মতিয়ার চৌধুরী: অনেকদিন পূর্বে বহুল প্রচারিত স্পাইস ম্যাগাজিনে সিলেটী বাংলায় আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘‘দেখাদেখি বেখায় নাচে’’ যার আভিধানিক অর্থ হলো যোগ্যতা থাকুক আর নাই থাকুক অন্যের অনুকরণে একটা কিছুকরা, এমন প্রবণতা আমাদের বাঙ্গালী কমিউনিটিতে লক্ষ্যনীয়।
আজকের বিষয়টি সামান্য ব্যাতিক্রম হলেও এর সাথে কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে। আজ থেকে কুড়ি বছর পূর্বে আমি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে যখন বিলেত এসেছিলাম তখন আমাদের কমিউটিতে সলিসিটর-ব্যারিষ্টর, একাউটেন্ট, শিক্ষকসহ এজাতীয় পেশাদারদের সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য।
এসব পেশায় হাতেগুনা যে কয়েকজন নিয়োজিত ছিলেন তাদের সকলেই শ্রদ্ধার চোঁখে দেখতেন। অবশ্যই পেশাদারদের শ্রদ্ধা করা উচিত। বর্তমানে বৃটেনের বাঙ্গালী কমিউনিটিতে সাংবাদিক, ব্যারিষ্টার , সলিসিটর বা একাউনটেন্টের সংখ্যা লক্ষ্যনীয় বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনে গজিয়ে উঠেছে অসস্য পরামর্শক, সলিসিটর ও একাউন্টেন ফার্ম।
আমার লিখাটি কিন্তু কাউকে হেও প্রতিপন্ন বা খাটো করার জন্যে নয়। লিখাটির উদ্দেশ্য হলো কমিউটিকে সচেতন করা। অসাধু এবং আনারী কিছু সংখ্যক একাউনটেন্ট ও আইনজীবি নামধারীর খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সমাজের নামীদামী ব্যবসায়ী সহ সর্বস্থরের সেবাগ্রহীতারা। প্রতিদিনই এজাতীয় বহু অভিযোগ আমাদের শুনতে হয়, কেউবা ইমিগ্রেশন বিষয়ে পরামর্শের জন্যে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন আবার কেউ কেউ কিছুসংখ্যক অসাধু হিসাব রক্ষকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছেন।
আমার লিখাটি মূলতঃ যারা প্রতারনা করছেন বা অর্থের লোভে অন্যকে বিপদে ফেলছেন তাদের থেকে সতর্ক থাকার জন্যে। অনেকেই জানানেনা আইনের ডিগ্রি থাকলেই সকল আইনজীবির পক্ষে কোর্টে গিয়ে মামলা ফেইস করা সম্ভব নয়, এসব আইনজীবিরা পেশাদার পেক্টিসনারদের আশ্রয় নিয়ে অন্যের মামলা পরিচালনা করেন যাকে বাংলায় বলা হয় মধ্যসত্ব ভোগী, অনুপরুপ অবস্থা লন্ডনের একাউনটেন্টদের বেলায়ও ঘটছে অহরহ। একাউনটেন্ট পেশাটি খুবই দায়িত্বশীল বটে, যদি কোন একাউটেন্ট এর অবহেলা বা ছলাতুরির কারণে আপনি হয়রানির শিকার হন তখন উপায়?
বৃটেনে একটি ফানি আইন রয়েছে একাউটেন্ট না হলেও একাউনটেন্ট ফার্ম খোলা যায়। সাধারন মানুষ একাউনটেন্ট ফার্ম দেখেই এসব ভ‚য়া হিসাব রক্ষকের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন অহরহ। অন্যরা যাতে আর প্রতারিত না হন তাদের সতর্ক করার জন্যেই আজকের এই প্রতিবেদন। যদি কোন শিক্ষিত সচেতন মানুষ হয়রানির শিকার হন তা হলে! এমননি ভাবে এক একাউনটেন্ট এর স্বজনপ্রীতি ও ছলচাতুরীর শিকার হয়েছেন বৃটেনে বাংলাদেশী কমিনিটির সুপরিচিত মুখ বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স লন্ডন রিজিওনের প্রেসিডেন্ট বিশষ্ট ব্যবসায়ী একটি কোম্পেনীর ডিরেক্টর জনাব বশির আহমেদ।
এখানে উল্লেখ্য যে মিঃ আহমদ তাঁর মায়ের মৃত্যুতে বাংলাদেশে গেলে তাঁর অনুপস্থিতে হিসাব রক্ষক ৩০ মার্চ ২০১৫ তারিখে ২৯ নভেম্বর ২০১৩সালের কোম্পেনী কর্তৃক অনুমোদিত রেজুলেশনকে অবজ্ঞা করে ডাইরেক্টরশীফ পরিবর্তন করে ফেলেন। মিঃ বশির আহমদের বেলায় একাউনটেন্ট ফার্ম শুধু অনিয়মই করেনি তার অনুপস্থিতিতে ঘটিয়েছে এক অবাক কান্ড? এখানে উল্লেখ্য যে মিঃ বশির আহমদ ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর তার এই কোম্পেনীর অন্যান্য ডিরেক্টরদের নিয়ে একটি বোর্ড মিটিং করেন, তার সভাপতিত্বে সকল ডিরেক্টরের