স্বদেশ জুড়ে: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুর্নীতি মামলায় দেশে ফিরিয়ে আনতে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন বিশেষ জজ আদালত। তাকে গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল রোববার ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে এ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. মোজাম্মেল হক পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
আবেদনে তারেক রহমানকে এ মামলায় পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হলেও সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। নিয়ম মাফিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ঢাকার আদালতে হাজির না হওয়ায় তাকে পলাতক দেখিয়েই ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন বিচারক। তার বিরুদ্ধে ইংরেজিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে এ মামলায় আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এ আবেদন করা হয়। ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের আবেদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান, দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। বিচারক মামলার শুনানির জন্য ২৯ মে পরবর্তী দিন রেখেছেন।
তারেকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়: ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগ দাখিলের ১ বছর পর ২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়। এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এই টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলার দশম সাক্ষী সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তা বিভূতি ভূষণ সরকারকে জেরা করেন আসামি মামুনের আইনজীবীরা।
গ্রেপ্তারী পরোয়ানার নেপথ্যে কারণ: লন্ডনে অবস্থানরত তারেক সম্প্রতি বিএনপির এক দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেন। গত ২০ মে পূর্ব লন্ডনের ওই অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ওপর চাপ দিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এরপর দেশে তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। লন্ডনে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে থাকেন যুবদল-যুবলীগ, বিএনপি-আওয়ামীলীগ। এদের অনেকে সংবাদ সম্মেলেনও ডাকেন পাল্টা জবাব দিতে।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে যা যা দরকার, আদালত সবই করবে।
এদিকে, তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলেছে বিএনপি। বিএনপির বর্তমান মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে আইনের আওতায় লন্ডন চিকিৎসা নিতে অবস্থান করছেন। আইন মোতাবেক সব কিছু চলছে। তারেকের বিরুদ্ধে এই প্রহসন মূলক অন্যায়কে সরকার বিষয়টি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এ বিষয়টি রাজনীতিকরণ করা হলে আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। এমনকি আইনি পথেও আমরা বিষয়টি মোকাবেলা করবো।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠো সমালোচনা করে দুদু আরো বলেন, এক এগারোর সময়ে তৎকালীন সরকার, প্রয়াত নেতা আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত কোনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। উল্টো আরও নতুন নতুন মামলা দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply