উজ্জ্বল ধর, সিলেট: হঠাৎ করে সিলেটে ফের চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। পুলিশ রাজনৈতিক মামলার তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চোরেরা সিলেটের বিভিন্ন স্থানে চুরি করছে। সিলেট নগরী ও শহরতলীতে ১৫ দিনে ৩৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে চোর ধরা পড়লেও চোরাইকৃত মালামাল উদ্ধার হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ নভেম্বর গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমা এলাকার একটি বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনায় পুলিশ জুবের আহমদ (২৬) নামে এক চোরকে আটক করে। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সিলাম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার পুত্র। ওইদিন পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির ঘটনা স্বীকার করে সে। তার স্বীকারোক্তি মতে, পুলিশ গত বুধবার সন্ধ্যায় চুরি হওয়া একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। গত মঙ্গলবার ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার থেকে চোরেরা একটি ট্রাকে করে ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু চুরি করে শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকায় নিয়ে আসার পথে পুলিশ গাড়িচালক আফজাল (২২) নামে এক চোরকে আটক করে। তার সঙ্গে থাকা অন্য চোরেরা পালিয়ে যায়। ধৃত আফজাল ছাতক উপজেলার মালিপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র। এ সময় পুলিশ চোরাই গরুসহ গাড়িটি জব্দ করে। গত ১১ নভেম্বর ভোরে নগরীর কানিশাইল মসজিদের মাইকের মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়। পরে কোতোয়ালি থানার এএসআই মুহিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মালামালসহ চোরকে আটক করেন। ধৃত চোর জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের সুফি সিকদারের পুত্র সোহান শিকদার (২০)। নগরীর কালিঘাটে গত ৮ নভেম্বর রাতে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর পরিবেশক ও পাইকারি বিক্রেতা করিম ব্রাদার্সে চুরির ঘটনায় নগদ প্রায় ২৫ লাখ টাকা খোয়া যায়। মেসার্স করিম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী হাজি মোঃ আবুল হোসেন জানান, ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি খবর পান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি দেয়ালে বড় আকারের ছিদ্র দেখা যাচ্ছে। তিনি দ্রুত এসে দোকান খুলে দেখতে পান লকার ভাঙা। লকারের ভেতর ৩ দিনের ব্যবসার টাকা রক্ষিত ছিল। এরপর পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের তিনি ঘটনা অবহিত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেয়াল ভাঙায় ব্যবহৃত ডিল মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করে। গত ১০ নভেম্বর রাতে নগরীর শেখঘাট খুলিয়াপড়ার নীলিমা ৭৫ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। চোরেরা চাকরিজীবী ছইদ আহমেদের বাসার ভেতরে ঢুকে একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল সেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। একইদিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৮ থেকে ১২ জন চোর একটি ট্রাকে করে শাহজালাল উপশহর এলাকার এ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ট্রান্সফরমার বহনকারী ট্রাক পার্শ্ববর্তী পূর্ব কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে আরেকটি ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করলে মসজিদ থেকে মাইকযোগে চুরির ঘটনা প্রচার করা হয়। এ সময় ট্রাকটি নগরীর মিরাপাড়া ও কল্যাণপুর মহল্লায় গিয়ে সেখানকার দুটো ট্রান্সফরমার খুলে ট্রাকযোগে টিলাগড় এলাকা দিয়ে চলে যায়। এসব পৃথক ঘটনায় সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট থানায় ৩টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রান্সফরমারগুলো উদ্ধার বা কোনো চোর ধরা পড়েনি। এ ছাড়া একই রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সিলাম ইউনিয়নের ইলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়ালগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালাবাজার ইউনিয়নের কাটা দিয়া মুহাম্মদিয়া রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে চোরেরা ওই বিদ্যালয়গুলোর দরজার তালা ভেঙে স্টিলের আলমারি থেকে নগদ টাকা ও পিতলের ঘণ্টা নিয়ে যায়। গত ৫ নভেম্বর দিনদুপুরে নগরীর উপশহরে দুটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রিল কেটে চোরেরা দুটি বাসা থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। গত ১ নভেম্বর ভোরে নগরীর বন্দর বাজারের আইসিবি ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের বাসা থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানায় জিডি করা হয়। পুলিশ এ জিডির পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম আহদ (২৮) নামে এক চোরকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে চুরি হওয়া ৮০ সিসি একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। ধৃত সেলিম মোগলাবাজার থানার সিলাম ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর পুত্র। অপরদিকে ওইদিন ভোরে কোতোয়ালি থানা পুলিশ চোরাই মোটরসাইকেলসহ চৌহাট্টা থেকে সাইফুল আলম (২৩) নামে আরেক মোটরসাইকেল চোরকে আটক করে। ধৃত সাইফুল আলম রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পিতৃপাল গ্রামের শফিকুল আলমের পুত্র। সিলেট মেট্রোপলিটনের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) এজাজ আহমেদ বলেন, চুরির বিষয়ে জনগণেরও সচেতনতার অভাব আছে। তারা বাসায় কাজের মেয়ে রাখেন, কিন্তু তার নাম-ঠিকানা জানেন না। বাসা থেকে বাইরে বেড়াতে যান, কাউকে বলে যান না। নাগরিক জীবনে তারা যেতে চান, কিন্তু সে বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। আর চুরি একটি চলমান ঘটনা। আগের সময়ের চেয়ে এখন চুরি কমে আসছে। এই মাসে যে সব চুরির ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে আমি ভুক্তভোগীদের বাড়ি বাড়ি যাবো।
Leave a Reply