শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬

প্রতীক পেয়ে সরগরম প্রচারণা

প্রতীক পেয়ে সরগরম প্রচারণা

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরই জোর প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। গতকাল থেকে প্রার্থীরা পুরোদমে প্রচারে নামলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নেমে পড়েন। শুক্রবার সকালে প্রতীক পাওয়ার পর প্রচারে নামেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। কাওরানবাজারে জুমার নামাজ আদায় শেষে শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন।

এ সময় তিনি কাওরানবাজারের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের দোয়া ও সমর্থন চান তাবিথ। এর আগে সাংবাদিকদের তাবিথ বলেন, তিনি ঢাকা শহরকে আন্তর্জাতিক মানের শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি আশা করেন, তরুণরা তার সঙ্গে থাকবেন। জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে তাকে সমর্থন দিয়েছে। জনগণেরও সাড়া পাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, মাত্র প্রচার শুরু হলো। তিনি আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।

তাবিথের নির্বাচনী প্রচার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ থেকে তাদের প্রচারকাজ পুরোদমে শুরু হবে। এর মধ্যে ‘আদর্শ ঢাকা’ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বসে নির্বাচনী ইশতেহার ও কৌশল ঠিক করা হবে। ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক গতকাল ‘তারুণ্যের চোখে ঢাকা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করেন। গতকাল সকালে অনলাইনভিত্তিক নাগরিক প্লাটফরম ‘আমরা ঢাকার’ আয়োজনে খিলক্ষেতের লোটাস কামাল টাওয়ারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে নির্বাচিত কয়েক তরুণ ঢাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। ওই নতুনরা নাগরিক হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঢাকার সমস্যা সমাধানে আনিসুল হকের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উত্তর ঢাকার নাগরিকদের টেবিল ঘড়ি মার্কায় তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ৭ই এপ্রিল থেকে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। চেষ্টা করছি প্রতিটি ভোটারের কাছে যেতে। ঘুমের জন্য কয়েক ঘণ্টা বাদ দিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করছি যেন নাগরিকদের কথা আমি ভালমতো বুঝতে পারি। সবার সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে পারি। এখনকার পরিশ্রম নিজের জন্য। জয়ী হলে বাকি জীবন পরিশ্রম করবো মানুষের জন্য।

দুপুরে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকালে পল্লবীতে এক নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেন আনিসুল হক। এখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাহ। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ’র নেতা আবদুল্লাহ আল কাফী রতন গতকাল সকাল থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। সকাল ৯টা থেকে পল্লবী একালায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারণা চালান।

এ সময় কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন ও খান হাসানুজ্জামান মাসুমসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশন থেকে ‘হাতি’ প্রতীক বরাদ্দ পাবার পর পুনরায় পল্লবীতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। বিকাল তিনটায় আবদুল্লাহ আল কাফীর পক্ষে ভাটারায় সমাবেশ করে সিপিবি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে আবদুল্লাহ আল কাফী বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদও সকাল থেকেই নির্বাচনী প্রচার যুদ্ধে নেমে পড়েন। সকালে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এ সময় তিনি ও তার কর্মী-সমর্থকরা সেখানকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ও নির্বাচনে সমর্থন চান। বেলা ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ‘চরকা’ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর খিলক্ষেতে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি সেখানে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে শুক্রবার এজিবি কলোনি ও কমলাপুর এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হয়রানি করছেন বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন।

আফরোজা আব্বাস বলেন, মির্জা আব্বাসের পক্ষে নেতাকর্মীরা প্রচারণায় নামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে হয়রানি করছেন। এতে আমাদের প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন গতকাল বিকালে লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন গতকাল বংশাল আহলে হাদিস জামে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি নাজিরা বাজার, বিডিআর সিনেমা হল, গনকটুলী, বিডিআর ৫নং গেট, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ পার্ক এলাকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান ও আবাসিক এলাকায় মেয়র পদে সোফা প্রতীকের গণসংযোগ করেন।

এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। ঢাকা ও দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীদের তাদের পছন্দের প্রতীকের নাম দিতে বলা হয়। যেসব প্রতীকের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী থাকায় সেগুলো লটারির মাধ্যমে মনোনিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীদের একে অপরের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমেও প্রতীক বরাদ্দ নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল থেকেই দেখা যায় প্রার্থীদের ভিড়। শুরুতেই রিটার্নিং অফিসার তার নিকট প্রত্যেক প্রার্থীকে পছন্দের প্রতীকের নাম জমা দিতে বলেন। এক্ষত্রে একাধিক বিকল্প রাখারও সুযোগ দেয়া হয়। পরে যেসব প্রতীকের বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থীর নাম আসে তাদের লটারির মাধ্যমে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনসহ মোট ৭জন ইলিশ মাছ প্রতীক চেয়েছিলেন।

তখন সাঈদ খোকন অন্যদের উদ্দেশে বলেন, এটা আমার বাবার প্রতীক। এই প্রতীক নিয়ে আমার বাবা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটা আমার আবেগের প্রতীক। আপনারা যদি এই প্রতীক আমাকে ছেড়ে দেন তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। এরপর সবাই তাকে সমর্থন দিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ সাঈদ খোকনকে ইলিশ মাছ প্রতীক বরাদ্দ দেন। এদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসসহ মোট ৭ জন হাতি প্রতীক চান। ফলে মির্জা আব্বাসসহ বাকিদের প্রতীক চূড়ান্ত করতে লটারি হয়। লটারি শেষে হাতি প্রতীক না পাওয়ায় মগ প্রতীক নিয়েছেন মির্জা আব্বাস।

আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে কমিশনের অস্থায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এ সময় তাবিথ আউয়াল নিজে উপস্থিত থাকলেও আনিসুল হকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল চৌধুরী। টেবিল ঘড়ি আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়ালের পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকা লটারির মাধ্যমে প্রতীক চূড়ান্ত করেন রিটার্নিং অফিসার মো. শাহ আলম।

উত্তরের ১৬ মেয়র প্রার্থীর প্রতীক: বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল (বাস), আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক (টেবিল ঘড়ি), জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল (চরকা), বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী (ঈগল), মো. শামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ), এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (ক্রিকেট ব্যাট), কাজী মো. শহীদুল্লাহ (ইলিশ মাছ), মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাক্স), চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী (লাউ), মো. আনিসুজ্জামান খোকন (ডিস এন্টিনা), মো. জামান ভূঞা (টেবিল), শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই), শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (কমলা লেবু), সিপিবির সমর্থিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কাফী রতন (হাতি), জাসদ সমর্থিত প্রার্থী নাদের চৌধুরী (ময়ূর) ও গণসংহতির মো. জোনায়েদ আবদুর রহমান সাকি (টেলিস্কোপ)।

মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরেই সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সলর এবং পরে সাধারণ কাউন্সিলরদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ শেষে রিটার্নিং অফিসার মো. শাহ আলম প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আচরণ বিধি মেনে প্রচারণা চালাবেন। কেউ বিধি লঙ্ঘন করবেন না। যারা বিধি লঙ্ঘন করবেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আগামী ১২ই এপ্রিল খামার বাড়ির কেআইবি কমপ্লেক্সে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সব প্রার্থীকে নিয়ে মতবিনিময় করবেন। আপনারা সবাই যথাসময়ে উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকা দক্ষিণে ২০ মেয়র প্রার্থীর প্রতীক: বিএনপির মির্জা আব্বাস (মগ), আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. সাঈদ খোকন ইলিশ (মাছ)। জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন (সোফা), আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন (চরকা), এ এস এম আকরাম ক্রিকেট (ব্যাট), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আয়ুব হুসেন (ঈগল), এস এম আসাদুজ্জামান রিপন (কমলালেবু), দিলীপ ভদ্র (হাতি), সিপিবি-বাসদের প্রার্থী বজলুর রশীদ ফিরোজ (টেবিল), মশিউর রহমান (চিতাবাঘ), মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (লাউ), মো. আবদুর রহমান (ফ্লাক্স), মো. আবদুল খালেক (কেক), আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো. গোলাম মাওলা রনি (আংটি), মো. জাহিদুর রহমান (ল্যাপটপ), মো. বাহরানে সুলতান বাহার (শার্ট), মো. রেজাউল করিম চৌধুরী (টেবিল ঘড়ি), জাসদের মো. শহীদুল ইসলাম (বাস), মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী (ময়ূর) ও শাহীন খান (জাহাজ) প্রতীক পেয়েছেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024