রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩

গরমে ভালো নেই জলের মাছ

গরমে ভালো নেই জলের মাছ

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: প্রচণ্ড ঘরম। ডাঙ্গার মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ। ভালো নেই জলের মাছও। বাগদা চিংড়ি চাষে বিপর্যয় নেমে এসেছে। মংলা পৌরসভাসহ এখানকার ছয় ইউনিয়নের চিংড়ি ঘেরগুলোতে মাসখানেক ধরে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাচ্ছে।

এর ওপর এবার আবার রফতানি বাজারে বাগদার দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা কম। প্রচণ্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরে যাচ্ছে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।

এদিকে অধিকাংশ ঘেরে মাছ মরে যাওয়ার কারণে এবার এ অঞ্চলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাছ মরার কারণে চিংড়িচাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। লবণ পানি অধ্যুষিত মংলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় আড়াই যুগ ধরে ধানের পরিবর্তে বছরের প্রায় ৮ মাসই বাগদা চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। মংলার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ১০ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে বাগদা চাষ হয়। তাতে ছোট-বড় মিলিয়ে ঘেরের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার।

মংলা উপজেলার বৈদ্যমারী গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী মো. করিম জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ঘেরে পোনা ছাড়ার পর এপ্রিল থেকে বিরতিহীনভাবে ঘেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ঘেরের ভেড়ির পাশে লালচে আকার ধারণ করে মরা মাছ পড়ে থাকছে। যে পরিমাণ জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই দুর্বল।

সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের চিংড়িঘের ব্যবসায়ী আনিস ও চিলা গ্রামের মাহবুবুর রহমান টুটুল জানান, শতাধিক বিঘা জমি লিজ নিয়ে তারা এবার বাগদা চাষে ১৭ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন। এবার চলতি মৌসুমের মাঝামঝি এ ঘের থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল তাতে তাদের এ খাতে লগ্নি করা টাকার অধিকাংশই উঠে আসার কথা।

এদিকে, ব্যাপক হারে চিংড়ি মরার কারণে চিংড়িচাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। মাছ মরে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক চাষি সর্বস্বন্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার চিলা, আন্ধারিয়া, বুড়বুড়িয়া ও জয়খাঁ গ্রামের কয়েক চিংড়িঘের ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, সরকার চিংড়ি রফতানি করে শত শত কোটি টাকা আয় করলেও চিংড়ি উৎপাদনকারীদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। উপজেলা মৎস্য অফিসও চিংড়িচাষিদের সচেতন করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

উপজেলা চিংড়ি বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মাহে আলম পরিবর্তনকে জানান, এবার চিড়িং মরে যাওয়ার কারণে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গতবারের তুলনায় মংলার আড়তগুলোতে মাছের আনাগোনা প্রায় অর্ধেক।

মংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব পরিবর্তনকে বলেন, বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। এবার প্রচণ্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না, জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করা দরকার তাও ঠিকমতো করেন না।

অন্যদিকে নিয়মিত ফর্মুলেটেড খাদ্য সরবরাহ না করা, পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা না করার কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে। উপরোক্ত কারণে চিংড়ির মধ্যে এক ধরনের পীড়ন তৈরি হয় আর যার শেষ পরিণতি মৃত্যু। চিংড়িচাষিদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি ও সেমিনারের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। চিংড়ির দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শেখ আবদুল বাকী।

তিনি বলেন, ইউরোর দাম পড়ে যাওয়ায় এবং ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাগদার দাম ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বেশকিছু দেশ ভেনামি নামের নতুন প্রজাতির চিংড়ি ব্যাপকভাবে রফতানি করছে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024