শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক উপ-প্রধান সিরাজুর রহমান লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবত ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। সোমবার বেলা ১১টায় লন্ডনের রয়্যাল ফ্রি হসপিটালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সিরাজুর রহমান ১৯৬০ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসি বাংলা বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসির বাংলা রেডিও অনুষ্ঠানে তার অবদানের জন্য সিরাজুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের কাছে এক কিংবদন্তীতে পরিণত হন। ১৯৯৪ সালে বিবিসি থেকে অবসর নেয়ার পর মি. রহমান বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে কলাম লিখতেন।
এক জীবন এক ইতিহাস নামের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তিনি বর্ণনা করেছেন নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। কলকাতায় পড়াশুনা শেষে দৈনিক আজাদ, দৈনিক নবযুগ এবং সাপ্তাহিক মিল্লাতে কাজের মধ্য দিয়ে তার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনের সূচনা হয়।
সিরাজুর রহমান (পুরো নাম আনম সিরাজুর রহমান) ১৯৩৪ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবন কেটেছে কলকাতায়। তার সাংবাদিকতার শুরু কলকাতায়। মেট্রিক পরীক্ষার আগে কলকাতায় যোগ দেন দৈনিক আযাদ পত্রিকায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় ফেরেন পরিবারের সঙ্গে। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ছিলেন কলকাতা আলীয়া মাদরাসার শিক্ষক।
ঢাকা কলেজের ছাত্র হিসেবে সিরাজুর রহমান অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত জাতীয় সঙ্গীতের অফিসিয়াল যে মিউজিকটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাজানো হয় সেটা তৈরির পেছনে মূল ভূমিকা ছিল তার। ইন্টারমিডিয়েট অধ্যায়ন অবস্থায় দৈনিক ইনসাফ ও ইত্তেহাদ পত্রিকায় বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
পর্যায়ক্রমে দৈনিক আযাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, ইত্তেহাদ, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক মিল্লাত ও দৈনিক ইনসাফে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। পাশাপাশি কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সত্যযুগ’-এ পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি হিসাবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। বিবিসিতে চাকরি হওয়ার পর ১৯৬০ সালে চলে যান লন্ডনে। ৩৪ বছর কাটিয়েছেন বিবিসি রেডিওর লন্ডনে প্রধান কার্যালয়ে। অবসর নিয়েছেন দুই দশক আগে।