রিয়াদুল করিম: আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, এই নির্বাচনে হারলেও লাভ, জিতলেও লাভ।
বিএনপির সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নিলেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে আন্দোলনে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর নির্বাচনের প্রশ্নেও সরকারকে চাপে রাখতে চায় দলটি। ‘দমন-পীড়ন’ বেশি হলে, পরিস্থিতি বুঝে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার সুযোগ থাকছে বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।
অবশ্য নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। সিটি নির্বাচনকে তামাশা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই দিন বিএনপির সমর্থক কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তফসিল পেছানো, সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরি করা, পুলিশি হয়রানি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধরপাকড় বন্ধ করাসহ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনকে অনুরোধ করেন।
সূত্র জানায়, এসব হচ্ছে সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপির একটি কৌশল। সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই এটি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করেছে। তাই তাঁরাও পাল্টা কৌশল নেবেন, যাতে নির্বাচন নিয়ে সরকারই উল্টো বেকায়দায় পড়ে।
নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে এখনো দুই ধরনের মত আছে। তবে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলা চলে। নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে আছেন বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এমন কয়েকজন নেতার বিশ্লেষণ হলো, বিএনপির টানা আন্দোলনে এবারও ঢাকা ব্যর্থ। নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামছেন না বা নামতে পারছেন না। এখন প্রায় সব নেতা-কর্মী আত্মগোপনে। এ অবস্থায় নির্বাচনে গেলে নেতা-কর্মীরা চাঙা হবেন। রাস্তায় থাকবেন। কারণ মেয়র ছাড়াও সব ওয়ার্ডেই প্রার্থী থাকবে। এতে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি দেখছেন তাঁরা। তবে তাঁদের এ-ও আশঙ্কা, সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে ধরপাকড় বাড়াবে। পুলিশের বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত মিলেছে। বিএনপির নেতাদের হিসাব হলো, যদি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাতে সরকার আরও সমালোচনার মুখে পড়বে। নির্বাচনকে আগে থেকেই ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করে তোলার সুযোগ থাকবে।
একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত। তবে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাও আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করছেন, ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনে সরকার যেকোনো মূল্যে জিততে চাইবে। নির্বাচনে তেমনটি হলে বিএনপি প্রমাণ করতে চাইবে যে, বর্তমান সরকার বা কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
লন্ডনে বিএনপির সূত্র জানায়, দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা দলীয় নেতা-কর্মীদের বলেছেন, তাঁরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করতে চান যে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
এদিকে বিএনপির মূল্যায়ন হলো, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকার সমালোচনায় পড়ার পাশাপাশি এতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হবে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং তা আন্দোলনে কাজে লাগানো যাবে।
আর নির্বাচনে জিতলে বিএনপি বলতে পারবে তাদের প্রতি জনসমর্থন আছে। সরকারকে মানুষ সমর্থন করছে না। কারচুপি, নির্যাতনের পরও বিএনপির জয় হয়েছে-এর আগে অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরেও তাদের বক্তব্য ছিল এটি।
নির্বাচনকে তামাশা বলা হলেও ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মেয়র পদে মনজুর আলমকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। ঢাকা উত্তরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং দক্ষিণে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নসির উদ্দিন, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম, বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়া মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সূত্র জানায়, উত্তরে বিএনপির পক্ষ থেকে মিন্টুকে সমর্থন দেওয়া হবে। তবে দক্ষিণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়।