সেই ছোটকালের কথা, বয়স ৫-৬ বছর, খেলাধূলা করে সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটাই। এ পাড়া থেকে ওপাড়ায় দৌড়াদৌড়িই ছিল আমার কাজ। কিন্তু হঠাৎ এলাকায় ছেলেধরা লোকের আভির্ভাব, এতে সবার মাঝে আতঙ্ক। বিশেষ করে যাদের ছোট ছেলে ছিল তাদের তো দুশ্চিন্তায় এক রকম ঘুম হারাম। তখন আমাদেরকে একটু চোখে চোখে রাখা হতো, বাড়ির লোকজনের চোখের আড়াল হলেই খোঁজাখুজিঁ শুরু হয়ে যেতো।
ফলে আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ায় কঠিন। এছাড়া সম্ভবত: ১৯৭৯ কিংবা ৮০ সালের দিকের কথা। আমাদেরকে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করা হলো। আমরা দুইসহোদর স্কুলে আসা-যাওয়া করি। ক্লাশ ওয়ানে পড়ি, এসময় হঠাৎ এলাকায় ছেলে ধরালোকের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ।এতে আমাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় এক বছর পর আবার আমরা স্কুলে যাওয়া শুরু করি।
প্রসঙ্গত, ছোটকালে আমাদের থেকে বয়সে একটু বড়রা গল্প শোনাতো বড় বড় ব্রিজ কিংবা কালবার্ট হলে নাকি সেখানে মানুষের মাথা দিয়ে কাজ শুরু করতে হয়। এ জন্য ছেলেধরা লোকেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে দিলে মোটা অংকের টাকা পেতো। এছাড়া পাট চাষের মৌসুমে বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন পাটক্ষেতের পাট গাছ বড় হতো তখন আমরা সবচেয়ে বেশী আতঙ্কে থাকতাম।
কেননা, সবাই বলতো পাটক্ষেতে নাকি ছেলেধরা লোকেরা লুকিয়ে থেকে সুযোগ বুঝে ছেলেদের ধরতো।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এলাকায় ছেলেধরা ছালাওয়ার আতঙ্ক ছিল। জানিনা, এসব গুজব কতটা সত্য ছিল, তবে ওই সময় মাঝে মধ্যেই হঠাৎ করে ছোট ছেলেমেয়ে হারিয়ে যেত। এমন কি বড় মানুষও হারিয়ে যাওয়ার অনেক খবর শুনেছি। কিন্তু এখন আর ছেলেধরা কিংবা ছালাওয়ালার কথা শোনা যায় না। এখন তার রূপ পরিবর্তিত হয়ে সবখানেই মানবপাচারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এইতো গত কয়েক বছর আগেও শুধু ভারতে মানবপাচারের ঘটনার বেশী করে কথা শোনা যেত।
বিশেষ করে চাকুরির প্রলোভনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে সীমান্ত দিয়ে এসব মানুষ পাচার করতো একটি বিশেষ চক্র। আর সেখানে নিয়ে গিয়ে পতিতালয়ে কিংবা অন্য আরেকটি আন্তর্জাতিক চক্রের হাতে বিক্রি করে দিতো। স্মরণে আছে সেই নব্বইয়ের দশক থেকে রাজশাহী অঞ্চলে মানবপাচার নিয়ে কাজ করে আসছে সালিমা সারওয়ারের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসিডি। সংস্থাটি পাচারের হাত থেকে উদ্ধার করে অনেক নারী শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। ভারতের পতিতালয়ের অন্ধকার জীবন থেকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছে অনেককে স্বাভাবিক জীবনে।
কিন্তু এখন আর শুধু ভারতেই মানবপাচারের বিষয়টি সীমাবদ্ধ নেই। গত কয়েক বছর ধরে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের হাজার হাজার হতদরিদ্র মানুষকে মালয়েশিয়া, থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর, মধ্যপাচ্য ও ইউরোপে পাচার করে আসছে। বিশেষ করে সাগর পথে ট্রলারে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে মানবপাচারের বিষয়টি গত কয়েক বছর থেকে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে মাঝ সাগর থেকে শত শত লোক ধরাও পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের দুর্বলতায় ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এটা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে।
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে মানবপাচার বন্ধে আইন ও প্রশাসন-ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করার আহবান জানায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,বিশ্বের প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ পাচার হয়ে গিয়ে বিদেশে দাস হিসেবে জীবনযাপন করে। এসব মানুষের মাত্র ৪৭ হাজারকে চিহ্নিত করা গেছে। বাকিরা এখনো অমানবিক ও অন্ধকার জীবনযাপন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে ১৮৮টি দেশের মানবপাচার-সংক্রান্ত অবস্থান ও অগ্রগতির বর্ণনা দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় ওই বছরে প্রতিবেদনে মানবপাচারের ক্ষেত্রে অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশের অনেক পুরুষ, নারী ও শিশুকে পাচার করে জোর করে শ্রমে নিয়োগ ও যৌন ব্যবসায় লাগানো হয়।
বাংলাদেশের যেসব পুরুষ ও নারী স্বেচ্ছায় উপসাগরীয় দেশসমূহ, মালদ্বীপ, ইরাক, ইরান, লেবানন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে অবৈধভাবে যায়, তারা সেসব দেশে বিভিন্ন ধরনের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হয়। এসবের মধ্যে আছে কোনো একটি স্থানে থাকার বাধ্যকতা, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি।
এ ছাড়া অনেকে কারাবন্দী থাকেন বা অনেককে দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়। অথচ এসব শ্রমিক বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠনের (বায়রা) মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার আগে বায়রাকে অনেক অর্থ দিয়ে থাকে। কিন্তু অবৈধভাবে গিয়ে তারা কার্যত বিপদে পড়ে যায়।
ভারত ও পাকিস্তান হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার সময় অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার হন। দেশের ভেতরেও অনেক শিশু পাচার হয়ে গিয়ে যৌন ব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে বা কোনো স্থানে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করতে বাধ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশ এখনো কোনো লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও সরকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের অন্যতম পদক্ষেপ হলো মানবপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২ প্রণয়ন। তবে এ আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের জন্য লোকবলের অভাব ও কর্তৃপক্ষের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এদিকে কয়েক দিন থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে-পাচারকারী ও দালালদের খপ্পরে পড়ে আন্দামান সাগর, মালাক্কা প্রণালী এবং মাল্লাকায় উত্তাল সাগরে ভাসছে হাজার হাজার মানুষ। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড ও মালয়েশিয়ার সরকার তাদেরকে সীমান্তে ভিড়তে দিচ্ছে না। কখনো তীরে ভিড়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে জোরপূর্বক মধ্য সাগরের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আর অকূল সাগরে ভাসমান এই মানুষের সংখ্যাটা একেবারে কম নয়, আট থেকে দশ হাজার বলে জানা গেছে।
এরা সবাই বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলমান। বেচেঁ থাকার আকুতি জানিয়েও ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড ও মালয়েশিয়ার সরকারের মন গলাতে পারছে না, এসব বিপদে পড়া মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। যতদূর
জানা গেছে তাতে, খাবার ও পানীয়র অভাবে নিজেদের মূত্র পান করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন তারা। ফলে এসব মানুষের এখন বেঁচে থাকাটেই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের আহাজারিতে অথৈ সাগরের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার ঘুমিয়ে, বিশ্ববাসীও অজ্ঞাত কারণে নীরব। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এ বিষয়ে বিবৃতি-বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এরফলে সেখানে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এক বিংশ শতাব্দীর এই সভ্যতার যুগেও এভাবে উত্তাল সাগরের মাঝখানে মানুষ জীবন বাঁচার আহাজারি করছে, আমরা বিশ্ববাসী সবাই সিনেমা স্টাইলে নীরবে সেই দৃশ্য অবলোকন করছি, এ কেমন সভ্যতা! যেখানে হার মানিয়েছে মধ্যযুগীয় সভ্যতাকেও, হার মানিয়েছে আইয়্যামে জালিয়াতের রীতিনীতিকেও!
সেখানে মানবিক বিপর্যয় কতটা জটিল তা গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো থেকে সহজেই অনুমেয়। গত ১৪ মে বিবিসি ও এএফপির খবরে বলা হয়, নৌকায় করে মালয়েশিয়াগামী অভিবাসীরা আন্দামান সাগরে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এই অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তাঁরা এখন পড়েছেন মারাত্মক সংকটে। দুই মাস ধরে নৌকায় বাস করার পরও কোনো দেশের তীরেই ভিড়তে পারছেন না।
বিবিসি জানিয়েছে, দুর্দশা আর খাবারের অভাব এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এখন মূত্রও পান করতে হচ্ছে তাঁদের। এই মানুষদের অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা জনাথন হেড। জনাথনের ভাষ্যমতে, থাইল্যান্ড উপকূলের কাছে আন্দামান সাগরে মাছ ধরার একটি ট্রলারে প্রায় সাড়ে ৩০০ অভিবাসীকে এক সপ্তাহ ধরে খাবার ও পানীয়র অভাবে নিজেদের মূত্র পান করতে দেখেছেন তিনি। নারী, পুরুষ, শিশু সবাই সেখানে গাদাগাদি করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। এদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা মুসলমান।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, খাবারের অভাবে নৌকাটিতে অন্তত ১০ জন মানুষ মারা গেছে বলেও জানতে পেরেছেন তাদের প্রতিবেদক। নৌকায় অবস্থান করা মানুষরা জানান, প্রায় দুই মাস ধরে তাঁরা এই ট্রলারে বাস করছেন। কিছুদিন আগে নৌকার চালক এবং কর্মচারীরা ইঞ্জিন বিকল করে পালিয়ে গেলে তারা আরো বিপদে পড়ে যান।একটি ইঞ্জিনচালিত জলযানে করে ওই ট্রলারটির কাছে যান কয়েকজন সাংবাদিক। সে সময় খাবার ও পানি চেয়ে আকুতি জানাতে থাকেন ট্রলারের মানুষরা।
