শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ২,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫,০০০ মানুষ। প্রতি মুহূর্তে সেখানে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। এখনও কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আর কতো লাশ পাওয়া যাবে।
তবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি ও অনলাইন বিবিসি। ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্বের বহু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো নেপালকে উদ্ধার তৎপরতা, ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করার প্রস্তাব জানিয়েছে।
এদিকে মাউন্ট এভারেস্টে ভূমিকম্পে সৃষ্ট ব্যাপক তুষারধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। তুষারধসে এতো পর্বতারোহী নিহতের ঘটনা এটাই প্রথম। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়া প্রশিক্ষিত ব্যক্তি এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিহত ও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে বিরামহীন প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীরা খালি হাতেই চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকাজ। রাজধানী কাঠমান্ডুতেই নিহত হয়েছেন প্রায় ৮০০ মানুষ। প্রাচীন শহরের বেশ কিছু স্থানে বুলডোজার বা উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য ভারি যন্ত্রপাতি নেয়া সম্ভব হয়নি।
ফলে, হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই বিধস্ত ভবনে সুড়ঙ্গ তৈরি করে বের করে আনা হচ্ছে হতাহতদের। এক সেনা কর্মকর্তা সন্তোষ নেপাল স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে একটি ধসে পড়া তিন তলা ভবনে সুড়ঙ্গ তৈরি করে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি মানুষ এখনও ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছে। এ খ-চিত্রটি বাংলাদেশের সাভারে রানা প্লাজা ধসের কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে নেপালের রাজধানী কাঠমা-ু ও পোখারা শহরের মধ্যবর্তী স্থানে। প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর ৬ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর আরও বেশ কয়েকবার ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আজও সেখানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। স্বজন-হারানোদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে নেপালের আকাশ-বাতাস। নেপাল ছাড়িয়ে ভূমিকম্পটি জোরালোভাবে অনুভূত হয় ভারত বাংলাদেশ ও চীনের তিব্বত অঞ্চলে। ভারতে ৪১ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
১৯৩৪ সালের পর নেপালে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। সেবারের ভূমিকম্পের তীব্রতা এতোই বেশি ছিল যে, তখনকার স্বল্প জনবসতিপূর্ণ দেশটিতেও প্রায় ৮,৫০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।