেটের ভেতরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘অবরোধ চলবে।’ ওই ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত অবরোধ চলছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিবৃতির মাধ্যমে হরতাল কর্মসূচি। কার্যালয়ে থাকার সময় গত ১৯ জানুয়ারি রাতে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। ৫৩ দিন পর আজ আবার সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ওই কার্যালয়ের ভেতরে যাঁরা অবস্থান করছেন তার বাইরে কোনো নেতা যাননি। ২০-দলীয় জোটের শরিক কোনো দলের কেউ ছিলেন না। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল

আন্দোলন থেকে সরে আসা ভুল ছিল

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কারণে গত বছর ৫ জানুয়ারির পর আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করে আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে সঠিক ছিল না, তা আমরা অচিরেই বুঝতে পারি। কারণ, আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার পর সারা দেশে যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।’

সংকটের স্রষ্টা হাসিনা

দেশের বর্তমান অবস্থাকে সংকটপূর্ণ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই সংকটপূর্ণ অবস্থার স্রষ্টা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা। দেশে সংকটের উৎস হলো পঞ্চদশ সংশোধনী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে তাঁরা দেশকে সংকটে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পন্থা বন্ধ করেছে। ন্যক্কারজনক জালিয়াতি করে সরকার ক্ষমতায় বসেছে। সংকট সমাধানে চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে। ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলেও মনে করেন তিনি।

হাসিনা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন

খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, “এই নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। সমঝোতা হলে নতুন নির্বাচন হবে।” কিন্তু নির্বাচনের পর তাঁরা তা করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তাঁরা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। ৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসরের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু সে অঙ্গীকারও ভঙ্গ করেছেন। উনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এরশাদের নির্বাচনেও গেছেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বারবার আমরা আলোচনার কথা বলেছি। আমরা সমঝোতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু তারা (সরকার) বরাবরই সংঘাত ও সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা সংলাপের কথা বলেছি, তারা সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করেছে। এ জন্য আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি।’ মানুষের সব অধিকার সরকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দলের নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

খালেদা জিয়া দাবি করেন, বিএনপি হত্যার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হত্যা চলে না। সরকার দমনপীড়নের পথ বেছে নিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের দমনপীড়নের কারণে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘ক্ষমতা আমার জন্য নতুন কিছু নয়। অতীতে জনগণের কল্যাণে আমি ক্ষমতায় এসেছি।’ দলের নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলন করে সক্রিয় হোন।’

পরিণতি শুভ হবে না

দলের যুগ্ম সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফেরত না দিলে এর পরিণতি শুভ হবে না।’

বোমা হামলায় আ.লীগ জড়িত বলে মানুষ বিশ্বাস করে

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে কতভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, তা আমি বলতে চাই না। আমার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে পথ বন্ধ করা হয়েছে। হরতাল-অবরোধে সরকার কিছু যানবাহন রাস্তায় নামায়। সেসব যানবাহনে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। যেখানে-সেখানে বোমা মারা হচ্ছে। এসব বোমা হামলার সঙ্গে তারাই (আওয়ামী লীগ) জড়িত বলে দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তারা (সরকার) জঙ্গি তৎপরতা বলে বিদেশে প্রচার চালাচ্ছে। জঙ্গিদের উত্থান তাদের (আওয়ামী লীগ) আমলেই। আমরা ক্ষমতা এসে জঙ্গিদের নির্মূল করেছি। তাদের হাত থেকেই জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে।’ দেশবাসী তাদের সঙ্গে আছে বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া।

ক্ষমতাসীনরা ‘খুদে হিটলার’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘জার্মানির নাৎসি নেতা হিটলার আগুন লাগিয়ে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়েছিলেন। বাংলাদেশের তার প্রেতাত্মা “খুদে হিটলার”রাও তাই করার চেষ্টা করছে। হিটলারের যেমন পরিণতি হয়েছে, বাংলাদেশেও এদের এমন পরিণতি হবে।’

বাধ্য হয়ে কর্মসূচি

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা আলোচনার ভিত্তি হিসেবে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরি। তারা সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে সংকট নিরসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকারসহ জনগণের সকল অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা রাখা হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি।’

বোমা হামলা পরিকল্পিত

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই যে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই শাসক মহলই সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে যানবাহনে তুলে পরিকল্পিতভাবে শোচনীয় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব পরিকল্পিত বোমা হামলার সঙ্গে তারাই জড়িত বলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে। নিরপরাধ মানুষের জীবনকে যারা রাজনীতির পণ্যে পরিণত করে, তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।’




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024