উপস্থিতিতে এই বোর্ড মিটিংয়ে রেজুলেশন নেয়া হয় কোন ডিরেক্টর পরিবর্তন বা কোম্পেনীর অন্যান্য মেজর কোন ইস্যুতে সিন্ধান্ত নিতে হলে সার্কুলেন জারি করতে হবে এবং সকলের উপস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আইনে কোম্পেনী হাউজের নিয়ম হচ্ছে শেয়ার বা ডিরেক্টরশীপ পরিবর্তন নতুন ডিরেক্টর নিয়োগ বা বড়ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে দুটি নিয়ম প্রযোজ্য প্রথমটি অনলাইনের মাধ্যমে। দ্বিতীয়তঃ হার্ডকপিতে ডিরেক্টরদের সাইনের মাধ্যমে। একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হিসেবে মিঃ বশির আহমদ ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ব্যবসা শুরুর পূর্বে কোম্পেনী শেয়ার হোল্ডার ও ডিরেক্টরদের মিটিংয়ে রেজুলেশন পাশ করে রাখেন যে এই কোম্পেনীর অনলাইনের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন বা ডিরেক্টরশীফ পরিবর্তন সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ।
তার পরেও একাউনটেন্ট এই রেজুলেশনের কোন তোয়াক্কা নাকরেই ( এখানে উল্লেখ্য যে অনলাইনে এক্সসেস কোড থাকে একাউনটেন্টের নিয়ন্ত্রনে, এই একাউনটেন্ট মিঃ বশির আহমদের বেলায় সুযোগের সদব্যবহার করেছেন ) সম্পুর্ণ অন্যায় এবং বেআইনীভাবে ২৫ ফেব্রয়ারী ২০১৫ কোম্পেনী হাউজে ডিরেক্টর নিয়োগ করেছেন। যা ২০১৩ সালের নভেম্বরের বোর্ড মিটিংয়ে পাশ করা রেজুলেশনের পরিপন্থি, যা কোম্পেনী আইনেরও পরিপন্থী। তিনি বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসব দেখে অবাক!
শুধু অবাকই নয় বিষ্মতও হয়েছেন বটে। ইদানিং বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য আনাড়ী একাউনটেন্টের আগম ঘটেছে বৃটেনে। অনেকেরই যোগ্যতা না থাকলেও রীতিমতো একাউটেন্ট এর মতো কঠিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এদের খপ্পরে পড়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে সেবাগ্রহীতাদের। শুধু তাই নয় ভ‚য়া পে-¯িøপ ও অন্যান্য ডকুমেন্ট তৈরী করতে গিয়ে সাধারন নীরিহ মানুষ অদক্ষ হিসাব রক্ষকদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। তাই আপনি হিসাব রক্ষক নিয়োগের পূর্বে তাদের সম্পর্কে জেনে নিন।
শতাধিক এশিয়ান হিসাব রক্ষক বৃটেনে রয়েছেন যাদের এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের কোন অনুমতি নেই। তার পরেও তারা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন এমন কঠিন কাজ?
এব্যাপারে বৃটেনের স্বনামধন্য একাউটেন্ট ফার্ম ‘‘ তাজ একাউটেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করা হলে একাউটেন্ট মিঃ নুরুজ্জামান বলেন মিঃ আহমদের বেলায় একাউটেন্ট ফার্ম যে অনিয়ম করেছে তা আইনের পরিপন্থী । তিনি ব্যবসায়ী ও নতুন কোম্পেনীর জন্যে একাউনটেন্ট নিয়োগ করার পূর্বে এই বিষয় গুলো যাচাই করার পরামর্শ দিয়ে বলেন গুগল সার্চের মাধ্যমে একাউটেন্ট ও কোম্পেনী সম্পর্কে যাচাই করা। তাদের অভিজ্ঞতা আছে কি না?
একাউটেন্টের প্রফেশনাল ভ‚ল সংশোধনের জন্যে ইনজেমনেশন ইন্সুরেন্স আছে কি না.? তা খতিয়ে দেখা এবং একাউটেন্ট ফার্ম সম্পর্কে অন্ততঃ পক্ষে দুজনের রেফারেন্স নেওয়া। তাই আইনজীবি বা একাউনটেন্ট নিয়োগ করার পূর্বে এসব বিষয় গুলো যাচাই করা উচিত।
বৃটেনের স্বনামধন্য একাউনটেন্ট ‘রউফ এন্ড কোম্পেনীর’ সত্বাধিকারী প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাহমুদ এ রউফ বলেন একাউনটেন্ট নিয়োগ করার পূর্বে আইনগত দিক গুলো অবশ্যই যাচাই করা উচিত। তাই একাউনটেন্ট নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে আইনী দিকগুলো যাচাই করুন নিজে সতর্ক হোন অন্যকে সতর্ক করুন।