শীর্ষবিন্দু নিউজ: রবিবার পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি হলে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় রওশন এরশাদ বলেন, আমরা যে লক্ষ্য উদ্দেশ্যে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। সেটি ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। কিন্তু সেটি অর্জন হয়েছে কিনা সেটি দেখতে হবে। গ্রামেগঞ্জে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্রতার নিচে বসবাস করছে। অনেক মানুষ কষ্ঠে আছে। আমার এখনো অর্থনৈতি মুক্তি এনে দিতে পারিনি।
লন্ডন মহানগর জাতীয়পার্টির সভাপতি সামছুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলীয় চীপ হুইপ সাংসদ সেলিম উদ্দিন। বিরোধী দল সরকারের পাশে না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। তিনি আগামী সংসদের এব্যাপারে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন লন্ডনে আয়োজিত তার সংবর্ধনা সভায়।
এ সময় রওশন এরশাদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মান এই তিন দেশ দু’শ বছর যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। সেসব ভুলে তারা এখন মিত্র হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে। তিনি বলেন, জাপান-চায়না এখন অনেকটা কাছা কাছি চলে এসেছে। ইন্ডিয়া আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কে উন্নয়ন হয়েছে। এসমস্থ দেশ যদি পারে তাহলে আমরা কেন পারবনা। আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন।
তারা যদি দুইশ-আড়াইশ বছর যুদ্ধ করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন গঠন করতে পারে, তাহলে আমরা পারবনা কেন। তবে কাউকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখার মত দেশে কোন নেতা এখন নেই। আগে যেমন ছিলেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সরোয়ারদী ছিলেন, মাওলানা ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন তাদের এক ডাকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারতেন। এখন সেই নেতা আমাদের দেশে নেই। কাজেই আমাদের সেই কথা মনে রাখতে হবে। এক সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। যদি না করি তাহলে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড হচ্ছে সেগুলি আবারো ব্যহত হবে।
আমরা দেশের কোন ক্ষেত্রেই ঐক্যমত হতে পারছিনা। এটা যেন বৈশিষ্ট্য হয়েগেছে। আমরা ওয়েষ্ট মিনিষ্টার ডেমোক্রেসি ফলো করি। সেখানে সরকারী দল বিরোধী দল একজায়গায় বসতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সব সময় বিরোধীদল বিরোধীতা করে গেছে, করে থাকে। গত পার্লামেন্টে দেখাগেছে বিরোধী দল কোন কিছুতেই সহযোগিতা করেনি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখনই নির্বাচন আসে, একটি দল ক্ষমতায় যায়, একটি দল বিরোধী দলে থাকে। তখন বিরোধী দল হরতাল, সংগ্রামে সব সময় সরকারকে উৎক্ষাত করতে সরকারকে ব্যবস্থ রাখে। কিন্তু বিরোধী দল যদি সরকারের পাশে না থাকে তবে উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্যান্য দেশে নির্বাচন হয় পলিটিক্যাল গর্ভন্সের মাধ্যমে। আর আমাদের দেশে নির্বাচন হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে। কারন আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করিনা।
দেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড হচ্ছে, অতীতেও হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে। তিনি বলেন, দেশে যতই গুরুত্বপুর্ণ ইস্যু হোক না কেন আমরা ঐক্যমত হতে পারিনা। আমাদের দেশে বড় সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। আমরাই যদি নিজেরা নিজেদের বিশ্বাস না করি তাহলে জনগন কিভাবে বিশ্বাস করবে।
বিগত নির্বাচন প্রসঙ্গে রওশন বলেন, দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। কারন আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। রোগীদের অবস্থা দেখে চোখের পানি কেউ রাখতে পারেনি। তখন দেশের শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিলনা। বিএনপি নির্বাচনে আসলে ভাল হত, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভুল করেছে। এমনো হতে পারত তারা ক্ষমতায় যেত পারত। ক্ষমতায় না গেলেও বিরোধী দলে থাকত।
আমরা যদি নির্বাচনে না যেতাম তাহলে ২০০৭ সালের মত আবারো আর্মি ক্ষমতায় আসত। আরো অনেক বেশি মানুষের প্রানহানী ঘটত। সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলাম। নির্বাচনের সময় তাদের (বিএনপিকে) সব সময় বলা হয়েছে আসুন জাতীয় সরকার গঠন করি। কিন্তু তারা আসেনি। আসলে কিন্তু আরো বেশি ভাল হত।
যাই হোক আমরা সংসদে আছি। জনগনের সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। জনগনের জন্য কাজ করছি। খাদ্যে ভেজাল ছিল, রাস্তাঘাটে সমস্যা ছিল। এগুলি তুলে ধরেছি। এরই প্রেক্ষাপটে সংসদে ভেজাল বিরোধী একটি আইন পাস হয়েছে। এখন দেশে ভেজাল কম হচ্ছে। তিনি বলেন, এর আগে কখনো কোন বিরোধী দল দেশের স্বার্থে এক সাথে বসেনি। গত বিশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মত বাজেট আমরা এক সাথে বসে পাস করেছি। যা এর আগে কখনো হয়নি।
তিনি বলেন, সরকার যেসকল উন্নয়ন কর্মকান্ড করছে তাতে আমরা সাপোর্ট করছি আবার যেখানে বিরোধীতা করার প্রয়োজন তা করে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এভাবে আমরা সংসদকে কার্যকর করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, অতীতে জাতীয় পার্টি ছাড়া কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারেনি।, হুসেন মোহাম্মদ এরশাদের উন্নয়নের ছুয়া প্রতিটি জায়গায় আছে। এখনো জনগনের মনে ভাসে তার উন্নয়ন।
তিনি বাংলাদেশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রথম কিন্তু আমাদের সময়েই ফ্লাটলাইটে খেলা হয়েছিল তখন অনেকে সমালোচনা করে বলেছিল বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, কিন্তু এখন এর সুফল পাচ্ছে। আমাদের সময় প্রথমবারের মত জাতিসংঘে সেনা পাঠিয়ে ছিলাম। সেময় তারা হরতাল ডেকেছিল। আর এখন এটা নিয়ে গর্ববোধ করছে। উপজেলা পদ্ধতি আমরাই দিয়েছিলাম। মধ্যখানে বন্ধ রেখে আবারো চালু হয়েছে।
কাজেই জাতীয় পার্টির প্রতিটি প্রদক্ষেপ ভালো ছিলো। তিনি জাতীয়পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে বলা যায়না জাতীয়পার্টি আবারো ক্ষমতায় আসতে পারে। তিনি বলেন, একবার সিলেটে আমাদের ৮টি সিট ছিল। আমি সেইগুলি ফেরত চাই।
তিনি বলেন, আমাদের পার্টি থেকে ৩জন প্রবাসী এমপি রয়েছে। তিনি প্রবাসীদের সহযোগিতা করার আহবান জানান। তিনি ব্রিটিশ ভিসা অফিস দিল্লী থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনতে এবং বিমানের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। বিদেশী হত্যাকান্ডের বিষয়ে রওশন এরশাদ বলেন, সম্প্রতি আমাদের দেশে দুইজন বিদেশী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। তাতে করে আমেরিকা রেড এলার্ট জারি করেছে। কিন্তু তাদের দেশেত ঘন্টায় ঘন্টায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সেখানেত রেড এলার্ট হয়না। এটা আমাদের দেশকে ছোট করার জন্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যেকোন হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই। আমরা হত্যাকান্ডকে সমর্থন করি না। যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দীয় ঘটনা। অবশ্যই এর শাস্তি দাবী করি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের কল্যানে দেশে প্রচুর রেমিটেন্স দেশে যাচ্ছে। দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। এখন আমাদের বলা যাবেনা আমরা এখন গরীব। বাংলাদেশ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবে।
আমাদের দেশের অনেক সমস্যা আছে আমরা যদি মিলে মিশে কাজ করি তাহলে কোন সমস্যাই আরা থাকবে না। আমি এখান থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধের ডাক দিচ্ছি। আমরা যদি এক সাথে মিলেমিশে কাজ না করি তাহলে কোন ভাল কাজ আমাদের দিয়ে হবে না।