নিউজ ডেস্ক: জামায়াত নেতারা কেউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। মোবাইলে যোগাযোগ করলে ট্রেকিং আতঙ্ক। স্বশরীরে আরো বিপদ। আটক, গ্রেফতার ও গুমের শঙ্কা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এমনটাই জানালেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এতে আন্দোলনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে অসুবিধা হচ্ছে।
দলীয় কর্মীদের কাছে নির্দেশনা পৌঁছানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে তাৎক্ষণিক কোনো নির্দেশনা। সরকার কৌশল বদলায়। সেই অনুযায়ী বিরোধীদল আন্দোলনের রণণীতি তৈরি করে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াত তা করতে পারছে না। জামায়াতের একজন নেতা জানালেন, এখন আর কোনো কিছুই সহজভাবে করা যাচ্ছে না। ভাইবারেও বিশ্বাস নেই। উদাহরণ মান্না। ভাইবার থাকলেও ট্রেকিংয়ের জন্য সরকার প্রযুক্তি এনেছে। যার ফলে যোগাযোগ রাখা রিস্কি হয়ে গেছে। এরপর যোগাযোগে একেবারে বাদ হয়ে গেছে তা ভাবলে ভুল হবে। জামায়াত-শিবির বিএনপি নয়। এইখানে সুযোগ সন্ধানী নেতাকর্মী নেই। ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন হলে যা হয়।
কোনো না কোনোভাবে দলটি যোগাযোগের একটি চেইন তৈরি করে ফেলে, বললেন ওই নেতা। জানা যায়, ফেসবুকে গ্রুপ পেজ তৈরি করে এখন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে জামায়াত-শিবির। জামায়াতের একজন নেতা জানালেন, “তাদের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির দিক-নির্দেশনা রয়েছে। মাঠের কর্মীরা তা জানে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের আর হারানোর কিছু নেই। কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নেতারাও কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ছাত্রদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটায় আত্মীয়-স্বজন আর পরিবার। এই অবস্থায় পেছনে ফেরার আর সুযোগ নেই।” শরিক বিএনপিকে নিয়ে জামায়াত আগে থেকেই হতাশ। এখন এই হতাশা আরো বেড়েছে।
বিএনপি কী করবে, কতদূর করতে পারবে-এই নিয়ে জামায়াতের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব গাঢ় হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামায়াত এখন তার মতোই এগুচ্ছে। ‘বেশি বিপ্লবী’ হওয়ার মানসিকতা থেকেও সরে এসেছে দলটি। অস্তিত্বের লড়াইয়ে পড়ে গেছে জামায়াত। এখন কী করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায় সেটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। আবার আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসারও সুযোগ নেই তাদের-এমনটাই বললেন জামায়াতে ওই নেতা। হাজার হাজার কর্মী জেলে, অসংখ্য নিখোঁজ, ক্রসফায়ারের প্রাণ গেছে অনেক কর্মীর। সংখ্যাটি বিএনপির থেকেও বেশি।
ওই নেতা জানালেন, জামায়াতের এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগুতে হচ্ছে। কাজেই হুট করে চুপচাপ হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটি বিষয়ে জামায়াতের সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সেটি হলো আন্তর্জাতিক মহলের চাপ। এই চাপকে জামায়াত গ্রাহ্যের মধ্যে নিতে বাধ্য হচ্ছে। মিত্রহীন এই দলটির এখন ভরসা আওয়ামী বিরোধী জনতা। আর এটিকে কাজে লাগিয়েই টিকে থাকতে চায় জামায়াত। এর জন্য দলটি ভিন্ন কৌশলে- সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কাছে যেতে চায়। তাদের এই চেষ্টা মূলত টিকে থাকার লড়াইয়ের একটি পথ। সেউ পথেই এগুতে চায় জামায়াত।