শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫১

উত্তর লন্ডনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মসজিদসহ ইসলামিক সেন্টার

উত্তর লন্ডনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মসজিদসহ ইসলামিক সেন্টার

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: উত্তর লন্ডনে অবস্থিত একটি ইসলামিক সেন্টার গত বুধবার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন উত্তর লন্ডনের ব্রিটিশ সেনা রিগরী হত্যা প্রতিশোধ হিসেবে এটা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় বৃটেনের মুসলিম সম্প্রদায় হতবিহবল হয়ে পড়ে।

মুসওয়েল হিলে অবস্থিত আল রহমান ইসলামিক সেন্টারের কর্মী আহমেদ আলী লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। এটা হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে এটা ভেবেই আমরা আশ্চার্যান্বিত হচ্ছি। তবে এতে আমরা দমে যাবো না। সমস্ত প্রতিবেশিরাই এ ঘটনায় আমাদেরকে সহসমর্মিতা জানিয়েছে এবং তারা আমাদেরকে কফির দাওয়াত দিচ্ছে। এই সেন্টারটি পুননির্মাণে কিভাবে তারা আমাদের সাহায্য করতে পারে সে ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করেছে।

অগ্নিকান্ডে দুইতলা বিশিষ্ট ইসলামিক সেন্টারটি পুরোপুরিই ধ্বংস হয়ে গেছে। ভস্মিভূত ভবনটির দেয়ালে ইডিএল লেখা পাওয়া গেছে। এটি বৃটেনের একটি চরম ডানপন্থী সংগঠন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানায়, এ ঘটনার পেছনে সোমালীয় সম্প্রদায় জড়িত থাকতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছে। “সোমালীয় চ্যারিটি ব্রিটসোমের” সদস্য আলী আবু (৩০) ডেইলি মেইলকে জানান, এ ঘটনায় আমরা সবাই হতবিহ্বল। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। শান্তিপূর্ণ একটি সম্প্রদায়ের ওপর এ হামলার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত ও বিষণœ। নাইজেরিয়ার বংশদ্ভুত অভিবাসী দুই যুবকের হাতে একজন বৃটিশ সৈন্য নিহত হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। আলী বলেন, বৃটিশ সেনা ড্রমার লী রিগরাই এর মৃত্যুতে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। আমরা শান্তিকামী সম্প্রদায়। তবে যারা এ কাজটি করেছে তাদের অন্তর বিদ্বেষপূর্ণ।

গত দুই সপ্তাহ পূর্বে ওলউইচে সেনাবাহিনীর ঐ সদস্যকে হত্যার পর বৃটেনে মুসলিমবিরোধী মনোভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। টেল মামা প্রজেক্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঐ হত্যাকা-ের ঘটনার পর শেষ দুই সপ্তাহে অনুমানিক ২১২টি মুসলিমবিরোধী কর্মকা- রিপোর্ট করা হয়েছে। সংগঠনটি বিট্রোন ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ডের পর্যালোচনা করে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১১টি মসজিদে হামলার ঘটনা। এগুলো ছিলো মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের ধারাবাহিক প্রকাশ। ওলউইচ হামলার পর থেকে যতগুলো মুসলিম বিরোধী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মসজিদ ধ্বংসের এই ঘটনাটি সর্বশেষ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফেইম ম্যাটারস দলের একজন, ফাইয়াজ মুঘন বলেন, ইডিএল’র (ইংলিশ ডিফেন্স লীগ) চিহ্ন রেখে যাওয়া, ইসলামি কর্মকান্ডের স্থান এবং ওলউইচের ঘটনা, এ বিষয়গুলো মাথায় রাখলে স্পষ্টভাবেই বলা যায়, এটি হয়তো মুসলিম বিদ্বেষী হামলাই ছিলো।

এটি খুবই উদ্বেগজনক যখন আমরা জানতে পারছি যে, অনলাইনে ব্যাপকভাবে মুসলিম বিরোধী ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। আর এই ঘৃণার বিষয়টি যখন বাস্তব ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয় তখন সেটা ভয়ঙ্কর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইডিএল বৃটিশ সেনা হত্যার জন্য মুসলমান ও তাদের ধর্মকেই দায়ী করছে। সংগঠনটি মুসলিমবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য বিশেষভাবে পরিচিতি লন্ডনের মেয়র কেরিস জনসন ইসলামিক সেন্টারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, লন্ডনের মত উন্মুক্ত, সহনশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নগরীতে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সহিংসতার কোন স্থান নেই। এই ঘটনার পুংখানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য পুলিশকে পর্যাপ্ত সময় প্রদানের জনগণকে তিনি অনুরোধ করেন।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেন। তিনি। বৃটিশ এমপি দেয়ারসা ভিলিয়ার্সও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকা- সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটি শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নয় এটি আমাদের পুরো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। আমরা সর্বোচ্চ বৈচিত্র্য ও বহু সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত একটি চমৎকার সাম্প্রদায়িক বন্ধনে আবদ্ধ। কোন অবস্থাতেই আমাদের সহিংস চরমপন্থীদের সুযোগ দেয়া উচিত হবে না যা আমাদের বিভক্ত করতে পারে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক জরিপে দেখা গেছে মুসলমানদের ব্যাপারে সবচেয়ে সন্তেহভাজন দেশ হলো বৃটেন। ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের অপর এক জরিপে দেখা গেছে লন্ডনে বসবাসকারী অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলমানদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে।বর্তমান সময়ের এই কঠিন মুহূর্তে আমি মুসলিমদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি। ৭/৭ হামলার পর থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সম্পূর্ণ ধকল বৃটেনের মুসলমানদেরকেই বহন করতে হয়েছে।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024