শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ভোটবিহীন নির্বাচনের অভিযোগ এনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও দলের সমর্থিত প্রার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এ ঘোষণা দেন। এর কিছুক্ষণ আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় বিএনপি ও দলের সমর্থিত প্রার্থীরা।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামেও নির্বাচন থেকে আমরা সরে এসেছি। এই নির্বাচন কোনো নির্বাচন হয়নি। কী হয়েছে, আপনারা সবাই জানেন। তিনি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ব্যালটবাক্স দখল, ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। মওদুদ আহমদ বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই চিরকুট থাকলে তাদের ভোট দিতে যেতে দেওয়া হচ্ছে। না থাকলে ভোট দিতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোটও পড়েনি বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে এমাজউদ্দিন আহমেদ ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ভোট দিতে দেওয়া হয়। কিন্তু ভোট দেওয়ার পরে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কেন ভোট দিতে এসেছেন? আপনার ভোট দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।’ এ সময় এমাজউদ্দিন আহমেদের গাড়িতে কিল-ঘুষি মারা হয়।
মওদুদ আহমদ বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবার প্রমাণ হলো, এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নেই। সুষ্ঠু তো দূরের কথা, নির্বাচন একেবারে অর্থহীন করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও র্যাব মিলে সরকারের ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী, পোলিং এজেন্টদের নির্যাতন করে বের করে দিয়েছে। কোনো ভোটকেন্দ্রেই বিএনপির এজেন্টরা দাঁড়াতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের অবস্থা তুলে ধরেন মওদুদ। প্রায় সব জায়গায় ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মওকুফ।
সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদের দুই পাশে ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে মেয়র পদপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
দক্ষিণে মেয়র পদপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, সকাল থেকে তিনি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরেছেন। এসব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৯৯ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। এসব জায়গায় সরকারদলীয় লোকেরা ব্যালটবাক্স ভরেছে। যারা আসল ভোটার তারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভোট দিতে যাননি। ভোট ডাকাতি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উত্তরে মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, সকাল থেকে তিনি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘুরেছেন। বেশির ভাগ কেন্দ্রের বাইরে কোনো পুলিশ ছিল না। সরকার দলীয় লোকজনই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করে। কারা ঢুকবে আর কারা ঢুকবে না, তা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
তাবিথ বলেন, তেজগাঁওয়ের একটি কেন্দ্রে যেতে তাকে বাধা দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, মিরপুর ৬ নম্বরের একটি কেন্দ্রে পুলিশের পোশাকে যারা ছিল, তাদের ব্যাজ ছিল না। ব্যাজ কেন নেই, জানতে চাইলে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিরা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। ওই এলাকার আরেকটি কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে একটি ব্যালটবাক্স খোলা দেখতে পান বলেও অভিযোগ করেন তাবিথ। ব্যালটবাক্সটি কেন খোলা, জানতে চাইলে পুলিশ কোনো উত্তর দেয়নি বলে তিনি জানান।