সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৩

সংকট উত্তরণের উপায় খোঁজতে জেনেভা সংলাপ

সংকট উত্তরণের উপায় খোঁজতে জেনেভা সংলাপ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিরিয়াকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বহু প্রশ্নে একমত না হলেও সংকট উত্তরণের উপায় খোঁজার লক্ষ্যে দেশ দুটো অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে এতে পর্যবেক্ষক মহল আশান্বিত। জেনেভায় আগামী মাসে সিরীয় সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সংলাপের উদ্যোক্তা দুই দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এই লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সংলাপে শরিক হতে নীতিগত সম্মতি জানিয়েছে সিরিয়া। কিন্তু রাশিয়া ইতোমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে যে, সিরিয়ায় বিবদমান পক্ষগুলোকে অস্ত্রযোগান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সাম্প্রতিক ইইউ দেশগুলোর সম্মেলনে সৃষ্ট বিভক্তি জেনেভা সম্মেলনের সম্ভাবনাকে হুমকিতে ফেলতে যাচ্ছে। বলা হয়েছে বিরোধী পক্ষের ও সরকারের পতিনিধিরা জেনেভায় মুখোমুখি সংলাপ করবেন। সিরিয়ার সংকট নিয়ে জেনেভায় এর আগেও একটি বৈঠক বসেছিল ৩০ জুন ২০১২ তে জাতিসংঘ আরব লীগের সম্মিলিত বিশেষ দূত কফি আনানের উদ্যোগে। ঐ বৈঠক কোনো পরিণামে পৌঁছায়নি।

জেনেভা বৈঠকের ডাক দিয়ে এসেছে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখায়নি। জন কেরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরবর্তীতে আবার জেনেভা সংলাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে সিরীয় সহিংসতাও ভয়াবহ রূপ নেয়। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার হুমকিও সিরীয় সংকটে যুক্ত হতে থাকে। এছাড়া যুদ্ধে যুক্ত হয় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার প্রশ্নও। জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাব্রভের বৈঠকে সাব্যস্ত হয়, নর্দার্ন আয়াল্যান্ডে জি-৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই জেনেভা শান্তি সংলাপ সম্পন্ন হতে হবে। এক কূটনীতিকের মন্তব্য হচ্ছে, জি-৮ সম্মেলনের আগে জেনেভা সংলাপ আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জেনেভা সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার পরিস্থিতিতে ব্যর্থতার সূত্র ধরে জি-৮ সম্মেলনে সিরীয় সংকট নিরসনের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া যাতে সম্ভব হয়। জি-৮ য়ের পরে জেনেভা সংলাপে তার কোনো সুযোগ থাকবে না। বলা হচ্ছে প্রতিটি পক্ষের আটজন প্রতিনিধি জেনেভা সংলাপে শামিল হবেন। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য বিবদমান পক্ষগুলো থেকে এখনো শোনানো হচ্ছে। জেনেভায় আসাদ প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিকে স্থান দেয়া যাবে না।

জেনেভা সংলাপে শরিক হতে তারা রাজি বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এমন ঘোষণাও এখনো দেয়নি। তাছাড়া বহুধা বিভক্ত সরকার বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সর্বসম্মত কোনো প্রতিনিধি দল বিরোধী মোর্চা জেনেভায় পাঠাতে পারবে কিনা সেটিও রয়েছে। এখনো পর্যন্ত একটি প্রশ্ন হিসেবে। জাতিসংঘ মহাসচিব বানকি মুন জেনেভা সংলাপ উদ্বোধন করবেন। সংলাপ পরিচালনা করবেন জাতিসংঘ ও আরব লীগের সম্মিলিত দূত লাখদার ব্রাহিমী। কোন্ কোন্ দেশ জেনেভায় যোগদেবে সাব্যস্ত না হলেও ধারণা করা হচ্ছেÑ সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানকে সংলাপে উপস্থিত দেখতে চাইবে রাশিয়া। ইরান নিজেও আগ্রহী। সিরীয় বিদ্রোহীদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা সরবরাহকারী সৌদি আরব ও কাতার সংলাপে উপস্থিত থাকতে চাইবে অবধারিত। সংলাপে যোগ দিতে চাইবে ‘ফ্রেন্ডস অব সিরিয়’ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলো ধরে নেয়া যায়। অনুমান করা হচ্ছে। আগ্রহী সবগুলো দেশকে উদ্বোধনী অধিবেশনে শরিক হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। আল জাজিরাকে এক কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রথম অধিবেশনটিকে ফটোসেশন বলাই ঠিক হবে। এরপর শুরু হবে আসল সংলাপ এবং এতে শামিল থাকবে মুষ্টিমেয় ক’টি দেশ। কিন্তু একটি প্রশ্নের উত্তর যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া কোনো পক্ষ থেকেই এখনো দেয়া হয়নি। সংলাপে প্রেসিডেন্ট আসাদের ভূমিকা কি হবে অথবা সংলাপের ধারাবাহিকতায় কেমন অবস্থানে থাকবেন আসাদ। কোনো কোনো পশ্চিমা কূটনীতিক বলছেন, ভবিষ্যতে সিরিয়ায় আসাদ ও তার পরিবারের জন্য কোনো স্থান অবশিষ্ট রাখার ব্যবস্থা না হলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতীকী নেতৃত্ব আসাদের হাতেই ন্যস্ত থাকতে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, আসাদকে রাষ্ট্রনেতৃত্বে আদো কোনো ভূমিকা দেয়ার পশ্চিমাদের মধ্যে একমাত্র কট্টর বিরোধী দেশ হচ্ছে ফ্রান্স।

জেনেভা শান্তি সংলাপের জন্য হুমকি খাড়া করেছে যুদ্ধ মান সিরীয় পক্ষগুলোকে অস্ত্রসরবরাহে এ যাবত আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রশ্নে ইইউয়ের সম্প্রতি গৃহীত উদ্যোগটি। কূটনীতিকেরা প্রশ্ন তুলেছেন সংঘাতে জড়িত বিশেষ একটি পক্ষকে অস্ত্রসজ্জিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়ে শান্তি সংলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কি ভাবে? রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাব্রভের মন্তব্য হচ্ছে সিরীয় সরকার বিরোধীদের অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে জেনেভা শান্তি সংলাপের সম্ভাবনাকেই হুমকিতে ফেলেছে ফ্রান্স ও ইউকে। বিদ্রোহীদের অস্ত্রসরবরাহের মুখে আসাদ নমনীয় ভূমিকা নিতে বাধ্য হবেন ইউকে ও ফ্রান্সের এমন বক্তব্যের জবাবে রাশিয়া ইতোমধ্যে জানিয়েছে যে তারা এস-৩০০ এন্টি এয়ারক্রাফট্ মিসাইলস সিরিয়ায় পাঠাতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া দাবি করেছে তাদের এই পদক্ষেপে সিরিয়ায় ‘ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠা পাবে। জেনেভা সংলাপকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অন্তত একটি আশাব্যঞ্জক বক্তব্য পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তুলে ধরেছেনÑ সেটি হচ্ছে জেনেভা সংলাপে সিরিয়াকে বিভক্ত করার বিষয়ে কোনো আলোচনা তারা আমলে নেবেন না।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024