শীর্ষবিন্দু নিউজ: ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরের সময় সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সে সফর খানিকটা অনিশ্চিত করে দিয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন ও ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমানা চুক্তি। নির্ধারিত সময়ে জেআরসি বৈঠক না হওয়া ও ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমানা চুক্তি ভারতের সংসদে না ওঠায় এ অনিশ্চিয়তা ক্রমশই গাঢ় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। তবে এর মধ্যে ভারত যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে পারে অথবা সেপ্টেম্বরের আগে কোনো অধিবেশনে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে দেশটির সরকার বিরোধী দলকে রাজি করাতে পারে তবে শেখ হাসিনা নিশ্চিন্তে ভারত সফরে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
ভারতের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেই তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ফলে বাংলাদেশ তিস্তার চুক্তি নিয়ে নতুন করে আশান্বিত হতে শুরু করে। কিন্তু চলতি মাসের ১৮-১৯ তারিখে পূর্ব নির্ধারিত জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সে আশায় বালি পড়ে। এর সঙ্গে অনিশ্চিত হতে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর। অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও তিস্তা চুক্তিটি করার বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে একেবারে চূড়ান্ত আশ্বাস না পেলে শেখ হাসিনা এই কর্মসূচি নিতেন না।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের প্রথম বৈঠক থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে সে সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে ভারতকে চাপ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের পক্ষ প্রতিশ্রুতি দিলেও বিষয়টি তখন থেকেই ঝুলিয়ে রাখা হয়। এর আগে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একইভাবে সেই সেপ্টেম্বর মাসের শেষ মুর্হূতে সফর বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ‘ঐতিহাসিক’ ঢাকা সফরে দ্বিপক্ষীয় উত্সাহে পানি ঢেলে দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭৯ সালের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির বিষয়ে মত দেওয়া হয়। যার মূল বক্তব্য হলো, যত দিন চুক্তি স্বাক্ষর না হচ্ছে ততদিন যেন পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।
স্থল সীমান্ত চুক্তি বিষয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ সাংবাদিকদের বলেন, চুক্তিটি পাশ করতে সংসদে যে পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন তা ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নেই। এ কারণে বিরোধী দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ চলছে। আর এ সংসদ অধিবেশনেই একটি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আর তাই প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে তিস্তা বা স্থল সীমান্ত চুক্তি যেকোন একটি সফলতার দিকে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। জবাবে শেখ হাসিনা জানান, সেপ্টেম্বরে তিস্তা চুক্তি বা স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্ভাবনা থাকলেই কেবল ভারত যাবেন তিনি। কিন্তু জেআরসি বৈঠক না হওয়ায় তিস্তা চুক্তির বিষয়টি এখনো ধরা ছোঁয়ার অনেক দূরে। এখন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হবে কিনা সে বিষয়টি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর দেশটির সংসদের এবারের অধিবেশন শেষ হলেও সেখানে পাশতো দূরে থাক চুক্তিটি তোলাই হয়নি। যেহেতু এই অধিবেশনে স্থল সীমান্ত চুক্তিটি ওঠেনি, তার মানে বিরোধী দলকে মানাতে পারেনি ভারত সরকার। সুতরাং এ বিষয়টি এখনও আওতার বাইরেই রয়ে গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, এবারের সংসদে বিরোধী দলের শক্ত অবস্থানে তিস্তা চুক্তি বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা হয়েছে। ভারতকে পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়েও এ চুক্তিটি করতে না পারায় দারুণ এক মনো বেদনায় আছে বর্তমান সরকার। এ অবস্থায় তিস্তা চুক্তি না হলে প্রধানমন্ত্রীকে একেবারে খালি হাতেই ভারত সফর শেষ করতে হতে পারে। নির্বাচনের আগে আগে এমন ঝুঁকি তিনি নিবেন কিনা সেটিই এখন ভাবার বিষয়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকের পর সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, তিস্তা ও স্থল-সীমান্ত চুক্তি নিয়ে সংশয়ের কারণ নেই। তার এ বক্তব্যে তিস্তার বিষয়ে মমতার আপত্তি নিরসনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তাছাড়া ভারতের কুটনৈতিক মহল থেকে এবারের সংসদ অধিবেশনে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমানা চুক্তিটি পাশ হওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। সে বিষয়টিও আশার সঞ্চার করে।
Leave a Reply