নিউজ ডেস্ক: ব্রিটিশ মালটিক্যালচারাল সোসাইটিতে উগ্রবাদ বর্ণবাদের স্থান নেই, আসুন সবাই মিলে রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। কেননা মানবতা উগ্রবাদ বর্ণবাদকে সমর্থন করেনা। গতকাল ৪মে লন্ডন সময় বিকেল পাঁচ ঘটিকায় ইষ্টলন্ডনের আলতাব আলীপার্কের শহীদ মিনার চত্তরে আলতাব আলী ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৩৭তম আলতাব আলী দিবসের সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন যুগে যুগে বৃটেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদ বর্ণবাদের আবির্ভাব ঘটেছে সব সময়ই তারা মানবতার কাছে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ৪টা মে ইষ্টলন্ডনে বর্ণবাদীদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হন বাঙ্গালী গার্মেন্টস শ্রমিক আলতাব আলী। এর পর থেকে ব্রিটিশ বাঙ্গালীরা এ্ই দিনটিকে আলতাব আলী দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এই দিনে জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমবেত হন উগ্রবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।
আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ার বর্ণবাদ রিরুধী আন্দোলনের নেতা সাবেক ডেপুটি মেয়র আকিকুর রহমান আকিকের সভাপতিত্বে ও বর্ণবাদ বিরুধী নেতা সাবেক কাউন্সিলার নুরুদ্দিন আহমদের স ালনায় অনুষ্ঠিত আলতাব আলী দিবসের আলোচনায় সভায় তৎকালীন বর্ণবাদ বিরুধী আন্দোলন কারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট রিচার্ড হোম, হ্যাকনী ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট গেøইন রেইস, ক্লার্ক মারফি, সাবেক কাউন্সিলার রিচার্ড মেক্সওয়েল, মাইক হ্যালেন, সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমার চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার আব্দুল মুকিত চুনু এমবিই, সাবেক কাউন্সিলার রাজন উদ্দিন জালাল, সাবেক কাউন্সিলার নূরুল হক, মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, স্বাধীনতা ট্রাষ্টের চেয়ার জুলি বেগম।
তৎকালীন বর্ণবাদ বিরুধী এক্টিভিষ্ট ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন গ্রেটার লন্ডন এসেম্বলী মেম্বার মোরাদ কোরেশী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। যে স্থানটিতে আলতাব আলী বর্ণবাদীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন পরবর্তিতে আন্দোলন কারীদের প্রচেষ্টায় এই স্থানটির নামকরন করা হয় আলতাব আলী পার্ক এবং এখানেই নির্মান করা হয় বাঙ্গালীর চেতনার স্মারক শহীদ মিনার। বৃটেনে এক সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বর্ণবাদের এখনও যে বর্ণবাদ নেই তা নয়, তবে এরা আর আগের মতো সক্রিয় নয় ।
সম্মিলিত প্রতিরোধের কারণে বর্ণবাদীরা ইষ্টলন্ডন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তারও আগে ১৯৩০ সালে এই বৃটেনে কালো সার্ট বর্ণবাদীদের উত্থান ঘটেছিল ইহুদীদের বিরুদ্ধে। তখনও বর্ণবাদ বিরুধীরা রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিনে। ১৯৩৬ সালে বর্ণবাদী নেতা ওজওয়াল্ড মজলির নেতৃত্বে ঘোষনা দেয়া হয় তারা ইষ্ট লন্ডনে এসে ইহুদীদের আক্রমন করবে, তৎকালীন মাইগ্রেন্ট ইহুদী সম্প্রদায় স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে নিয়ে ক্যাবল ষ্টীটে বর্ণবাদীদের প্রতিহত করতে সমাবেশের আয়োজন করে, ১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর ঘোষনা দিয়ে বর্ণবাদীরা আসলেও পুলিশ এবং বর্ণবাদ বিরুধীদের প্রতিরোধের কারণে এগুতে পারেনি, ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এ-তো গেল ১৯৩৬ সালের কথা।
পরবর্তিতে এই এলাকায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বর্ণবাদ। বিশেষ করে বর্ণবাদী ন্যাশনালফন্ট ও স্কীন হ্যাডের টার্গেটে পরিণত হয় পূর্ব লন্ডনের মাইগ্রেন্ট বাঙ্গালী কমিউনিটি। ১৯৭৫/৭৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০/৯০ সাল পর্যন্ত পূর্বলন্ডনের বাঙ্গালী কমিউনিটিকে রীতিমতো যুদ্ধ করে ঠিকে থাকতে হয়েছে। বাঙ্গালী কমিউনিটি সংঘবদ্ধ ভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, বাঙ্গালীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বর্ণবাদবিরুধী ইংরেজ সহ অন্যান্য মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি। শুধু বাঙ্গালী নয় ভারতীয় পাকিস্তানী এবং কালোদেরও বর্ণবাদী হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ব্রিকলেন ছিল বর্ণবাদীদের আক্রমনের টার্গেট তখনকার সময় যারা তরুন ছিলেন তাদের রীতিমতো রাতে ব্রিকলেনকে পাহারা দিতে হতো।
আলতাব আলী ছাড়াও এই সময়কার ভেতর হ্যাকনী এলাকায় ৫০ বছর বয়সী ইসহাক আলী নামের আরেক বাঙ্গালীকে বর্ণবাদীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসময় বর্ণবাদ প্রতিরোধে ন্যাশনাল ফন্টের বিরুদ্ধে কয়েকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এ্যাকশন কমিটি এ্যাগেইনষ্ট রেসিয়াল এটাকস, এশিয়ান কমিউনিটি ট্রেইড কাউন্সিল। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে ১৪ মে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে এসে ১০হাজার মানুষ সমবেত হন ব্রিকলেনের আলতাব আলী পার্কে এখান থেকে এসব সংগঠনের নেতৃত্বে দশহাজার মানুষের বর্ণবাদ বিরুধী র্যালী নিয়ে যান দশ নাম্বার ডাউনিং ষ্টীটে। বাঙ্গালীদের এসময়কার শ্লোগাগ ছিল। ‘‘সেল্ফ ডিফেন্স নো অফেন্স’’ (আত্মরক্ষা অপরাধ নয়), ‘‘ব্ল্যাক এন্ড হোয়াই ইউনাইট এন্ড ফাইট’’, (সাদা কালো এক হও প্রতিরোধ করো), এন্ড, হু কিল আলতাব আলী ?
রেসিজম! রেসিজম! ( কে আলতাব আলীকে হত্যা করেছে? বর্ণবাদ! বর্ণবাদ!)। ন্যাশনাল ফন্ট স্কীন হ্যাডরা ইষ্টলন্ডন থেকে বিতারিত হলেও নতুন করে আবারও গজিয়ে উঠেছে ইংশিল ডিফেন্স লীগ বা ইডিএল। এর সাথে পূর্বলন্ডনে নতুন আতংক যোগ হয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ।