নিউজ ডেস্ক: খুব বেশিদিন আগের কথা কি? মহাকালের বিচারে হয়ত নয়। পৃথিবী নামের এই কল্পলোক ডুবে ছিল অন্ধকারে। কিসের অন্ধকার? সহস্রাব্দের প্রাচীন অজ্ঞানতা আর কুসংস্কারের অন্ধকার। নিষ্ঠুর নির্লজ্জ ভালবাসাহীন গা-শিউরে ওঠা অন্ধকার। ইতিহাসের বই ঢুঁড়লে তার বিবরণ পাওয়া যায়।
অন্ধকারাচ্ছন্ন এই নশ্বর পৃথিবীর উপরে যে অনাদি অনন্ত অবিনশ্বর সত্ত্বার অবস্থান, তিনি সবই দেখলেন। মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার দেখলেন। অর্থের লোভে ভাইয়ের বুকে ভাইয়ের ছুরি চালানো দেখলেন। জগতের আলো ভালভাবে দেখে ওঠার আগেই নিষ্পাপ শিশুকে কবরের অন্ধকারে জীবন্ত শুইয়ে দেওয়া দেখলেন। জীবন নামের এই ওয়েটিং রুমকে সব মনে করে বেঁচে থাকা কিছু মানুষের দৌরাত্ম্য দেখলেন।
“(এই পৃথিবীর) জলে-স্থলে দেখা দিয়েছে কলুষ, যার জন্যে দায়ী মানুষেরই কৃতকর্ম।” [১]
দয়াময় আল্লাহ তার সৃষ্টিকে সঠিক পথ দেখাতে চাইলেন। সে পথ শ্বাশ্বত, সব যুগে সবকালে সব জাতির বুকে এই একই পথের সন্ধান দিয়ে আল্লাহ দূত পাঠিয়েছেন। এবারই বা ব্যাতিক্রম হবে কেন, অন্ধকারের বুকে সত্যের মশাল হাতে তিনি পাঠালেন এক মহাপুরুষকে।
সেই মহাপুরুষের হাত ধরে নেমে এল অনন্তকালের শ্রেষ্ঠ বাণী। অন্ধকার দুরাচারী জগতকে শোনাল জ্ঞানের মাহাত্ম্য।
“পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন;-
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে, এক ঝুলন্ত বস্তুপিন্ড থেকে।
পড়! এবং তোমার প্রভু পরম মহানুভব।
তিনি (মানুষকে) শিখিয়েছেন লেখনী,
শিখিয়েছেন সেই জ্ঞান- যা সে জানত না।
না! (এ কী!) মানুষ সীমালঙ্ঘনকারী;
সে মনে করে সে নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট।
নিশ্চয়ই তোমার প্রভুর কাছেই সকল কিছুর প্রত্যাবর্তন।” [২]
মরুর বুকে প্রকৃতির কাছে অসহায় এক জাতি, হাজার মিথ্যে দেবতার কাছে আত্মসমর্পণকরে আরো অসহায় হয়ে পড়েছে। তারই মাঝে এই এক মহাপুরুষ আল্লাহকে ভালোবাসলেন। সেই ভালোবাসা বিফলে গেল না, আল্লাহও তাকে ভালোবাসলেন।
মহাপুরুষ সারা দিনের ক্লান্তির পর ঘুমুচ্ছিলেন। আল্লাহ ভালোবেসে ডাকলেন, বন্ধু আমার! ঘুমোবার যে একদম সময় নেই। যে সত্যের সন্ধান তুমি পেয়েছ, তাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখলে চলবে কি করে?
“ওহে চাদরে আবৃত ব্যাক্তি,
ওঠ, তোমার সতর্কবাণী প্রচার কর;
এবং তোমার প্রভুর মহিমা ঘোষণা কর।” [৩]
ঐশী সেই আহবান মহাপুরুষ ছড়িয়ে দিলেন সারা জগতে। মানুষকে ডাকলেন জ্ঞানের দিকে, ভালোবাসার দিকে। আল্লাহকে ভুলে মানুষ ভালোবাসতেও ভুলেছিল। মহাপুরুষ মহা আপত্তি তুললেন, ভালোবাসতে ভুললে চলবে কেন? আল্লাহকে ভালোবাস, কারণ তিনিই একান্ত ভালোবাসার প্রাপ্য। আর ভালোবাস মানুষকে।
“মর্ত্যে যারা আছে, তাদের প্রতি করুণা দেখাও। তাহলে স্বর্গে যিনি আছেন, তিনিও তোমাদের প্রতি করুণা দেখাবেন।” [৪]
ভালোবাসার এই ডাক বড়ই চিরন্তন। মরুবাসী ভালোবাসতে জানল, আর জেনে অমর হল।
ফুটনোটঃ
১. কুর’আন, সূরা আর-রুম (৩০:৪১)
২. কুর’আন, সূরা আল-‘আলাক (৯৬:১-৮)
৩. কুর’আন, সূরা আল-মুদ্দাসসির (৭৪:১-৩)
৪. সুনান আত-তিরমিযী।