আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন থেকে পাঠানো তাজা অ্যানথ্রাক্সের একটি নমুনা যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণাগার গ্রহণ করে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
গবেষণাগারটির নাম প্রকাশ না করে মঙ্গলবার পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী নয়, যুক্তরাজ্যের লোকজনই গবেষণাগারটি পরিচালনা করতো। আরেকটি চালান পাঠানোর ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। এই চালানের নমুনাগুলো ম্যাসাচুসেটস্ ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল বলেন ওয়ারেন।
এই দুটি গবেষণাগার যুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের ভিতরে ও বিদেশে যে সব গবেষণাগারের অ্যানথাক্স পাঠানো হয়েছে তাদের সংখ্যা ৬৮টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে চারটি গবেষণাগার বিদেশি রাষ্ট্রের মাটিতে, যার একটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক্তিয়ারাধীন নয়।
এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর বহু ঘাঁটিতে নির্জীব অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর নমুনা পাঠানো হয়েছে। জীবাণুঅস্ত্রের বিষয়ে গবেষণার জন্য এসব নির্জীব অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার নমুনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এতদিন পর জানা গেছে যে, নির্জীব চিহ্নিত করে অ্যানথ্রাক্সের যেসব নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তার সবগুলোই নির্জীব ছিল না। অনেকগুলো নমুনাকেই ঠিকমতো নির্জীব না করেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের পর কর্নেল ওয়ারেন বিবিসিকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের ওই গবেষণাগারটি অ্যানথ্রাক্সের জীবন্ত ওই নমুনা গ্রহণ করেছিল কিনা তা নিশ্চিত নন তারা। পাঠানো অ্যানথ্রাক্স নমুনার সংস্পর্শে আসা কেউ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অসুস্থ হননি। তবে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বেশ কয়েকটি গবেষণাগারের ৩১ জন কর্মীকে অ্যানথ্রাক্সের আগাম চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গবেষণাগারগুলোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের সামরিক ঘাঁটির গবেষণাগারগুলোতে জীবাণুর এসব তাজা নমুনা পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কেন্দ্র (সিডিসি) এসব ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। উটাহর ডাগওয়ে প্রোভিং গ্রাউন্ড সামরিক ঘাঁটির মাননিয়ন্ত্রণ সমস্যা থেকে দায়িত্বে অবহেলাজনিত অ্যানথ্রাক্স পাঠানোর এসব ঘটনাগুলো আশঙ্কাজনক হলেও এতে জনসাধারণের কোনো ঝুঁকি নেই বলে দাবি করেছেন পেন্টগনের কর্মকর্তারা।
এক আদেশে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী নিজেদের সব গবেষণাগারকে আগে পাঠানো নির্জীব অ্যানথাক্স জীবাণুর নমুনাও পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে। পরীক্ষা করা ছাড়া এসব নমুনা নিয়ে আর সব গবেষণা স্থগিত রাখারও আদেশ দেয়া হয়েছে। জীবাণুঅস্ত্র নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দায়িত্বে অবহেলাজনিত এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে সর্বাধুনিক আগাম সতকর্তা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০০১ সালের ৯/১১ হামলার কিছুদিন পর কয়েকটি ঘটনায় অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় বিভিন্ন বার্তা সংস্থার দপ্তরসহ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের দপ্তরে চিঠির মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাঠানো হয়। ওই সময় এসব জীবাণুর সংস্পর্শে আসা ২২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে পাঁচজন মারা যান। এরপর থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে তৎপরতা শুরু করে।
অ্যানথাক্স জীবাণুর সংস্পর্শে এলে ত্বকে জ্বালাপোড়া, পাকস্থলির গণ্ডগোল, বমিভাব ও জ্বর দেখা দেয়। এসব লক্ষণ প্রকাশের এক পর্যায়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।