শাহনাজ সুলতানা: অন্ধকল্যাণ চ্যারিটি সংগঠন ’দেখতে চাই’ চেয়ারপার্সন মাহবুব আনাম (আমাদের প্রিয় আনাম ভাই) গতরাত সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। খবরটি শোনার পর কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছি না। বেদনায় বুক ভরে গেছে। বারবার মনে পড়ছে বিগত দিনের স্মৃতি। আনাম ভাইয়ের সাথে প্রথম পরিচয় সাংবাদিক/ কলামিষ্ট নজরুল ইসলাম বাসন ভাইয়ের সুবাদে ’দেখতে চাই’ আয়োজিত চ্যারিটি ডিনারে। সেদিন চ্যারিটি ডিনারের আয়োজক জাকির খান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক সিরাজসহ উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা। পাঁচ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল ঐ রাতে। সংগৃহীত টাকায় আনাম ভাই চলতি বছরের শুরুতে বৃহত্তর সিলেটে ৩০০ জন গরীব অসহায় মানুষের চোখের ছানি অপরারেশন করেছেন। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার গরীব, অসহায় অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রবল ইচ্ছা বুকে চেপে ইতিমধ্যে আরেকটি প্রজেক্টও শুরু করেছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে সফল চ্যাটার্ড একাউন্টেন্ড আনাম ভাই ছিলেন পরিচিতজনদের খুব কাছের এবং অতি প্রিয় একজন মানুষ। ২০০৬ সালে ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হয়ে হঠ্যাৎ দৃষ্টিশক্তি হারালে একাকীত্ব তাঁকে ভর করে। পঙ্গুত্ব ও একাকীত্বকে প্রশয় না দিয়ে তিনি সে সময় গরীব ও অসহায়ের কল্যাণে গঠন করেন চ্যারিটি সংগঠন ’দেখতে চাই। তাঁর সাথে যোগ দিয়েছিলেন সাংবাদিক/কলামিষ্ট নজরুল ইসলাম বাসন । ’দেখতে চাই’ সংগঠনকে আরো বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কিছুদিন পর নজরুল ইসলাম বাসনের মাধ্যেমে ’দেখতে চাই’ এ পর্যায়ক্রমে যোগ দেন সাংবাদিক আব্দুল হাই সঞ্জু, সাংবাদিক কামাল মেহেদী, সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের, সাংবাদিক উজ্জল দাশ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফাউন্ডার ডাইরেক্টার সাবু নেওয়াজসহ বেশ ক’জন ব্যবসায়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। শুরুতে আব্দুল হাই সঞ্জু পরবর্তীতে কামাল মেহেদী ’দেখতে চাই’ সংগঠনের ’টকিং ম্যাগাজিন’ সিডি প্রকাশনায় নিরলসভাবে কাজ করে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মোহাম্মদ জুবায়ের বেশ কিছু প্রতিবেদন তৈরি করে চ্যানেল এস এর মাধ্যেমে সংগঠনের নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন ইউরোপসহ বৃটেনের প্রতিটি অঞ্চলে। বিলেতের ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া চ্যানেল এস, এনটিভি, ইষ্ট এন্ড লাইফসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যেম ও শুভাকাক্ষীদের সহযোগিতায় ’দেখতে চাই’ সংগঠন ইতিমধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে বৃটেন, ইউরোপসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু শহরে। নারী এশিয়ান ম্যাগাজিনের জন্য আনাম ভাইয়ের একটি ইন্টারভিউ আনতে মাস দুয়েক আগে এক বিকেলে উনার বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে শুনেছিলাম তিনি কি ভাবে ডায়াবেটিকসের ভয়াবহতায় চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, অন্ধ্য কল্যাণ চ্যারিটি সংগঠন গঠন করার মূল কারণ, আগামী প্রজেক্টসহ বিগত জীবনের অনেক না বলা গল্প । কথাগুলো শেষ হবার পর নারী’র মাধ্যেমে সাধ্যমত তাঁর সংগঠনের সাথে কাজ করার আগ্রহে বেশ কিছু আলোচনাও হয়েছিল আমাদের মধ্যে। সে সময় তাঁর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন উজ্জল দাস, নজরুল ইসলাম বাসন, সাবু নেওয়াজসহ ’দেখতে চাই’ সংগঠনের বেশ কিছু সদস্যরা। তবে উজ্জল দাস আনাম ভাইয়ের যে ইন্টারভিউ করেছিলেন, সেটা ছিল তার নিজের পত্রিকার জন্য। আনাম ভাইয়ের সাথে শেষ দেখা হয় মাস দুয়েক আগে ব্রাডি আর্ট সেন্টারে একটি চ্যারিটি ইভেন্টে। বরাবরের মতো সেদিনও এই মানুষটি হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে হুইল চেয়ারে বসা ছিলেন। প্রতিনিয়ত ডায়বেটিকসের সাথে যুদ্ধ করে পরামর্শ দিতেন সাধারণ জনগণকে ,কি ভাবে ডায়াবেটিকস এর হাত থেকে সচেতন থাকা যায় সে বিষয়ে । আগামীতে আরো বেশি গরীব মানুষের অন্ধত্ব দূর করার লক্ষ্যে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন সবার সাথে। যেটা অনেকের দ্বারা হয়তো সবসময় সম্ভব হতো না। অন্যের কল্যাণে একজন দৃষ্টিহীন মানুষের এতো এতো প্রাণশক্তি দেখে আমরা অবাক হতাম । জীবন সায়াহেৃ গরীব অসহায় মানুষের অন্ধত্ব মুচনে গঠনকৃত চ্যারিটি সংগঠন ’দেখতে চাই’ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অসংখ্য গরীব মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় তিনি বিভিণœভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। নারী এশিয়ান ম্যাগাজিনে আগামীতে আনাম ভাই এর ইন্টারভিউ প্রকাশিত হবে , তিনি তা দেখতে পারবেন না। যা খুবই স্পর্শকাতর ও দু:খজনক। এনাম ভাই বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন তাঁর রেখে যাওয়া কর্মে । আমরা তাঁর মাগফেরাত করছি। –লেখিকা: সম্পাদক, নারী এশিয়ান ম্যাগাজিন
Leave a Reply