শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের শরীর খুবই খারাপ বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি স্বামীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চান। কারন সেখানেই এর আগে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিকেলে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের শিলংয়ে সিভিল হাসপাতালে বিচারাধীন মামলার আসামিদের ওয়ার্ডে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পর গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা জানান হাসিনা আহমদ। সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাসিনা বলেন, ওনার শরীর খুবই খারাপ। একটানা দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। হাত-পা কাঁপতে থাকে। খুব দ্রুত তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার।’ তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিনের হৃদরোগের সমস্যা আছে। কিডনির সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করেছে।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করেন, ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সেখানে চিকিৎসার জন্য যায়। তাহলে তিনি স্বামীকে কেন তৃতীয় একটি দেশে নিতে চাচ্ছেন? উত্তরে হাসিনা আহমদ বলেন, গত ২০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিনের সব চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হয়েছে। হৃদরোগের জন্য তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। রিং পরানো হয়েছে। কিডনির চিকিৎসাও সিঙ্গাপুরেই হচ্ছে। তাই সেখানেই স্বামীকে নিয়ে যেতে চান। তৃতীয় দেশ বলতে তাঁরা সিঙ্গাপুরকেই বোঝাচ্ছেন।
সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন কি না—জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে জটিলতা আছে কি না, বুঝতে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। অপরাধ-বিষয়ক আইনজীবী এসপি মাহান্ত ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁর কার্যালয়ে কনিষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে মাহান্তর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। তখন এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন বলে জানান। দ্বিতীয় দিনে স্বামীর সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, পারিবারিক বিষয় ও বাচ্চাদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোয় দেরি হতে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল মেঘালয়ের ইংরেজি দৈনিক শিলং টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মেঘালয় পুলিশ চাইছে সালাহ উদ্দিনকে ফেরত পাঠাতে আইনি প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ হোক। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সালাহ উদ্দিনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করবে বিএসএফ।
তবে বিএসএফ গত রোববার জানায়, সালাহ উদ্দিনের ফেরতের বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান রাজীব মেহতার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরই ভারতীয় পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করতে পারে।
শিলং সিভিল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামী গণমাধ্যমকে বলেন, সালাহ উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার ব্যাপারে আজ কোনো মেডিকেল বোর্ড বসছে না। তিনি বলেন, গতকাল করা সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট তিনি পেয়েছেন। এতে সালাহ উদ্দিনের স্বাস্থ্যগত কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ ছাড়া তাঁর চর্মরোগের সমস্যা আছে। সেটি আরেকটু খতিয়ে দেখা হবে। সব পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তাঁরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার আগে দুপুরে শিলংয়ের লাশুমের এলাকায় অপরাধ-বিষয়ক আইনজীবী এসপি মাহান্তর কার্যালয়ে যান হাসিনা। এসপি মাহান্ত এ সময় আদালতে থাকায় হাসিনা তাঁর কনিষ্ঠ সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
গতকাল রাতে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত সিভিল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন হাসিনা। প্রায় আড়াই মাস পর সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর দেখা হলো। হাসিনা আহমদ স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত সিভিল হাসপাতালে স্বামীর ওয়ার্ডে ছিলেন।
গতকাল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। এ সময় সালাহ উদ্দিন বলেন, চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় তাঁকে শিলংয়ে নেওয়া হয়। তাঁর বক্তব্য শুনে শিলং পুলিশ তাঁকে মানসিক রোগী মনে করে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।