নারীরা যত ক্ষমতায় আসবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তত ভালো হবে। অনেকে আজকাল এমন কথা বলে থাকে। এর পেছনে যুক্ত হচ্ছে—নারীর ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা বা ব্যক্তিগত ফায়দা লোটার প্রবণতা কম। কিন্তু নেতৃত্ব বা ক্ষমতায় আসা নারীদের সম্পর্কে এমন কথা কতটা সত্যি? সম্প্রতি রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে প্রচলিত এই ধারণার সত্যাসত্য নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম আলো অনলাইন। বাস্তব কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নারীর তুলনামূলকভাবে কম দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নারীর নিয়োগে জনসেবার মান উন্নত হয়েছে ও দুর্নীতি কমেছে। পেরুর রাজধানী লিমায় সাবরিনা করিম নামের একজন নারীর মাঠ পর্যায়ের এক গবেষণায় উঠে আসে বিষয়টি। তিনি দেখান, লিমায় ১৪ বছর আগের চেয়ে ২০১২ সালে ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ পরিবর্তন এসেছে ট্রাফিক কর্মকর্তা পদে দুই হাজার ৫০০ নারী সদস্যকে নিয়োগ করার পর। অপর এক জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, লিমার ৮৬ ভাগ মানুষ নারী ট্রাফিক পুলিশের কাজে সন্তুষ্ট। জর্জিয়ার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাবরিনা আরও বলেন, জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করছেন, ট্রাফিক পুলিশে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার ফলে দুর্নীতি কমেছে। এ ছাড়া ৬৭ ভাগ মনে করেছেন নারীরা কম দুর্নীতিপরায়ণ। সাবরিনার ওই গবেষণার পর মেক্সিকোতে দুর্নীতি রোধে পুলিশ সদস্যের পদে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে ভারতে। ওই দেশে ১৯৯৩ সাল থেকে গ্রাম পরিষদে নারীদের জন্য ৩০ ভাগ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই অগ্রাধিকারের সুফলও পেয়েছে দেশটি। চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের এই অগ্রাধিকার দেওয়ার পর সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সুবিধাসহ গ্রামগুলোতে স্কুল ও অন্যান্য সরকারি সেবা বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে কমেছে দুর্নীতি। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর নেতৃত্বাধীন গ্রামগুলো পুরুষ নেতৃত্বাধীন গ্রাম থেকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত। তা ২ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ২ ভাগ কম। গবেষকদের মতে, পুরুষেরা ক্ষমতায় থাকলে রাস্তা নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্পগুলোতে টাকা খাটায়। ওই কাজগুলোতে দুর্নীতি করা সহজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসা খাতে সে তুলনায় অর্থ বিনিয়োগ কম করে তারা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ মেয়াদে ইরানের নারীবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন মেহনাজ আফখামি। তিনি মনে করেন, নারীদের সরব হওয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি সেবার মান উন্নত হয়। তাঁর মতে, গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন, সরকারের মানোন্নয়ন ও নেতৃত্বে নারীদের উপস্থিতির মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। আফখামি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডভিত্তিক উইমেনস লার্নিং পার্টনারশিপের প্রেসিডেন্ট। ইরানে ক্ষমতায় থাকার সময় নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় তত্ত্বাবধান করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে তালাকের ক্ষেত্রে সমঅধিকার, বেকার ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ছুটি। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী শ্রী মুল্যানী ইন্দ্রাবতী সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত। তাঁর মতে, তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি সেবায় নারীদের নিয়োগের মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব। তিনি বলেন, নারীরা প্রথমেই শিশুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। তারা ভাবে তাদের কাছে যে সম্পদ আছে, তা দিয়ে পরিবারের খাবারের জোগান দেওয়া যায় কি না। পক্ষান্তরে পুরুষেরা জনগণের চাহিদার প্রতি কম সংবেদনশীল। তারা নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বেশি পছন্দ করে। উল্লিখিত এসব আলোচনা ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনকে আরও জোরালো করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নারীদের নিয়োগের ফলে দুর্নীতি ১০ ভাগ কমেছে।
Leave a Reply