মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া: ব্রিটেন বলেছে, ভূমধ্যসাগর পার হয়ে যেসব অভিবাসী ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে তাদের ফিরে যেতে হবে। পুরো মহাদেশের মধ্যে অভিবাসীদের পুনর্বিন্যাসের যে পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এগোচ্ছে তা ভণ্ডুল করে দিতে পারে ব্রিটেনের এই অবস্থান।
এমন এক সময় ব্রিটেন তাদের এই অবস্থানের কথা জানাল যখন ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি জ্যঁ ক্লদ জাংকার অভিবাসীদের ব্যাপারে নতুন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে নজিরবিহীন সংখ্যক অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। ঝুঁকিপূর্ণ এ চেষ্টায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে ব্যাপক হারে।
এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো, আশ্রয়প্রার্থীদের ইইউয়ের ২৮টি দেশে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব। এ ক্ষেত্রে কোটা প্রথা রাখার কথাও বলা হয়। এ ছাড়া লিবীয় জলসীমায় ইউরোপে প্রবেশে আগ্রহী অভিবাসী নিয়ে পাচারকারীদের নৌকা রুখতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথাও এতে বলা হয়েছে।
তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, ‘এ ধরনের কোটা প্রথায় লন্ডন অংশ নেবে না। এই পদ্ধতি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের দিকে অভিবাসীদের আসাকে উৎসাহিত করবে।’ দ্য টাইমস পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে মে বলেন, ইইউয়ের উচ্চ প্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনি যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমি তার সঙ্গে একমত নই। তিনি বলেছেন, সমুদ্রে আটক করা কোনো অভিবাসীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো যাবে না।
মে আরো বলেন, ‘আমরা এমন কিছু করতে পারি না যেটাতে অভিবাসীরা এ ধরনের বিপজ্জনক ভ্রমণে উৎসাহিত হয়। একই সঙ্গে পাচারকারীদের বিষয়টিতে আগ্রহী করে তোলে। এ কারণেই ব্রিটেন কোনো বাধ্যতামূলক পুনর্বাসন বা স্থানান্তরের ব্যবস্থায় অংশ নেবে না।’ ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক ইইউয়ের সব আইন মানতে বাধ্য নয়। ইইউ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটেনের এই অবস্থান পুরো পরিকল্পনাকে ডুবিয়ে দিতে পারে।
টেরেসার এই অবস্থান নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ক্যামেরন ব্রিটেনের ইইউ-বিষয়ক গণভোট আয়োজনের আগে অভিবাসনসহ অন্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার করার কথা বলেছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান কোটা প্রথাকে ‘বিকৃত মস্তিষ্ক ও অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
গতকালই এ পরিকল্পনা ঘোষণার কথা ছিল। গত ১৮ মাসে পাঁচ হাজার অভিবাসী ইউরোপে ঢোকার চেষ্টার সময় উত্তাল সমুদ্রে নৌকাডুবিতে নিহত হয়। তাদের বেশির ভাগই গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরিয়ার নাগরিক। এ ধরনের অভিবাসীর মূল লক্ষ্যই হলো ইতালি, গ্রিস, সাইপ্রাস ও মাল্টা। অতিরিক্ত অভিবাসীর চাপ সামলাতে না পেরে এই দেশগুলো ইইউয়ের কাছে প্রতিকার চায়।
ইইউয়ের হিসাবে গত বছর ইইউয়ের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এক লাখ ৮৫ হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে। এর আগের বছরের তুলনায় এটি ৫০ শতাংশ বেশি।