নিউজ ডেস্ক: নানা দেশের মানুষেরা অন্য দেশে কাজ করতে যান, অন্য দেশে বসবাসও করেন। সাধারণভাবে সবাই তাঁদের পরবাসী ডাকলেও বর্ণবাদী ধ্যানধারণার প্রভাব দেখা যায় এখানেও। ইংরেজি ভাষায় যেন ‘এক্সপ্যাট’ শব্দটি কেবল শ্বেতাঙ্গদের জন্য বরাদ্দ করা, বাকি সব জাতি-বর্ণের মানুষের বেলায় বলা হচ্ছে ‘ইমিগ্র্যান্টস’ বা ‘মাইগ্র্যান্টস’। এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
মানুষের পরদেশ যাত্রা বা অভিবাসন-সম্পর্কিত কথাবার্তায় এখনো এমন অনেক শব্দ বা অভিধার প্রচলন আছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গদের সবার চেয়ে ওপরে রাখা হয় বলেই দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখনো রয়ে যাওয়া এসব শব্দের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো ‘এক্সপ্যাট্রিয়ট’ বা সংক্ষেপে ‘এক্সপ্যাট’। বাংলায় এর কাছাকাছি প্রতিশব্দ হতে পারে পরবাসী।
এক্সপ্যাট কী? বা কাকে এক্সপ্যাট বলা যাবে, এ বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় বলা হচ্ছে, একজন এক্সপ্যাট হচ্ছেন তিনি, যিনি সাময়িকভাবে বা পাকাপাকিভাবে এমন কোনো দেশে বসাবস করছেন, যেখানে তিনি জন্মাননি বা বেড়ে ওঠেননি। লাতিন ভাষার ‘এক্স’ (বাইরে) ও ‘প্যাট্রিয়া’ (দেশ, পিতৃভূমি) থেকে এক্সপ্যাট্রিয়ট বা এক্সপ্যাট শব্দটি এসেছে।
এই ব্যাখ্যা পাওয়ার পর আপনি হয়তো আশা করতে পারেন যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তি ভিনদেশে কাজ করতে বা বসবাস করতে গেলে তাঁকে এক্সপ্যাট বলা হবে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এক্সপ্যাট শব্দটি ভিনদেশে কাজ বা বসবাস করতে যাওয়া কেবল পশ্চিমা শ্বেতাঙ্গ মানুষের জন্যই বিশেষভাবে বরাদ্দ করা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আফ্রিকানদের ইমিগ্র্যান্টস বা অভিবাসী বলা হয়, ইমিগ্র্যান্টস বলা হয় আরবদেরও। এশীয়দেরও ইমিগ্র্যান্টস বলা হয়। কিন্তু যেভাবেই হোক না কেন ইউরোপীয়রা এক্সপ্যাট, কেননা তারা অন্য জাতিসত্তাগুলোর সমতায় থাকতে পারে না। তারা উচ্চতর। ইমিগ্র্যান্টস এমন শব্দ যা কিনা ‘নিম্নতর জাতের’ জন্য বরাদ্দ করা।
সিলিকন আফ্রিকা ডট কম-এর সম্পাদক ও সামাজিক উন্নয়নকর্মী মাউয়ুনা হেমাকে কুতোনিন ওই প্রতিবেদনে নিজের দাবির সপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের উদাহরণ দেন। তিনি জানান, আর্থিক তথ্যাবলি খাতে দুনিয়ার নেতৃস্থানীয় সাময়িকীটির একটি ব্লগ আছে, যা বিশেষভাবে এক্সপ্যাটদের জন্যই। সম্প্রতি এই ব্লগে ‘হু ইজ অ্যান এক্সপ্যাট, এনিওয়ে?’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয়েছে। ওই লেখার প্রধান উপসংহার হলো, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এক্সপ্যাটস (পরবাসী) বলা হয়, বাকিদের ইমিগ্র্যান্টস (অভিবাসী) হিসেবে এবং অন্যদের কেবলই মাইগ্র্যান্টস (দেশান্তরী) হিসেবে তুলে ধরা হয়। সামাজিক শ্রেণি, কে কোন দেশে জন্মেছে এবং কোন আর্থিক অবস্থায় আছে, তার ওপরই এটা নির্ভর করে। এটা শুনতে অবাক লাগতে পারে যে হংকংয়ে কেবল কিছু মানুষকেই এক্সপ্যাটস হিসেবে দেখা হয়, বাকিদের নয়। পশ্চিমা দেশে শিকড়ওয়ালা যে কাউকেই এক্সপ্যাট বিবেচনা করা হয়… ফিলিপিনো গৃহকর্মীদের কেবলই গেস্টস (অতিথি) বলা হয়, এমনকি তারা দশকের পর দশক ধরে সেখানে থাকলেও। ম্যান্ডারিনভাষী চীনের মূল ভূমির মানুষদের খুব কমই এক্সপ্যাট বলা হয়…এটা আনুষ্ঠানিক রীতিতে বুনে রাখা একটি দ্বৈতনীতি।
এদিকে আফ্রিকা ও ইউরোপেরও বাস্তবতা একই। আফ্রিকার সেরা পেশাদারদেরও ইউরোপে এক্সপ্যাটস হিসেবে দেখা হয় না। তাদের বলা হয় ইমিগ্র্যান্টস। একজন আফ্রিকান পরবাসী বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি আমি। কিন্তু কালো বা শ্বেতাঙ্গ নই বলে আমাকে “এক্সপ্যাট” বলা হতো না। রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার জন্য তারা আমাকে বলত আমি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন ইমিগ্র্যান্ট।’