শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৮

অন্ধকারে বাংলাদেশ

অন্ধকারে বাংলাদেশ

অন্ধকারে আটকে আছে বাংলাদেশ। বৃটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট ১৯শে নভেম্বর তার অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ এভার মার্কিয়ার’। ব্যানিয়ান নামের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ঢাকায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন বিবাদীপক্ষের এক সাক্ষী। আদালতে প্রবেশের আগেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ থেকে কি বোঝা যায়? ওই সাক্ষীর নাম সুখরঞ্জন বালি। তাকে ওই আদালতের গেটের খুব কাছ থেকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই আদালতেই হচ্ছে পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে রক্তপাতের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কয়েক জনের বিচার। সরকারের হিসাবে ওই যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। ইকোনমিস্ট লিখেছে, গত ৫ই নভেম্বর বিবাদী পক্ষ ও তাদের সাক্ষী আদালতে পৌঁছামাত্র সুখরঞ্জন বালিকে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। তাদেরকে নিজেদের গাড়ি থেকে নেমে পরিচয় দিতে বলা হয়। বিবাদীপক্ষের এক আইনজীবী হাসানুল বান্না সোহাগ বলেন, ওই দলের চার সদস্য নিজেদের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার লোক বলে দাবি করেন। তাদের একজন সুখরঞ্জন বালিকে আমার হাত থেকে কেড়ে নেন এবং তাকে বাধ্য করেন তাদের সাদা গাড়িতে উঠতে। এরপরই ওই পুলিশ ভ্যান ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সাক্ষীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীর যে ৭ সদস্যের বিচার হচ্ছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তাদের একজন। তিনি মানবতাবিরোধী, গণহত্যা, হত্যা, ধর্মীয় বিচার ও আরও ১৬টি অভিযোগে অভিযুক্ত। তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুখরঞ্জন বালি মূলত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ছিলেন। তার এক ভাইকে ১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও আদালতে আসেন নি ওই সাক্ষ্য দিতে। তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে তার ভাইকে হত্যার ওই সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে বলা হয়েছে। বিবাদীপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, উল্টো সুখরঞ্জন বালি আদালতে যাচ্ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। তিনি আদালতকে বলতে চেয়েছিলেন সাঈদী নন, পাকিস্তানি সেনারা তার ভাইকে হত্যা করেছে। এতে সাঈদী জড়িত নন। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, জোর করে সাক্ষ্য আদায়ের ঘটনা এটাই একমাত্র নয়। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন সাক্ষীদের আদালতে না তোলার কৌশল নিয়েছে, যাতে আদালতে তাদের মৌখিক সাক্ষ্যের পরিবর্তে লিখিত সাক্ষ্যকে প্রমাণ হিসেবে নেয়া হয়। আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, তারা সুখরঞ্জন বালিকে তুলে নিয়েছে। কারণ, সরকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরিকল্পনা করছে। ১৪ই নভেম্বর প্রসিকিউশন তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার মূলে রয়েছে নির্বাচিত রাজনৈতিক পক্ষ। কেউ ভাবতে পারেন যে, সেই রাজনৈতিক পক্ষ এখন দেখাতে চেষ্টা করছে যে আইনি প্রক্রিয়া হাস্যকর অবস্থার দিকে যাচ্ছে না। কিন্তু দিনের আলোতে প্রকাশ্যে একজন সাক্ষীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি যে প্রতিক্রিয়া তা বিশ্বাস করা কঠিন। আদালত এ বিষয়টি দেখার জন্য প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেন। তারা আদালতকে দেখায় যে, ওই অপহরণের ঘটনা সাজানো। এ ঘটনায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। ১১ই নভেম্বর বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল হাইকোর্টে একটি হেবিয়াস করপাস আবেদনের ওপর সাক্ষ্য দেন। তিনি দাবি করেন যে, আদালতের সুনাম নষ্ট করতে বিবাদী পক্ষ ওই অপহরণের ঘটনা সাজিয়েছে। ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আদালতে সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে বিচার করা হচ্ছে- এর পক্ষে এর কোন ঘটনাই প্রমাণ হতে পারে না। যে সব পর্যবেক্ষক এর ওপর তীক্ষ্ন নজর রেখেছেন তারা বলছেন, বিচার প্রক্রিয়া তাড়াহুড়ো করে শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের জন্য এক বছরের সামান্য বেশি সময় বাকি আছে। এর আগেই এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেয়া হয়ে থাকতে পারে। বিবাদীপক্ষের সাক্ষীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার যে সিদ্ধান্ত আদালত নিয়েছে তাতে তা-ই ইঙ্গিত করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় ২৮ থেকে ৪৬ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে অনুমতি দেয়া হয় নি। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান ছিলেন গোলাম আযম। পাকিস্তানপন্থিদের হয়ে ডেথ স্কোয়াড গঠনের জন্য তিনি অভিযুক্ত। তার সাক্ষীর সংখ্যা ১০-এ সীমিত করে দেয়া হয়েছে। গোলাম আযম যে ডেথ স্কোয়াড গঠন করেছিলেন তাতে অনেক মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাসে হত্যা ও অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এই বিচার প্রক্রিয়া সব সময়ই চলছে বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে বিবাদীপক্ষের কৌশল, যেমন তারা গোলাম আযমের মামলায় ২০০০ সাক্ষীর একটি তালিকা দিয়েছে, তা সব সময়ই তাদের সহায়তা করছে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো- এই যুদ্ধাপরাধের মূল হোতা সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের আদালতে তোলা হয় নি। তারা রয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সেনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেসব অপরাধ সংঘটিত করেছে তার জন্য বাংলাদেশ এ মাসে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু যথারীতি পাকিস্তান সরকার ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সম্ভবত এর ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামাবাদ সফরের পাকিস্তানি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024