নিউজ ডেস্ক: সিলেট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত বানিজ্যের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। একটি মামলায় ৮৬ জনের নামে চার্জশিট দেয়ার পর তা বদলে ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জেলার কানাইঘাট থানার একটি মামলায় এ বানিজ্য করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাসুদ পারভেজ ভুইয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ জুন ভোর রাতে কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন ঢালাইচর সাকিনের ফাতিমা বেগমদের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাট চালায় প্রতিপক্ষ হোসেন আহমদের লোকজন। তারা পরিবারের লোকজনকে গুরুতর জখম ও ঘর দরজা ভাংচুর করে।
এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন দুইলাখ টাকার মালপত্রও লুটে নেয়। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ফাতিমা বেগম বাদী হয়ে ১১জনকে এজাহারভুক্ত করে অজ্ঞাত আরো আড়াইশ’ জনের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় একটি মামলা [নং১৯(৬)১৫] দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন থানার এসআই আতিকুল আলম খন্দকার।
পরবর্তীতে মামলাটি সিলেট জেলা গোযেন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তে দেয়া হলে ডিবির এসআই মাসুদ পারভেজ ভুইয়া তদন্ত করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এসআই মাসুদ পারভেজ এ বছরের ৬ জুন ১৬৩ পৃষ্টার কেসরেকর্ড সহ মামলার চার্জশিট ( নং-৯৯) লিপিবদ্দ করেন। পরে ১৫জুন কেসরেকর্ড সহ চার্জশিট কোর্ট পুলিশে দখিল করেন ও মামলার বাদীকে কপি সংগ্রহের জন্য বলেন। পাশপাশি চার্জশিটের কপি নিউজের জন্য পত্রপত্রিকায় প্রেরনেরও কথা বলেন তিনি। খবর পেয়ে বাদীপক্ষ স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে কোর্টের কানাইঘাট জিআরও অফিসে গিয়ে চার্জশিটের ফটোকপি সংগ্রহ করেন।
এতে দেখা যায় চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামী হোসেন আহমদ ও তার সহযোগী ৮৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজাহার নামীয় ১১ আসামীর মামলায ৮৬জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রদান করায় বিষয়টি সাংবাদিকদের নজর কাড়ে। সাংবাদিকরা তা মিডিযায় প্রচার করলে ১৮ জুন দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকায় “কানাইঘাটে হামলা ও ঘর ভাংচুর মামলায় ৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট” ও দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকায় “কানাইঘাটে ভাঙচুর মামলায় ৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের অনেকের নামও প্রকাশ পায়।
এছাড়াও কয়েকটি অন লাইন নিউজ পোর্টালেও রিপোর্টটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পেলে বেধে যায় গোল। অভিযুক্তদের সাথে আঁতাত করে এসআই মাসুদ পারভেজ ভুইয়া কোর্ট থেকে কেস রেকর্ডসহ চার্জশিট উঠিয়ে নেন এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চার্জশিট থেকে ৬০ জনকে বাদ দিয়ে এর বদলে একই নম্বও (৯৯) ও তারিখ (৬জুন ২০১৫) দিয়ে আদালতে হাতে লেখা আরেকটি চার্জশিট দাখিল করেন।
এতে কেস রেকর্ডের পৃষ্টা কমিয়ে দেন এবং ৬০ আসামীকে বাদ দেয়ার পাশপাশি মামলাকে হালকা করতে দন্ডবিধির ৩৮৯ ধারাটিও বাদ দিয়ে দেন। পরবর্তী ধার্য তারিখে বাদী পক্ষ আদালতে গিয়ে ৮৬ জনের নামে টাইপ করা চার্জশিটের বদলে হাতে লেখা ২৬ জনের নামে চার্জশিট দেখে হতভম্ভ হয়ে পড়েন এবং আদালতে নারাজি দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন ।
অভিযোগ পওায়া গেছে সিলেট জেলা গোযেন্দা (ডিবি) শাখার এসআই মাসুদ পারভেজ ভুইয়াসহ তদন্তসংশ্লিষ্টরা মামলার বাদী ও মিডিয়া কর্মীদের সাথে প্রতারনা করে ৮৬ জনের নামে চার্জশিট লিখে প্রচার করেন। পরে অভিযুক্ত ৬০ জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার ঘুষ বানিজ্য করে তাদের নাম বাদ দিয়ে ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মাসুদ পারভেজ ভুইয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৮৬ জনের নামে চার্জশিটের বিষয়টি অস্বীকার করে হাতে লেখা ২৬ জনের নামে চার্জশিট প্রদানের কথা জানান। ৮৬ জনের নামে টাইপ করে দেয়া চার্জশিটের প্রতিটি পাতায় দেয়া স্বাক্ষর হাতে লেখা চার্জশিটের স্বাক্ষরের হুবহু মিল রয়েছে এবং ২৬ জনের নামে দেয়া চার্জশিটে তার হাতের লেখার সাথে টাইপ করা চার্জশিটের শেষে দেয়া দস্তখতের হুবহু মিল রয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি ডিবি অফিসে গিয়ে সাংবাদিকদের চা খেয়ে আসার আমন্ত্রন জানান।
এ ব্যাপারে কানাইঘাট কোর্টের জিআরও সমীরন এর সাথে কথা হলে তিনি তার অফিস কক্ষে বাদী পক্ষের হাতে ৮৬ জনের নামে টাইপ করা চার্জশিটের একটি কপি দেখেছেন বলে জানান। তবে আদালতে উপস্থাপনের জন্য ২৬ জনের নামে দেয়া চার্জশিট তাকে দেয়া হয়েছে এবং তিনি তা আদালতে পেশ করেছেন বলে জানান।