শীর্ষবিন্দু নিউজ: সময় যেন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এটা কোন সাধারণ জনগণের জন্য নয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের প্রার্থীদের বেলায় এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছ। বিশেষ করে দুই মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী তাদের নির্বাচনের অঙ্গিকারের ঝুড়ি কেবল ভারী করেই চলেছেন। দুজনই এ ক্ষেত্রে সমান তালে এগিয়ে রয়েছেন্।
নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই আউলিয়ার শহর সিলেটকে ‘আধ্যাত্মিক রাজধানী’ গড়ার অঙ্গীকার করলেন ১৪ দলের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। আর ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটকে পরিবর্তনের ‘পরিকল্পিত নগরী’ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন ভোটের মাঠে ভাসছে কামরানের ‘আধ্যাত্মিক নগরী’ ও আরিফের ‘পরিকল্পিত নগরী’র স্লোগান। আর নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে সিলেটের আপামর সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। এ নিয়েও জল্পনা কল্পনারও অন্ত নেই। দুই স্লোগানের সার্থকতাও নিয়ে অভিজ্ঞ মহলে আলোচনা চলছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত ও সম্মিলিত নাগরিক জোটের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। এ সময় আরিফ অভিযোগ করে বলেন, সিলেট নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়নি। এ নগরী পরিকল্পনামতো তৈরি হলে অনেক সমস্যা থাকতো না। এ কারণে তিনি সিলেট নগরীকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আর এ কারণে তিনি নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। গতকাল থেকে আরিফ ১৮ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
পরে তিনি নগরীর দরগাহ গেইট, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, আমি পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে সিলেট নগরীকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি নির্বাচিত হয়ে নগর ভবনকে একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই হবে তার প্রধান কাজ। এজন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সারাদিন গণসংযোগকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, ১৮ দলীয় জোটের সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক এম এ হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেট মহানগর বিএনিপর সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহরীয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের শামীম, মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর ডা. সায়েফ আহমদ, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর হাফিজ আবদুল হাই হারুন, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সুপরিকল্পিতভাবে সিলেট নগরীতে অসাম্প্রদায়িক ও আধ্যাত্মিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নগরবাসীর কাছে আনারস প্রতীকে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সমর্থিত নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি বলেন- আমি সকল কাজেই নগরবাসীর সহযোগিতা পেয়ে আসছি। বিগত নির্বাচনে কারাগারে থাকা অবস্থায় নগরবাসী বিশাল ব্যবধানে আমাকে বিজয়ী করেছেন। সর্বদা নগরবাসী আমার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছেন সেজন্য আজীবন আমি সিলেটবাসীর কাছে চিরঋণী। গতকাল দিনব্যাপী নগরীর বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার এলাকা, কুশিঘাট, পায়দাবাজার, টুলটিকর, মিরাপাড়া ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
কামরান জানান, সিলেট নগরীর পাড়া ও ওয়ার্ডভিত্তিক মৌলিক উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। নগরীর পানি ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান হয়েছে। যানজট আর আগের মতো নেই। এখন বাকি কেবল ফুটপাত মুক্ত করে নগরীকে সাজানো। অনেকেই অভিযোগ করেন সিলেটে কাজ হচ্ছে না। কিন্তু পাড়া ও মহল্লায় যে কাজ হয়েছে সে কাজের মাধ্যমে সিলেট নগরীতে উন্নয়নের ভিত রচিত হয়েছে। এখন নগরীকে সাজিয়ে তুললে সত্যিকারের আধ্যাত্মিক নগরীতে পরিণত হবে সিলেট।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সম্পর্কে কুৎসা রটনা করা রুচির কাজ নয় উল্লেখ্য করে কামরান বলেন, আমি কখনওই দুর্নীতি করিনি। যদি কারও কিছু বলার থাকলে সামনাসামনি এসে অভিযোগ করুন। নগরীর উন্নয়ন করেছি। নগরীর অধিবাসীরাই আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন। সারাদিনের গণসংযোগকালে বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজারের মোতোওয়ালি আতাউর রহমান খাদেম, বাদশা মিয়া, প্রিন্সিপাল মাওলানা নাসির উদ্দিন, নূরজাহান বেগম, মো. সানাওর, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন মতি চান, আব্দুর রব হাজারী, মুরাদ আহমদ মুরন, ১৪ দল ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply