দুনিয়া জুড়ে ডেস্ক: ঢাকা সফররত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েনডি শেরম্যান বলেছেন, সকল দলের অংশগ্রহণে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকা ওয়াশিংটন দ্বিতীয় অংশীদারিত্ব সংলাপে যোগ দিতে দু’দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যে কোন নাগরিকের প্রতিবাদ ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার জনগণের এ অধিকার নিশ্চিতভাবে চর্চার সুযোগ দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, অবশ্য সহিংসতাকে কেউই পছন্দ করে না। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সফরে আসা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংলাপ আয়োজন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে গেছেন। ওবামা প্রশাসনের বৈদেশিক সম্পর্ক দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক ওয়েনডি’র কণ্ঠেও ছিল একই প্রতিধ্বনি। সফরের প্রথম দিনে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা বহাল রাখা এবং দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা টিকফা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শেরম্যান সরাসরি কোন জবাব দেননি। বলেন, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ওয়েনডি সাভারের রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশন্স-এ অগ্নিকাণ্ডে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
কর্মসূচি অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র দপ্তরে মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বের হওয়ার মুহূর্তে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন জানাতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অথনৈতিকভাবে অগ্রসরমান। দেশটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা খুঁজতে গতকাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় অংশীদারিত্ব সংলাপ শুরু হয়েছে। সকাল ৯টায় সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র দপ্তরে দু’দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে দু’দিনের সংলাপ শুরু হয়। দিনভর তিনটি প্লিনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশন হয় ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের। সেখানে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ দেশের তৈরী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পের শ্রমমান পর্যালোচনা, শ্রম আইনের সংশোধনী এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
‘ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গভার্নেন্স গ্রুপ-এর আলোচনায় বিভিন্ন খাতে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা, নারী উন্নয়ন, নন ট্র্যাডিশনাল নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র নিরাপত্তা ও অভিবাসন ইত্যাদি। সিকিউরিটি কো-অপারেশন গ্রুপের আলোচনার এজেন্ডায় ছিল চলমান সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার সমন্বিত উদ্যোগে সহযোগিতা, নিরাপত্তা সহায়তা, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো।
প্রথম দিনের তিন প্লিনারি সেশনের আলোচনার ওপর পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে আজ। আজকের আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েনডি শেরম্যান নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। সেখানে উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোচনা ছাড়াও বৃহত্তর পরিসরে দু’দেশের সম্পর্ক, আঞ্চলিক যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার চলমান কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন দুই প্রতিনিধি দলের প্রধান।
Leave a Reply