সুমন আহমেদ: সদ্য প্রতিষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনের সময় যেন একবারেই দোরগোরায় চলে এসেছে। ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলে ভোটারদের নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এমএ মান্নান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন।
অন্যান্য জেলার মতো আষাঢ়ের বৃষ্টি ধারাবাহিকভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে গাজীপুরেও। গত তিন দিন ধরেই নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছিল, তবে শুক্রবার সকাল থেকে বিরতিহীন। জলাবদ্ধতা আর কাদাপানির শহরে এ আষাঢ়ের নির্বাচনে যত বৃষ্টি হচ্ছে ততই হাসছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম এ মান্নান। কারণ, বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে রিকশা উল্টে যে ভোটার পড়ে কাঁদাপানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে তিনি নিশ্চয়ই গাজীপুর পৌরসভার সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং এবারের সিটি মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ভোট দেবেন কি?
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে কাদা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক। অনেক স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এমন সড়কে গাড়ি চালাতে যেয়ে বা হাঁটতে গিয়ে কাদায় পড়া মানুষেরা দোষ দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের। ভোগড়া দক্ষিণ, বাসন, আদেপাশা, চান্দপাড়া, শরীফপুর ও হক মার্কেট এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে নানা বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বর্তমানে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। সড়কের অবস্থা এমন নাজুক হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে চলাচলও অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাতি কুড়ালেও গাজীপুরবাসীর প্রধান সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় শিল্প আঁস্তাকুড়ে গেছে। অধিকাংশ পোশাক ও ওষুধ শিল্প কারখানা থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হওয়া দরকার। কিন্তু বৃষ্টিতে নাকাল গাজীপুরের বাসিন্দারা। যানজটতো লেগেই আছে। মহাসড়কে জলাবদ্ধতার জন্য উভয় পাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটই দায়ী। রাস্তার ওপর পানি জমে সড়কের ‘পেভমেন্ট সার্ফেস’ ভেঙে গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেরাগ আলী মার্কেট, কাঁঠালদিয়া সড়ক, টঙ্গী, চৌরাস্তা, বোর্ডবাজার, পলাশোনা পোশাক শিল্প এলাকা নামে পরিচিত। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে এসব এলাকার সড়কগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। গাজীপুরের জলাবদ্ধতা, সড়কের বেহালদশা এবং যানজট নিয়ে বিরক্ত গাজীপুরবাসী। যার প্রভাব পড়বে ভোটারদের ব্যালটে। যার সুবিধা কিছুটা পাবে বিএনপি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৃষ্টি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লার। পৌরসভা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেহাল সড়ক যোগাযোগ। নগরীর গাছা, পুবাইল, ইছরেসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলোতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি-কাদা চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এসব সড়ক।
এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনে নতুন যোগ হওয়া অবহেলিত গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠছে আরো করুণ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর অংশের বেশির ভাগ এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। বৃষ্টির পানি জমে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বোর্ডবাজার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে হাঁটতে ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে পথচারীদের। বৃষ্টিতে ভোগড়া, মালেকের বাড়ি ও চান্দনা এলাকার বড় অংশ কাদা পানিতে এখন একাকার।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, মহাসড়কের যানজট দূর করবেন, এমন প্রতিশ্রুতি যিনি দেবেন আমরা তাকেই ভোট দেবো। এসব সমস্যাগুলোর যে প্রার্থী সমাধান করবেন তাকে আমরা ভোট দেবো। আওয়ামী লীগের দুই এমপির এলাকায় এমন অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মহাজোটের প্রার্থী আজমত উল্লার জন্য। উঠে এসেছে গত সাড়ে চার বছরে এলাকার উন্নয়নের হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগ নেতারা তো আসছেন ঢাকা থেকে, কিন্তু তারা কোনো জায়গায় গিয়ে শান্তিতে ভোট চাইতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরতে পারছে না। দীর্ঘদিনেও সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ না করায় এবং পরিকল্পিত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত বাসন-হক মার্কেট আঞ্চলিক সড়কেরও বেহাল অবস্থা। এ সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত গার্মেন্টস কারখানার কন্টেইনারবাহী লরি, ইট-মাটি বহনকারী ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচল করে। ভোগড়া বাইপাস থেকে বাসন সড়ক মোল্লা মার্কেট কার্টন ফ্যাক্টরি পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। এখানে একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নির্বাচনী মাঠের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, সদ্য সাবেক গাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বর্তমান সিটি মেয়র প্রার্থীর কপালে খড়গ নামার সম্ভাবনা বেশী। ্উপযুক্ত যুক্তির ভিত্তিতে এভাবেই বিপুল জনপ্রিয় থাকা সত্ত্বেও চট্রগামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী হেরে গিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র মনজুর আলমের কাছে। ঠিক আরো একটি জলন্ত উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সদ্য সাবেক সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে বলা হয়ে থাকে অপারজেয়। মানে যিনি পরাজয়ের মুখ দেখেননি কখনো। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্র পর্যায়ে তার সুনাম রয়েছে যে, তাকে ঠেক্কা দেওয়ার মতো কেউ এখনও জন্ম হয়নি সিলেটের মাটিতে। অথচ সেই কামরানকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন বিএনপির একজন সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল হক চৌধুরী।
বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা আরো বলেন, নিজ দল আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকাবস্তায় সদ্য সাবেক পৌর মেয়র আজমত উল্লাহ গত সাড়ে চার বছরে গাজীপুরে তেমন কোনো উন্নয়ন করেননি। সে হিসেবে তাকে কেন সবাই ভোট দেবে। নগরবাসীর প্রশ্ন- আওয়ামীলীগ প্রার্থী আজমত উল্লাহ কি তবে চট্রগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন বা সিলেটের অপারজেয় সদ্য সাবেক মেয়র কামরানের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন?
Leave a Reply