নিউজ ডেস্ক: নাম তার মো. বাদশা। পাবনা জেলার নয়নামতি এলাকায় জন্ম। বাবা ছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পড়াশোনা রাজানগর মজুমদার হাইস্কুলে। স্কুলে পড়াকালীনই তার অসাধারণ ক্রিকেট দক্ষতা পুরো জেলার মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। একসময় খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী রাজশাহী জেলায়ও। পাবনা ও পরবর্তী সময়ে রাজশাহীর হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন তিনি।
ছিলেন দাপুটে ওপেনার ও উইকেটরক্ষক। একসময় স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন চলে যান পড়াশোনা করতে। সেখান থেকে এমবিএ করেন। কিন্তু ভাগ্য তার সঙ্গে করে প্রতারণা। যে বাদশার অবস্থান আজ হতে পারত সমাজের অনেক উঁচু স্তরে, তিনি আজ রাজধানীতে রিকসা চালিয়ে জীবনধারণ করছেন।
লন্ডন থেকে ফিরে অর্থ-সম্পত্তির মালিকও হয়েছিলেন বাদশা। কিন্তু, নারীর মন বুঝতে পারেননি তিনি। যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, সেই স্ত্রী-ই প্রতারণা করেন তার সঙ্গে। সহায়-সম্পত্তি বাগিয়ে নিয়ে চলে যান তাকে ছেড়ে। প্রিয়তমা স্ত্রী ও কষ্টার্জিত ধন-সম্পত্তি হারিয়ে ক্রিকেটার বাদশা হয়ে যান পাগলপ্রায়। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। বছর দেড়েক আগে তাকে পাবনার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষে ভিক্ষা করতে দেখা যেত। এখন আর ভিক্ষা করেন না।
সম্প্রতি এই ক্রিকেটারকে রাজধানীর উত্তরায় রিকশা চালাতে দেখা গেছে। একজন তরুণ তার এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন। সেটা ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায় শুদ্ধ উচ্চারণে ব্রিটিশদের মতো ইংরেজি বলছেন বাদশা।
এ বিষয়ে রাজানগর মজুমদার হাইস্কুলের সাবেক ছাত্র মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমরা একই স্কুলে পড়তাম। বাদশা ভাই আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন। আমরা একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। দুর্দান্ত খেলতেন ভাই। স্কুলজীবন শেষে আমি পড়তে বগুড়া চলে যাই। এরপর ভাইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যে এলাকায় এলে কথা হতো। কিন্তু উনি বিদেশ যাওয়ার পর আর যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ ফেসবুকে উনার এই করুণ পরিস্থিতি দেখলাম।
বছর দেড়েক আগে তাকে পাবনার ভিক্ষা করতে দেখেছিলেন সাঁথিয়া উপজেলার আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বছর দেড়েক আগে বেড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজ শেষে তাকে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম। তখন তিনি সবাইকে বলছিলেন যে আমি একসময় ক্রিকেটার ছিলাম।
বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। ক্রিকেট থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে হাজারো ক্রিকেট ফ্যানপেইজ। আর এমন সময় একজন বাদশা ক্রিকেট ছেড়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রিকসার প্যাডেল ঘুরাচ্ছেন দেশের কেন্দ্রবিন্দুতে।