ইউরোপে বেশ কিছুদিন ধরে অনেক সংকট বিচ্ছিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। সরকারি ব্যয়-সংকোচ ও সংস্কারের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরোপ তার ঘর সামলাবার চেষ্টা করলেও চরম বেকারত্ব ও মন্দার মতো সমস্যার ফলে মানুষের মনে অসন্তোষ বাড়ছেই। গতকাল বুধবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে আলোচনায় বিশেষ প্রাধান্য পায় চরম বেকারত্ব ও ইউরো এলাকায় মন্দার আশঙ্কা। ব্রাসেলস-এ একদিনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ সম্মেলনে সেগুলি নিয়ে সার্বিক আলোচনা হয়।
জার্মানিতে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জন্মহার কমছে, আর বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা। প্রবীণরা কেন দীর্ঘজীবী হন, তাদের জীবনযাত্রা কেমন, কিভাবে তাদের জীবনে সফলতা এসেছে এসব জানাতেই জার্মানির কোলন শহরের একটি অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী কয়েকজন ইতিবাচক চিন্তার ধারক প্রবীণের জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবির গল্প। এই অবস্থায় ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদের সামনে বেশি পথ খোলা নেই। সবার নজর জার্মানির দিকে। সেপ্টেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষে এমন কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন, যার ফলে ভোটাররা অসন্তুষ্ট হয়। জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে এ ক্ষেত্রে ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলির কাজের কিছুটা সমালোচনা করেছেন।
আপাতত গোটা এলাকায় বেকারদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ। তাছাড়া প্রায় ১৮ মাস ধরে মন্দা চলছে, যা একটা রেকর্ড। মোটকথা তাত্ত্বিক আলোচনার বাইরে দ্রুত এমন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ বাড়ছে, যাতে এখনই কর্মসংস্থান বাড়ে, অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে। ধৈর্যের বাধ ভেঙে পড়ার মুখে। লুক্সেমবুর্গ ও অস্ট্রিয়া এখনো ব্যাংকিং ক্ষেত্রে গোপনীয়তার নিয়ম শিথিল করার বিষয়ে পুরোপুরি রাজি হচ্ছে না, যদিও তাদের উপর চাপ কম নেই। কর ফাঁকির প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গেও ইইউ’র সার্বিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ফ্রান্সও মন্দার কবলে পড়ে নিজের ঘর গোছাতে ব্যস্ত। বাজেট ঘাটতি কমাতে ফ্রান্স কিছুটা বাড়তি সময় পেলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সে দেশের উপর চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় দুই দেশ ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ইটালির বিশাল ঋণভার, স্পেনের উপর বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন, সৌভেনিয়ার জন্য বেলআউটের মতো বিষয়ও ইউরোপীয় নেতাদের ভাবাচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ব্রিটেন গণভোটের মাধ্যমে ইইউ’র সদস্য থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনের জন্য আরও ছাড় আদায় করার চেষ্টা করে চলেছেন। তবে এমন চাপের মুখে বাজেট ঘাটতি কমানো বা সংস্কারের গতি কমে যাবে, এমন সম্ভাবনা মোটেই দেখা যাচ্ছে না। তবে এই ধরনের পদক্ষেপের সুফল যাতে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে, তার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়টি বাড়তি গুরুত দেয় হচ্ছে।
সূত্র : ডিডব্লিউ
Leave a Reply