শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১

৪টা মে ক্যালেন্ডারের পাতায় এক অবিস্মরনীয় দিন: বর্ণবাদ বিরুধী আন্দোলন ও বৃটেনের এ্যাথনিক কমিউনিটি

৪টা মে ক্যালেন্ডারের পাতায় এক অবিস্মরনীয় দিন: বর্ণবাদ বিরুধী আন্দোলন ও বৃটেনের এ্যাথনিক কমিউনিটি

ব্রিটিশ বাঙ্গালীদের জন্যে ক্যালেন্ডারের পাতায় ৪টা মে এক অবিস্মরনীয দিন, বিশেষ করে ইষ্টলন্ডনের বাঙ্গালীদের জন্যে। ১৯৭৮ সালের ৪টা মে বর্ণবাদীদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হন বাঙ্গালী গার্মেন্টস শ্রমিক আলতাব আলী। এর পর থেকে আমরা এ্ই দিনটিকে আলতাব আলী দিবস হিসেবে পালন করে আসছি।

এই দিনে জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে আমারা সমবেত হই উগ্রবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। মানবতায় উগ্রবাদ ও বর্ণবাদের স্থান না থাকলেও যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এজাতীয় উগ্রবাদ বর্ণবাদের আবির্ভাব ঘটেছে, তার পরেও তারা বেশী টিকে থাকতে পারেনি। কারণ মানবতা উগ্রবাদ বর্ণবাদকে সমর্থন করেনা।

বৃটেনে এক সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বর্ণবাদের এখনও যে বর্ণবাদ নেই তা নয়, তবে এরা আর আগের মতো সক্রিয় নয় । সম্মিলিত প্রতিরোধের কারণে বর্ণবাদীরা ইষ্টলন্ডন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই এই দিনের শপথ হউক আসুন আমরা সবাই মিলে বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। ১৯৩০ সালে এই বৃটেনে কালো সার্ট বর্ণবাদীদের উত্থান ঘটেছিল ইহুদীদের বিরুদ্ধে, তখনও বর্ণবাদ বিরুধীরা রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিনে।

১৯৩৬ সালে বর্ণবাদী নেতা ওজওয়াল্ড মজলির নেতৃত্বে ঘোষনা দেয়া হয় তারা ইষ্ট লন্ডনে এসে ইহুদীদের আক্রমন করবে, তৎকালীন মাইগ্রেন্ট ইহুদী সম্প্রদায় স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে নিয়ে ক্যাবল ষ্টীটে বর্ণবাদীদের প্রতিহত করতে সমাবেশের আয়োজন করে, ১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর ঘোষনা দিয়ে বর্ণবাদীরা আসলেও পুলিশ এবং বর্ণবাদ বিরুধীদের প্রতিরোধের কারণে এগুতে পারেনি, ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

এ-তো গেল ১৯৩৬ সালের কথা। পরবর্তিতে এই এলাকায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বর্ণবাদ। বিশেষ করে বর্ণবাদী ন্যাশনালফন্ট ও স্কীন হ্যাডের টার্গেটে পরিণত হয় পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গালী কমিউনিটি। আর এদের উসকে দেওয়ার পেছনে বর্ণবাদী কিছ‚ সংখ্যক রাজনীতিকের ইন্দন ছিল। ১৯৭৫/৭৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০/৯০ সাল পর্যন্ত পূর্বলন্ডনের বাঙ্গালী কমিউনিটিকে রীতিমতো যুদ্ধ করে ঠিকে থাকতে হয়েছে।

এসময় বর্ণবাদীরা বাঙ্গালীদের দেখলেই গালি দিতো, গায়ে থু থু ফেলতো, ঘরে ঢিল ছুড়তো, বাঙ্গালীদের দরজায় ময়লা রেখে চলে যেত । এমনটি ছিল বর্ণবাদীদের নিত্য দিনের আচরণ। ১৯৭৮ সালের ৪মে হোয়াইট চ্যাপল হাইষ্ট্রীটের নিকটবর্তী এলডার ষ্ট্রীটে বর্ণবাদীদের হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরন করেন ২৫বছর বয়সী টেইলারিং ফেক্টরীতে কর্মরত বাঙ্গালী আলতাব আলী, এদিন ছিল স্থানীয় ইলেকশন। এই নির্বাচনে বর্ণবাদীদের ৪জনেরও উপরে প্রার্থী ছিল। আলতাব আলী কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরার পথে বর্ণবাদীদের হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরন করলে, বাঙ্গালী কমিউনিটি সংঘবদ্ধ ভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, বাঙ্গালীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বর্ণবাদবিরুধী ইংরেজ সহ অন্যান্য মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি।

এই সময়ের ভেতরে বর্ণবাদী হামলার শিকার হতে হয়েছে শত শত বাঙ্গালীকে, শুধু বাঙ্গালী নয় ভারতীয় পাকিস্তানী এবং কালোদেরও বর্ণবাদী হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ একা সাহস করে রাস্তায় বের হতোনা, ভয় ছিল কখন কার উপর বর্ণবাদীরা ঝাপিয়ে পড়ে, কেউ বের হতে হলে দল বেধে ঘর থেকে বের হতেন, সন্ধ্যার পরে কেউ একা বেরুতেন না। ব্রিকলেন ছিল বর্ণবাদীদের আক্রমনের টার্গেট তখনকার সময় যারা তরুন ছিলেন তাদের রীতিমতো রাতে ব্রিকলেনকে পাহারা দিতে হতো।

আলতাব আলী ছাড়াও এই সময়কার ভেতর হ্যাকনী এলাকায় ৫০ বছর বয়সী ইসহাক আলী নামের আরেক বাঙ্গালীকে বর্ণবাদীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসময় বর্ণবাদ প্রতিরোধে ন্যাশনাল ফন্টের বিরুদ্ধে কয়েকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো এ্যাকশন কমিটি এ্যাগেইনষ্ট রেসিয়াল এটাকস, এশিয়ান কমিউনিটি ট্রেইড কাউন্সিল উল্লেখ যোগ্য। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে ১৪ মে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে এসে ১০হাজার মানুষ সমবেত হন ব্রিকলেনের আলতাব আলী পার্কে এখান থেকে এসব সংগঠনের নেতৃত্বে দশহাজার মানুষের বর্ণবাদ বিরুধী র্যালী নিয়ে যান দশ নাম্বার ডাউনিং ষ্টীটে।

বাঙ্গালীদের এসময়কার শ্লোগাগ ছিল। ‘‘সেল্ফ ডিফেন্স নো অফেন্স’’ (আত্মরক্ষা অপরাধ নয়), ‘‘বøাক এন্ড হোয়াই ইউনাইট এন্ড ফাইট’’, (সাদা কালো এক হও প্রতিরোধ করো), এন্ড, হু কিল আলতাব আলী ? রেসিজম! রেসিজম! ( কে আলতাব আলীকে হত্যা করেছে? বর্ণবাদ! বর্ণবাদ!)।

ন্যাশনাল ফন্ট স্কীন হ্যাডরা ইষ্ট লন্ডন থেকে বিতারিত হলেও নতুন করে আবারও গজিয়ে উঠেছে ইংশিল ডিফেন্স লীগ বা ইডিএল। এর সাথে পূর্ব লন্ডনে নতুন আতংক যোগ হয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ। মানবতা উগ্রবাদ বর্ণবাদ কোনটাই সমর্থন করেনা। এরা মানবতার শত্র আসুন সবাই মিলে রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। জয় হোক মানবতার নিপত যাক উগ্রবাদ বর্ণবাদ।

লেখক: মতিয়ার চৌধুরী, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024