বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭

সিরিয়ায় বিভীষিকাময় নাগরিক জীবন

সিরিয়ায় বিভীষিকাময় নাগরিক জীবন

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: গত সাড়ে চার বছরের গৃহ যুদ্ধে আড়াই লাখের অধিক সিরীয় নাগরিক জীবন দিয়েছেন। এই সময়ে ১ কোটি ১০ লাখ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর মধ্যে সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের ওপর রাশিয়াসহ কয়েকটি বিমান হামলা শুরু হয়েছে। জটিল রাজনৈতিক অবস্থার কারণে সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের প্রতিদিন জীবন বাস্তবতার দ্বন্দ্বে বিভীষিকাময়।

এসব মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক থিংক ট্যাংক ‘চ্যাথাম হাউজ’ এর সহযোগী ফেলো ডেভিড বাটারের। এই সংস্থাটি সিরিয়া ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে চলমান আলোচনায় সহায়তা করছে। বিবিসি ডেভিড বাটারের এই প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, চ্যানেল ফোরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লিন্ডসে হিলসাম সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কাসের জীবন যাপনের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ইউফ্রেতিস নদীর পাশে অবস্থিত সিরিয়ার রাক্কা শহর থেকে রাজধানীতে একটি বাসে করে এসেছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রব্য সংগ্রহ করছেন। একজন এসেছেন রাষ্ট্রের দেওয়া অবসর ভাতা নিতে।

সিরিয়ার পরিসংখান বিভাগের তথ্য মতে, ২০১১ সালে দেশটিতে ২ কোটি ১০ লাখ (২১ মিলিয়ন) লোক বাস করত। যুদ্ধ শুরু হলে ৪০ লাখের বেশি নাগরিক পাশের কয়েকটি দেশে জাতিসংঘ পরিচালিত শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ৫ লাখ ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী। অবশিষ্ট ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ (১৬ মিলিয়ন) দেশটিতে এখন আছেন। তবে এদের অর্ধেক নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে সিরিয়ার অন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছেন। জাতিসংঘের হিসাবমতে ১ কোটি ২২ লাখ (১২.২ মিলিয়ন) সিরিয়ান অধিবাসীর মানবিক সাহায্য প্রয়োজন।

এদের অধিকাংশই আবার শিশু। জাতিসংঘ এদের কিছু মানুষের মাঝে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। আর যারা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাস করেন তাদের বেসরকারি সংস্থার সহায়তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। এসব এলাকায় সহায়তা কার্যক্রম চালানোর জন্য সিরিয়ান রিকভারী ট্রাস্ট ফান্ডের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সিরিয়ার বিদ্রোহী সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। এত সংকট সত্ত্বেও সিরিয়ার সরকার কাজ অব্যাহত রেখে চলেছে।

সিরিয়ার বিদ্রোহী এবং আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকা অধিকাংশ পরিবারকে সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এখনও আনুমানিক ১৫ লাখ (১.৫ মিলিয়ন) মানুষ যারা সরকারি কর্মকর্তা এবং শিক্ষক—এরা সরকারের বেতনভুক্ত। তবে এরা সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে বসবাস করেন। উপরিউক্ত নানান কারণে রাজস্ব আয় কমছে সরকারের।

অনেকদিন ধরেই সিরিয়া থেকে তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ। আগে তেল রপ্তানি থেকে দেশটির যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো সেটা ছিল বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ। এখন তেল রপ্তানি কমে গিয়েছে। এজন্য কর এবং শুল্ক কমে গেছে। সিরিয়া তাদের অপরিশোধিত তেল ইরানের শোধনাগারে শোধন করে। সেই তেল বিক্রির টাকা পরে পায় দেশটি।

গৃহযুদ্ধ শুরুর হওয়ার পর সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা, বাজেট বা অর্থনীতির আয় আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

গৃহযুদ্ধের ফলে ক্রয় ক্ষমতার দিকে থেকে সিরিয়ার মুদ্রা সিরিয়ান পাউন্ডের মূল্যমানও কমে গেছে। এ খবর প্রকাশের দিন ৫০ পাউন্ডের একটি মুদ্রার বিনিময় হার ৩০০ ডলার কমে গেছে।

সিরিয়ার নাগরিকদের প্রতি মাসে গড় আয় প্রায় ১০০ ডলারের মতো। তবে একটি পরিবার চালাতে আনুমানিক ৪০০ ডলারের প্রয়োজন হয়। সিরিয়ার অনেক নাগরিক দেশের বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো টাকার ওপর নির্ভর করতে হয়। কুরিয়ার সার্ভিস ও দালালদের মাধ্যমে আসে ওই অর্থ।

তবে সিরিয়ার সব নাগরিককে এমন কষ্টে দিনানিপাত করতে হয় না। ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোকে এবং তাদের ব্যবসার পন্য আনা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিরাপত্তা দেওয়া হয়। খাদ্য ও ভোগ্য পন্য এক স্থান ও থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার জন্য তল্লাসি চৌকিগুলোতে টোল দিতে হয়। এই টোল থেকেও দেশটির সরকার অর্থ আয় করে।

অধিকাংশ সিরিয়ান নাগরিকের জীবন ভয়াবহ নির্মমতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই গৃহযুদ্ধ যদি চলতেই থাকে তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভবিষ্যতে আরও খারাব হতে থাকবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024