শীর্ষবিন্দু নিউজ: আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই দুই মেয়র প্রার্থীর লড়াই কার্যত জাতীয় রাজনীতিতে দুই প্রধান জোটের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন কামরান মেয়র পদে গতবার সহজে পার হলেও এবার কোন্দল আপাত মিটিয়ে ফেলা বিএনপির প্রার্থী সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক চৌধুরী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে বলে নগরবাসী মনে করছেন।
বিগত সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। পরে উপ-নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট একটি আসন পুনরুদ্ধার করে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, উন্নয়নের কাজ যে তারা করে যাচ্ছেন, তার প্রতিফলন ভোটেও পড়েব। এম সাইফুর রহমানের মৃত্যু, ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানে অনেকটা অভিভাবকহীন সিলেট বিএনপি সিটি নির্বাচন নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।
প্রথমে বেশ কয়েকজন প্রার্থী হওয়ায় বিভক্তি দেখা দিলেও শেষে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমর্থন আরিফুল পাওয়ার পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান জামান। এরপর বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধভাবেই আরিফুলের পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। আর আরিফুল ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলছেন, পরিবর্তন আনতে হবে। আরিফুল হকের নির্বাচনী প্রচারে ফলাওভাবে তুলে ধরা হচ্ছে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নগরীর নানা উন্নয়নের কথা। আরিফুল ওই সময় সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন, ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’র চেয়ারম্যানও; যদিও তখন মেয়র ছিলেন বদরউদ্দিন কামরান।
তখন নগরীর ক্বীন ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধন, কয়েকটি ফোয়ারা স্থাপন, নগরীর রাস্তাঘাট প্রশস্তকরাসহ দৃশ্যমান উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন আরিফুল হক। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামরান বলেন, “আরিফুল যে সব উন্নয়ন করেছিলেন বলে এখন ভোটের সময় দাবি করছেন, তা ছিলো লোকদেখানো। তখন লুটপাটও হয়েছে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার প্রকল্প, ছয় তলাবিশিষ্ট বিনোদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, সুদৃশ্য নগর ভবন নির্মাণ, নদী তীরের সৌন্দযবর্ধনসহ চলমান নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি।
উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রাখতে তৃতীয়বারের মতো নগর ভবনে পাঠাতে ভোট চাইছেন কামরান। তার বিপরীতে আরিফুলের কথা- মিষ্টি কথাই তার মূলধন, নাগরিক কোনো সুবিধা দিতে পারেননি তিনি। তাই কাক্সিক্ষত উন্নয়নের জন্য মানুষ এবার পরিবর্তন চায়। তাই পরিবর্তনের স্লোগান নিয়েই আমি প্রার্থী হয়েছি। অতীতে উন্নয়নের প্রশ্নে নগরবাসীর সঙ্গে যেমন ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকতে চাই, বলেন বিএনপি নেতা। তবে আরিফুলের এই অভিযোগ মানতে নারাজ কামরান। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি,” বলেন তিনি।
কামরান ও আরিফুলের বাইরে সালাহ উদ্দিন রিমন নামে আরেকজনও রয়েছেন মেয়র পদের লড়াইয়ে। তবে আনারস প্রতীক নিয়ে বদরউদ্দিন কামরান ও টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে আরিফুল হকের মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন নগরবাসী। প্রার্থীরা যাই বলেন, নগরবাসী ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে চারটি প্রধান সমস্যার কথাই বিবেচনা করছেন।
১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাবস্থায়ই বদরউদ্দিন কামরান সিলেট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন হলে ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মহানগর সভাপতি এম এ হককে হারিয়ে মেয়র হন কামরান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারাগারে থেকেও নির্বাচিত হন তিনি। আরিফুল হক ১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর বিএনপিতে এসে ১৯৯২ সালে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
অন্যদিকে, ২০০৩ সালের প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফুল হক। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। প্রয়াত সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আরিফুল হকের নাম জরুরি অবস্থার সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের করা ‘দুর্নীতিবাজদের’ তালিকায় উঠেছিলো। সিলেট মহানগরীতে মোট ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬। আগামী ১৫ জুন ২৭টি ওয়ার্ডের ১২৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে।
দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামের পরও জলাবদ্ধতা, পানি সঙ্কট, যানজট ও ফুটপাত দখল- সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অধিকাংশ মানুষ। অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, মশার উৎপাত, পাড়া-মহল্লায় সড়ক বাতির সঙ্কট, সময়মতো ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, স্কুল-কলেজের সামনে বখাটে ও মাদকসেবীদের উৎপাত নাগরিকদের অন্যতম সমস্যা।
Leave a Reply