শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: আদালতের সাক্ষ্য হাতে লেখার দেড় শতাধিক বছরের প্রথা বিলোপ করে ডিজিটাল যুগের সূচনা সিলেটের আদালত পাড়া থেকে শুরু হয়েছে। সিলেটের মহানগর দায়রা জজ, জেলা দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২০টি আদালতে বুধবার থেকে নতুন পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেন বিচারকরা।
প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে কম্পিউটার ও মনিটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) অর্থায়নে জুডিসিয়াল স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় বিচার বিভাগে এই ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চালু হয়েছে। এই পদ্ধতি উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক।
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটোয়ারী বলেন, প্রাচীন বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ায় সময়, শ্রম ও অর্থের খরচের পরিমাণ কমিয়ে বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘব করতেই এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে যেকোনো মামলা নিষ্পত্তিতে বা মামলা পরিচালনায় স্বচ্ছতার কারণে বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সিলেটের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুল ইসলাম জানান, নতুন এ পদ্ধতিতে বিচারক, রাষ্ট্র, আসামি এবং বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের সামনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার থাকবে। আদালতের কম্পিউটার কম্পোজকারী সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই সব পক্ষ তাদের সামনে থাকা মনিটরে তা দেখতে পাবেন। নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কিনা তাও তারা পরীক্ষা করতে পারবেন। এছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত কপি দ্রুত সময়ের মধ্যে সব পক্ষকে সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এপিপি শামসুল বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য সনাতন পদ্ধতি অর্থাৎ হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করেন বিচারকরা। দিনের পর দিন এভাবে তারা সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকেন। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর চলে জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষীকে জেরা করেন। আর এই জেরাও বিচারকদেরকে হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করতে হয়। ফলে সাক্ষ্য ও জেরা লিপিবদ্ধ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। আগের পদ্ধতিতে অনেক সময় যথাযথভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ লিপিবদ্ধ হয়নি বলে বাদী বা আসামি পক্ষ অভিযোগ করতেন বলেও জানান তিনি।