শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত বাংলার টাইগাররা

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত বাংলার টাইগাররা

গ্যালারী থেকে ডেস্ক: ‘আপনারা আমাদের ভাল সময় যেমন সঙ্গে আছেন, তেমনি খারাপ সময়ও সঙ্গে ছিলেন। আপনারা পাশে আছেন বলেই আমরা এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আশা করি বাংলাদেশ ক্রিকেট যতদিন মাঠে খেলবে ততদিন আপনারাও আমাদের এইভাবে সমর্থন দিয়ে যাবেন।’- মানিক মিয়া এভিনিউতে হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা এভাবেই দর্শকদের ভালবাসার জবাব দেন গতকাল। দুপুর ১টা থেকেই টাইগারদের বিশ্বকাপে দারুণ সাফল্যের জন্য সংবর্ধনা দিতে ভিড় করতে শুরু করে হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমী।

বিসিবি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের জন্য দর্শকদের অপেক্ষার প্রহরটাও যেন শেষ হচ্ছিল না। সেই সময় মঞ্চে মাইলস গান পরিবেশন করলেও যেন মন ভরছিল না দর্শকদের। অবশেষে বিকাল ৫টায় তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। একে একে টাইগারেদের মঞ্চে ডাকতে শুরু করেন সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খান। প্রথমেই মঞ্চে ওঠেন শফিউল ইসলাম। এরপর আল আমিন হোসেন, ইমরুল কায়েস, তাইজুল ইসলাম, আরাফাত সানি, সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুল্লাহ রিয়াদ ও সর্বশেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ক্রিকেটাররা যখন একে একে মঞ্চে উঠছিলেন তখন পুরো মানিক মিয়া এভিনিউ করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ , বাংলাদেশ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সংসদ ভবনের চারপাশ। সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে সব পরিচালক। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত হন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও। তবে সাকিব আইপিএল খেলতে কলকাতায় ও সাব্বির রহমান রুম্মানের বাবা অসুস্থ থাকায় তারা আসতে পারেননি।

টাইগাররা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দিতে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন। প্রথমেই বাংলাদেশ স্কোরার ও আম্পয়ার এসোসিয়েশন ফুল তুলে দেয় মাশরাফির হাতে। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ সিকদার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সালমান এফ. রহমান, পুলিশ ও র্যাব’র প্রধানসহ বিভিন্ন সংগঠন। ফুলেল শুভেচ্ছা ও হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত মাশরাফি সেই সময় সকলকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাল খেলার কারণ হিসেবে প্র্যাকটিস ম্যাচগুলোকেই উল্লেখ করেন। মাশরাফি বলেন, ‘বিশ্বকাপ শুরুর ৩ সপ্তাহ আগে আমরা প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যেখানে আমরা ৪টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। সবগুলো ম্যাচ হারলেও আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভাল ছিল। এই প্র্যাকটিসের সুযোগটা পেয়েছিলাম তাই আমরা ভাল খেলতে পেরেছি বলে আমাদের বিশ্বাস।’ এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ফোন করে প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস যোগানোর কথাও উল্লেখ করেন টাইগার দলপতি।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শুধু যে ম্যাচগুলো জিতেছি তখন না, যেগুলো হেরেছি তারপরও তিনি আমাদের প্রত্যেক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি ক্রিকেটের বড় একজন ফ্যান। আশা করি এভাবেই তিনি সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে পরবর্তী সিরিজগুলোতে ভাল করা ও দশর্কদের আশা পূরণ করার বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এ বছর আমাদের অনেকগুলো সিরিজ আছে। আমরা পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে শুরু করছি। ১৭ তারিখ ওয়ানডে দিয়েই আমাদের পাকিস্তান সিরিজ শুরু হবে। আপনারা যেভাবে আমাদের সঙ্গে থেকে সাহস যুগিয়েছেন আশা করছি এই সিরিজেও আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকে সাহস জোগাবেন। আমরা আপনাদের ভাল সময় দেয়ার চেষ্টা করবো। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

‘ভারতকে মাঠেই জবাব দিবে বাংলাদেশ’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের কথাই যেন বললেন গতকাল মানিক মিয়া এভিনিউর টাইগারদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। দর্শকরা ভারত-বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে কিছু জানতে চাইছিলেন। তারই জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি আপনারা কি শুনতে চাইছেন। আমি একে একে বলছি। আমাদের এই সাফল্যে অন্যতম দাবিদার আগে মাঠের ক্রিকেটাররা। তারপর টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ হাথুরুসিংহে ছাড়াও বোলিং কোচ ও ফিল্ডিং কোচরা। আমাদের দলের প্রত্যেক ক্রিকেটার সেখানে যা করেছে তা বলার মতো নয়। আমি এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। যখন চারটি প্রস্ততি ম্যাচ হেরে গেলাম তখন আরও বেশি ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন অধিনায়ক মাশরাফি আমাকে ফোন করে বলে যে আপনি চলে আসেন আমরা জিতবো বিশ্বাস রাখেন। কোচ হাথুরুসিংহেও একই কথা বলেন। তখন আমি সাহস পাই। দলের তরুণ সদস্য সাব্বির ও সৌম্যতো বড় বড় বোলারদের তুলোধুনো করেছে। তাসকিন মাত্র এক বছর হলো দলে এসেছে সে ৯টি উইকেট নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। সাকিব ৮টি উইকেট নিয়েছে। মুশফিক আমাদের ব্যাটিং স্তম্ভ। সে প্রথম দু’টি ম্যাচে আমাদের জয়ের মূল কাণ্ডারী। মাশরাফির কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর রুবেল সে তো ৮টি নয় আমার মনে হয় ৮০টি উইকেট নিয়েছে। তার পরপর সেই দুটি উইকেট আমাদের কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্নপূরণ করে। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আমাদের বিশ্বকাপে শুধু প্রথম সেঞ্চুরিই উপহার দেয়নি। পর পর দুটি সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে। আমি সকলকে শুভ কামানা জানাই।’

এছাড়াও কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদে আরও দূরে যাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু হয়নি। কিন্তু আমরা ক্রিকেটকে ভালবাসি তাই ক্রিকেটীয় ভাষাতে জবাব দেবো। সামনে আমাদের দেশে ভারত আসছে। অন্যান্য বড় বড় দেশ আসছে। আমি চাই আমাদের ছেলেরা বিশ্বকাপে যা খেলেছে তার চেয়েও বেশি ভাল খেলে তাদের জবাব দেবে। আমরা মাঠেই খেলার মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। যেন কেউ আমাদের আর অবহেলা বরতে না পারে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024