চান মিয়া: ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুরের লিচু উৎপাদন এবার প্রায় ৫০ভাগ কমেছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারনে এবারে লিচুর ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানাগেছে। ফলে গ্রামের লিচু বাগানের প্রায় এক হাজার পরিবারের মধ্যে হতাশার ছাঁপ লক্ষ্য করা গেছে। বিদ্যূৎ ও সড়ক যোগাযোগের উন্নতি না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে লিচুর ফলন রক্ষা ও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার লিচু চাষিরা।
২০১৪ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া ও সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি মহিবুর রহমান মানিক আশ্বাস দেন। এতে বিদ্যূৎ সংযোগের কাজ শুরু হলেও সড়ক সংস্কারে এখনো কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সরেজমিন প্রতিবেন তৈরিকালে জানা যায়, চলতি বছরের লিচু পরিপূষ্ট হবার আগেই শিলাবৃষ্টিতে শতকরা ৫০ভাগ লিচু ঝরে পড়েছে। ফলে লিচুর উৎপাদন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে নেমে এসেছে শতকরা প্রায় অর্ধেকে। এতে আর্থিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন এখানের লিচু চাষিরা। এর আগে লিচুর গাছগুলো দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে এবং লিচু পাকার পর বাদুড় জাতীয় পাখির উৎপাতেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা।
প্রতি বছরের বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের এ সময়টায় মানিকপুর গ্রামের মানুষ অন্যরকম এক উৎসব পালন করলেও এবারে এ চিত্র পূরোটাই ভিন্ন। কাংখিত লিচু উৎপাদন না হওয়ায় চাষীদের লিচু উৎসবের আনন্দে ভাটা পড়ে। বাদুর জাতীয় পাখির কারনে আরো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকায় লিচু পাকার আগেই অপেক্ষাকৃত কম মুল্যেই লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদকদের। প্রতি বছর স্থানীয় চৌমুহনি বাজারে সকালে দীর্ঘ লাইনে বসে লিচুর হাট। বছরের পর বছর ধরে লিচু উৎপাদন ও বাজারজাত করার উপর নির্ভর করে সহস্রাধিক পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
তৎকালিন জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী মানিকপুর গ্রামে তার কাচারী বাড়ির পাশে সৌখিনতাবসত ক’টি লিচুঁ চারা রোপন করেছিলেন। আজও দুটি লিচুগাছ কালের স্বাক্ষি হয়ে দাঁিড়য়ে আছে। এরই সূত্র ধরে মানিকপুর গ্রামে একটি দু’টি করে কয়েক শতাধিক লিচু গাছের জন্ম নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানিকপুরের লিচু চাষী, সিদ্দিকুর রহমান, জামাল উদ্দিন, আব্দুল হাই জানান, এ বছর প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমানে মুকুল আসে। কিন্তু তীব্র খরার কবলে পড়ে অধিকাংশ মুকুল ঝরে যায়। এরপরে ও বাগান মালিকরা বাম্পার ফলনের আশায় গাছে অধিক পরিচর্যা করে আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু অবশেষে কালবৈশাখী ঝড়ও শিলাবৃষ্টিতে গাছের অর্ধেক লিচু ঝরে পরে তাদের সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
এখানে মানিকপুর ছাড়াও স্থানীয় গোদাবাড়ি, কঁচুদাইড়, চাঁনপুর, বড়গল্ল, রাজারগাঁও, দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরা, লামাসানিয়া, লাস্তবেরগাঁও, পরমেশ্বরীপুর গ্রামেও লিচু চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ জানান, কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে লিচু চাষিদের। ইতিমধ্যেই লিচু চাষিদের মধ্যে উন্নত জাতের চায়না-বি জাতিয় লিচুর চারা বিতরন করা হয়েছে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যেই এগুলো লিচু ধরবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লিচু চাষিদের সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।