জাফর আহমেদ: বাংলাদেশের রেল খাতের উন্নয়নে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে চায় চীন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনের শার্জ দ্য অ্যফেয়ার্স কিউ গুয়ান ঝু রেলের উন্নয়নে সহযোগিতার এই প্রস্তাব দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে আসা ওই প্রস্তাবের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শশী কুমার সিংহকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান মশিউর রহমান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আট প্রকল্প বাচাই করছেন। শিগগির তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মতি নিয়ে ইআরডিতে পাঠানো হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আনুষ্ঠানিকভাবে চীন সরকারের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গঠিত কমিটি প্রায় দুই মাস ধরে বিচার বিশ্লেষণ করে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ ও ঢাকা চট্টগ্রাম ডাবল ট্র্যাক স্ট্যান্ডার্ড গেজসহ আটটি প্রকল্প বাচাই করেছে। এসব প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় ১২ বিলিয়ন ৬০ কোটি ডলার বা ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে রেল পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন প্রয়োজন।
এ জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন থাকায় চীনের এই ঋণ প্রস্তাব গ্রহণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তবে ইআরডির ঊর্ধতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চীনের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীনা প্রতিনিধিকে সুদের হার কমানো এবং ঋণ পরিশোধের রেয়াতকাল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তারা।
রেল খাতের উন্নয়নে ভারতের ১০০ কোটি ডলারের সহজ শর্তের ঋণে ১৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি আটটির কাজ চলছে।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, চীনা ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেদেশের কোম্পানির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার ছাড়াই কাজ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পণ্যের বা মজুরির বেশি মূল্য ধরা হলেও তা সংশোধনের সুযোগ নেই। চীন বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়ে থাকে, তার গড় সুদ হার ২ শতাংশ আর ১৫ বছরে তা পরিশোধ করতে হয়।
চীনের প্রস্তাব পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বাছাই করা আট প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু রেল লাইন সংযোগ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)। এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ হাজার ৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল ট্র্যাক স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটিও চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে কমিটি। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা।
এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার হয়ে সরাসরি মিয়ানমার সীমান্ত ঘুনদুম পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এ তালিকায় আরও রয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ নির্মাণ প্রকল্প। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশনে সমান্তরাল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, যার ব্যয় ২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।
এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ীতে একটি আধুনিক রেলওয়ার্কশপ নির্মাণ প্রকল্প এবং ২ হাজার ৬৭ কোটি টাকায় ৩০ সেট বিজি ডেমু ও ২০০ বিজি কোচ সংগ্রহ প্রকল্পও প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে