শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৪

অনলাইন ব্যাংকিং তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত

অনলাইন ব্যাংকিং তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত

মোঃ ইকবাল: তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ বাংলাদেশে কিছুটা ধীরগতিতে হলেও সাম্প্রতিককালে এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি লক্ষণীয়। ব্যাংকিং জগতে এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এখাতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে, করেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম সহজ, দ্রুততর ও সময় সাশ্রয়ী। বিকশিত হয়েছে অনলাইন কিংবা ই-ব্যাংকিং ব্যবস্থা। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা বলতে কোন ব্যাংকের একটি নিশ্চিত নিরাপদ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার গ্রাহকদের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করাকে বুঝায়। বিশ্বে অনলাইন ব্যাংকিং মূলত ১৯৮০ সালের দিকে জনপ্রিয়তা পায় এবং নিউইয়র্কে এটি সিটি ব্যাংক এনএ সীমিত আকারে গ্রাহকদের এই সুবিধা প্রদান করে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশে অনেক ব্যাংক প্রযুক্তিটি গ্রহণ করে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং জগতে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে কম্পিউটার ব্যবস্থা মূলত ১৯৯০ সালের দিকে প্রসার লাভ করে। যদিও বিদেশী ব্যাংকগুলো ১৯৮০ সালের দিকেই কম্পিউটার সমৃদ্ধ ছিল। অনলাইন ব্যাংকিং বাংলাদেশে ২০০০ সালের দিকে শুরু হয় এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রসারের সাথে সাথে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সব বিদেশি ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক এবং এমনকি সরকারী ব্যাংকগুলোতেও অনেক শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া যায়। একজন সাধারণ গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা পেতে চাইলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সুবিধা সে পেতে পারে। যেমন যদি কেউ কোন একটি ব্যাংকের কোন একটি শাখার চেক অন্য শাখায় নগদায়ন করতে চায় তবে তাকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী না হলেও চলবে। আবার যদি কেউ কোন একটি ব্যাংকের কোন একটি শাখার কোন হিসাবে ওই একই ব্যাংকের অন্য শাখা থেকে টাকা জমা দিতে চায় তাহলেও তাকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হওয়ার প্রয়োজন নাই। তাছাড়া বর্তমানে চেক ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়াও অটোমেশন হয়েছে। চেকের নিকাশও অনলাইনে হচ্ছে। অনলাইন সুবিধার মাধ্যমে কোন গ্রাহক তার ব্যাংকের নিকটতম কোন শাখা থেকে তার হিসাবের তথ্য জানতে পারে। অনলাইন সুবিধা থাকাতে একজন গ্রাহক নগদ টাকা বহন না করে চেক প্রদানের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারে। এতে সে ব্যবসায়িকভাবে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। কারণ তার কোন পাওনাদার চেক পেয়ে তার সুবিধামতো কোন শাখা থেকে টাকা তুলতে পারে। এতে সময়ও কম লাগে আর ঝুঁকিও থাকে কম । আবার গ্রাহক তার নিকাশ (ঈষবধৎরহম) চেক ফেরত প্রদানের আগেই সুবিধামতো শাখায় টাকা জমা দিয়ে চেকটি পাশ করাতে পারে। আবার একজন গ্রাহক যদি ব্যাংকে না এসে তার ব্যাংক হিসাবের স্থিতি অথবা লেনদেন এবং বিবরণী দেখতে চায় তাহলে তাকে ইন্টারনেটের ব্যবহার জানতে হবে। ব্যাংক থেকে তাকে তার ইউজার আইডি ও গোপন নম্বর সরবরাহ করা হয়। অতঃপর ওই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে লগ অন করতে হবে। গ্রাহক প্রয়োজন অনুযায়ী তার হিসাবের স্থিতি বা লেনদেনের বিবরণী জানতে পারবে। কোন কোন ব্যাংক তার গ্রাহককে তার হিসাব থেকে অর্থ ওই একই ব্যাংকের অন্য হিসাবে তাৎক্ষণিক স্থানান্তর করার সুবিধাও দিয়েছে। আবার অন্য ব্যাংকের হিসাবেও সে ইঊঋঞঘ (ইধহমষধফবংয ঊষবপঃৎড়হরপ ঋঁহফ ঞৎধহংভবৎ ঘবঃড়িৎশ) এর মাধ্যমে টাকা জমা করতে পারবে। কিছু ব্যাংক যেমনÑ প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড কোর ব্যাংকিং অনলাইনের মাধ্যমে আরও কিছু সুবিধা যেমন গ্রাহকদের কার্ড বিল, টঃরষরঃু বিল পরিশোধেরও ব্যবস্থা করেছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অঞগ কার্ড। এর মাধ্যমে গ্রাহক ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকের অঞগ বুথ থেকে টাকা তুলতে পারে। আবার গ্রাহক বিক্রয় পয়েন্ট (চড়রহঃ ড়ভ ংধষব-চঙঝ) থেকে কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটাও করতে পারে। তাছাড়া ২৪ ঘণ্টা টাকা জমা প্রদানের জন্য রয়েছে কওঙঝক মেশিন। মুঠোফোনের ব্যবহার অনলাইন ব্যাংকিংয়ে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। মুঠোফোনের মাধ্যমে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাক্সিক্ষত লোকের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়ার পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে। আরও কিছু গ্রাহকসেবা অনলাইন সুবিধার আওতায় এসেছে, যেমন- অনলাইনে ঈযবয়ঁব ইড়ড়শ ইস্যুর অনুরোধ। আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। খ/ঈ বা ঋণপত্র ঝডওঋঞ (ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ড়িৎষফ রিফব রহঃবৎ নধহশ ভরহধহপরধষ ঃবষব-পড়সসঁহরপধঃরড়হ) এর মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে দ্রুত ও নিরাপদে সঞ্চালন হচ্ছে। বিদেশ থেকে প্রবাসীদের অর্থ দেশে আসছে অনলাইনে মুহূর্তের মধ্যে। যদিও অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার দ্রুত প্রসার ঘটেছে তবুও সে অনুপাতে এর ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ হিসাবে বলা যায় শিক্ষার অভাব। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যার বৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। এর কারণ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের অহেতুক ভীতি বা অনীহা। সংস্কৃতিগত কারণেও দেশের মানুষ সহজে প্রযুক্তি গ্রহণ করতে চায় না। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধাগুলো প্রচার করে মানুষকে সচেতন করতে পারলে এর ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করা যায়। শিক্ষা কারিকুলামে তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্য হিসাবে থাকলেও সেটা তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক পর্যায়ে প্রসারিত হয়নি। দেশের আর্থ-সামাজিক কারণে গ্রামাঞ্চলে এর ছোঁয়া ততটা পড়েনি। তা সত্ত্বেও আমরা আশা করি, বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার প্রসার ঘটবে অতি দ্রুত, প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে দ্রুততরভাবে। দ্রুততরভাবে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটলে সেটা মানুষের কল্যাণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। এতে দেশের ব্যাংকিং খাত যথেষ্ট সমৃদ্ধ হবে। আর ব্যাংকিং খাত সমৃদ্ধ হলে তা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকেই উন্নত করবে। এতে গ্রামঞ্চলে অর্থের প্রবাহ বাড়বে যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এতে মানুষের দিন যাপনের নিত্যপ্রয়োজনীয় আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষ সুবিধা পেলে এবং সচেতন হলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্যে সরকার ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024