মোহাম্মদ আল-আমীন: কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে মরুভূমির দেশ সৌদিআরব। আর সেই এগিয়ে যাওয়ায় সহায়ক ভুমিকা পালন করছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অল্প দিনের মধ্যে কৃষি কাজের জন্য সৌদিআরব বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে। আর সেই শ্রমিকরা সৌদিআরবে কৃষি বিপ্লব ঘটাবে বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে তার নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। গোলাম মসিহ বুধবার (২২ এপ্রিল) রাজকীয় ইয়ামামা প্যালেসে সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের কাছে তার পরিচয় পেশ করার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গৃহশ্রমিক, বাগানের মালি, ড্রাইভারসহ ১২টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি শ্রমিক আমদানীর প্রক্রিয়া চলছে। সৌদি আরবে কৃষি শ্রমিক আমদানী আমার দ্বিতীয় টার্গেট। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে দক্ষ (প্রফেশনাল) জনশক্তি নিয়োগের ব্যাপারে কাজ করছে দূতাবাস।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের কৃষি সমিতির সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। তারা বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং কৃষি সমিতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক আনার ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানাবেন। আর এই খাতে অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি এখানে আসার পর এ পর্যন্ত ৫/৬ জন সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা সবাই বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ভালো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে বাংলাদেশ থেকে ২১৫মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানী করে সৌদি আরব। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে এর পরিমাণ ১বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। গতমাসে সৌদি আরবে সফর করা বাংলাদেশের বানিজ্যমন্ত্রী দুদেশের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে রাষ্ট্রদূতকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলেও জানান গোলাম মসিহ। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক, সবজি আমদানী হচ্ছে সামনে এর পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দূতাবাস।
তিনি বলেন, এসএমই খাতে সৌদি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছি এবং সৌদি সরকার এইখাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ সৌদি আরবের চেম্বার স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে প্রতি বছর সাব কন্টান্টিং এবং সেবা মুলক খাতে ৮০বিলিয়ন ডলারের কাজ হয়, যার সিংহভাগ করে পাকিস্তান, ভারত এবং লেবানন। এই খাতে বাংলাদেশি কোম্পানীগুলোকে সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা থাকবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি সরকার নাম মাত্র শোধে বাংলাদেশকে ইউরিয়া সার, অপরিশোধিত তেল, বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল, বার্ণ ইউনিট এবং মাদ্রাসাগুলোতে আরবী শিক্ষার জন্য বিনিয়োগের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিশেষভাবে কিছু কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো কফিল (স্পন্সর) প্রথার বিলুপ্তির ব্যাপারে চেষ্টা করা। ইতিমধ্যে আমরা সৌদি আরাবিয়ান জেনারেল ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি (সাগিয়া)র সঙ্গে বৈঠক করেছি। কফিল প্রথা বাদ দিয়ে কিভাবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদেরকে ইনভেষ্টর হিসাবে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় এই বিষয়ে কাজ চলছে।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)র ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, ২৪ নভেম্বর ২০১৫ সালের মধ্যে সবাইকে এমআরপি দিতে সরকার বদ্ধ পরিকর। আর সেই লক্ষে বর্তমানে দূতাবাসের কর্মকর্তারা সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দূতাবাস এবং কনস্যুলেট অফিসের পাশপাশি কোম্পানীগুলোর ক্যাম্পে মোবাইল ইউনিট স্থাপন করে ওই কোম্পানীতে কর্মরত বাংলাদেশিদেরকে এমআরপি দেওয়া হবে। বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটি দিন (শুক্র, শনিবার) দূতাবাসের ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল টিম কাজ করছে। দূতাবাসের অনুরোধে সরকার ৫টি মোবাইল ইউনিট দিয়েছে এবং সামনে আরও ২০টি ইউনিট দেওয়ার কথা রয়েছে। আর এই ইউনিটগুলো চলে আসলে শুধু সাপ্তাহিক ছুটি নয় সপ্তাহের সাত দিনই সেখানে কাজ করবে মোবাইল টিম।
সৌদি আরবের বাংলাদেশি স্কুলগুলোর সমস্যার কথা তুলতেই রাষ্ট্রদূত বলেন, স্কুলই তো নাই সমস্যা আসবে কিভাবে? যেখানে স্কুলের লাইসেন্স নেই, বিল্ডিং নেই, শিক্ষক নেই সেখানে পরিচালনা পরিষদ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি ৭টি কমিউনিটি স্কুলের ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে একটি প্রোগ্রাম ড্র করা হয়েছে। স্কুলগুলোকে স্থায়ী করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৭টি স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রণয়ন হচ্ছে।h