সাংবাদিকরা দেখতে পান, ট্রলারের লোকজন বোতলে ভরা নিজেদের মূত্র পান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের কাছে থাকা পানির বোতলগুলো ট্রলারটিতে ছুড়ে মারেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, এ সংখ্যা আট হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি হতে পারে।এসব নৌকার যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক নাগরিকও রয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমে খবর এসেছে খাবার নিয়ে দাঙ্গায় জড়িয়ে শত শত বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মাঝ সাগরে তলিয়ে মারা গেছে।সবমিলেই এখন সাগরে মানব সভ্যতা কাঁদছে, আর আমরা সবাই তা প্রত্যক্ষ করছি। তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে উদ্ধারে তৎপরতা নেই বললেই চলে।
প্রসঙ্গত, মানবপাচার ও অভিবাসী সমস্যাটা শুধু এখন এশিয়ার দেশগুলোর সমস্যা নয়। এটা ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর জন্য বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউরোপে অভিবাসীদের স্রোত ঠেকাতে জাতিসংঘের কাছে বলপ্রয়োগের ক্ষমতা চেয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি
সম্প্রতি এ আহ্বান জানান। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে ১৮০০-রও বেশি অভিবাসী নিহত হয়েছে। গতবছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা ২০ গুণ বেশি। এছাড়া জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এবছরই প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। এদের বেশির ভাগই সিরিয়া, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া এবং সোমালিয়ার সংঘাত এবং দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছিল।
আন্তর্জাতিক সম্মেলন: এদিকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মানব পাচার প্রকট আকার ধারণ করায় এর সমাধান খুঁজতে আগামী ২৯ মে ব্যাংকক সম্মেলনের আহ্বান করেছে থাইল্যান্ড সরকার। থাইল্যান্ড সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সাথে প্রত্যাশা রাখি, এই সম্মেলনে চলমান সঙ্কটের একটা দীর্ঘস্থায়ী সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে। কেননা, এই মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্ববাসীর নীরবতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই এই সঙ্কট নিরসনে সবগুলো সরকারকে জরুরিভিত্তিতে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
কেননা, আজকের এই সমস্যার জন্য শুধু ভিকটিম অধিবাসীরাই দায়ি এটা বলা যাবে না। এশিয়ার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারগুলো কম দায়ি নয়। বলা যায়- মানব পাচারের এই সমস্যার জন্য মায়ানমার সরকার অনেকাংশে দায়ী। দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নীপিড়ন চালিয়ে এই সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় দারিদ্র আর বেকারত্বে নিষ্পেষিত হয়ে এভাবেই মানুষ সাগর পথে এক অনিশ্চয়তার দিকে পা বাড়িয়েছে। আর থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এই সমস্যাকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে গেছে ঠাণ্ডা মাথায় অভিবাসী বহনকারী নৌকাগুলোকে সাগরে ফিরিয়ে দিয়ে।
এরপর অসহায় মানুষগুলোর ক্ষুধা-তৃষ্ণা, অসুস্থতা ও নৌকাডুবিতে মুত্যুবরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৯৫১ সালের উদ্বাস্তু বিষয়ক সম্মেলনের ঘোষণা মোতাবেক এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভিকটিম অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়া উচিত।
তাদেরকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এছাড়া অভিবাসীদের উদ্ধার, মানবিক সহায়তা দান ও পুনর্বাসনে অন্যান্য সরকারগুলোর একত্রে কাজ করা উচিত। সবশেষে বলবো, যেহেতু এই সমস্যাটা শুধু এশিয়ার দেশগুলোর সমস্যা নয়, পুরো বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে ভাববার সময় এসেছে। এ জন্য বিশ্বসংস্থা ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোকে শুধু উদ্বেগ প্রকাশ আর বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশনের ঘোষণা
বিশ্বমানবাধিকার সনদকে সমুন্নত রাখতে হলে জাতিসংঘের উদ্যোগে বৃহৎ আকারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করা প্রয়োজন। আর ও ই সম্মেলন থেকেই মানব পাচার রোধ ও উদ্ভাস্তু অভিবাসীদের সম্পর্কে সরকারগুলোকে একটা পথ খোজেঁ বের করতে হবে। অন্যথা মানব সভ্যতার এই বিপর্যয় আর কেলেঙ্কারীর মাসুল একদিন সবাইকে দিতে।
লেখক: ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান, গবেষক । ই-মেইল:sarderanis@gmail.com