শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বলেছেন তার দল চলমান আন্দোলনের পাশা-পাশি ৩ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিবে। কেননা অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকার চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের ইতিহাস হচ্ছে ভোট ডাকাতির ইতিহাস। আর তা প্রমান করতেই তার ঢাকা ও চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি প্রমান করবে আওয়ামীলীগ অধিনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম সেন্টারে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি সায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ। সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তারেক রহমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরোদ্ধারের আন্দোলন করতে গিয়ে অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকারের হাতে প্রায় ২শ নেতাকর্মী গুম ও হত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীরা জেলে।
তিনি বলেন, আন্দোলন চুড়ান্ত গন্তব্যে না পৌছা পর্যন্ত চলবে। তিনি আরো বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন শহরে, উপজেলায় এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে ফোনে যোগাযোাগ করেছি। তারা বলেছে, আওয়ামীলীগ আন্দোলনকে ধমাতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিয়ে রাজনীতি করছে। কাজেই রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে।
তিনি বলেন, তৃনমূল নেতাকর্মীরা বলেছেন তারা কষ্ট শিকার করে হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশনিতে রাজী আছেন। কাজেই তৃনমূলের নেতাকর্মীদের পরামর্শে বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাবে। প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা ও আওয়ামীলীগের তৎকালিন ভূমিকা তুলে ধরেন উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে। তিনি দেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আর ফোনে নয় শীর্ষই আপনাদের সামনে হাজির হব। এসময় হলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাততালি দিতে থাকেন।
তিনি পাকিস্থান শাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তখন যদি কেউ বাংলাদেশের কথা বলত তখন নির্যাতন করা হত বা তাকে হত্যা করা হত। একারনে দিনের পর দিন মাসের পর মাস নির্যাতনের কারনে বাঙালী জাতি প্রস্তুত হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য। কিন্তু তৎকালিন আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেয়নি বরং তারা পাকিস্থানীদের সাথে সম্পর্ক রেখে যাচ্ছিল। তবে ২৬ মার্চ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
তিনি ৭ই মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ভাষনে কোথাও স্বাধীনতার ঘোষনা নেই। যা ৮ই মার্চের ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এ স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানকে সরকারকে ৪টি দফা দিয়েছিলেন। যা পাকিস্তান সরকার মেনে নিলে তিনি হতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তখন আর বাংলাদেশের জন্ম হতনা। শহীদ জিয়াই সাহস করে প্রথমে স্বাধীনতার ঘোষনা করেন। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রজেন্টেশন দেখানো হয়।
তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে একটি কমন জিনিষ দেখা যায়, তা হচ্ছে ব্যাংক ডাকাতি, টেন্ডারবাজী, মানুষ হত্যা, মানুষকে গুম করে নদী-নালা ডুবার মধ্যে ফেলে দেয়া। তিনি বলেন, আজ বিশ্ববাসী সালা উদ্দিন আহমদ, এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ গুম হওয়া নেতাদের বিষয়ে জানতে চায়। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ইউরোপিয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রতিনিধি যাওয়ার কথা থাকলেও কেউ যায়নি। তারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক উত্তর দিতে পারবে না বলেই কেউ যাওয়ার সাহস পায়নি। তিনি বলেন, এটি চরম কুটনৈতিক ব্যর্থতা।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামীলীগ ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের হয়রানী করেছে, তারা সেসময় সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেনি। কিন্তু এবার তারা তা করেছে। তারা শুধুমাত্র সংবাদ পত্রের মুখ বন্ধ করছে না, সৎ সাংবাদিকদের হত্যা করছে, নির্যাতন করছে। শুধু তাই নয় বিএনপির হয়ে তারা সাহস করে কথা বলছে তাদের নানানভাবে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে। যাদের পারছে না তাদের গুম ও হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন পাকিস্থানীদের হাতে যেভাবে বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিকগন নির্যাতিত হতেন, অপমানিত হতেন, ঠিক তেমনি ৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বিশিষ্ট নাগরিকদের অসম্মানিত হতে হয়েছে, বর্তমানেও শেখ হাসিনার হাতে দেশের বুদ্ধিজীবি ও সম্মানিত নাগরিকরা অসম্মানিত হচ্ছেন।